চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফুটবল : রিয়াল মাদ্রিদ-লিভারপুল শিরোপার লড়াই আজ
শনিবার, ২৬ মে ২০১৮
485 ভিউ
কক্সবাংলা ডটকম(২৬ মে) :: গরিমায়-অর্জনে-উপাত্তে দুই দলের মধ্যে ব্যবধান আকাশ-পাতাল। ১২-এর বিপরীতে শিরোপার সংখ্যা পাঁচ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বশেষ চার আসরের মধ্যে তিনবারই শিরোপা জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে টানা দুবার শিরোপা জেতার পর এবার হ্যাটট্রিক মিশনে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরা।
সোজা কথায়, ইউরোপসেরার ট্রফিটা যেন নিজেদের সম্পত্তিই করে নিয়েছে রিয়াল। এমনি অবস্থায় আজ কিয়েভের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে সেই পুরনো রাজার গল্প নতুন করে লেখা হবে, নাকি নতুন রাজার রোমাঞ্চকর উপাখ্যান রচিত হবে, তারই রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় ফুটবলবিশ্ব। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে।
সবদিক থেকেই পরিসংখ্যানের পাল্লা রিয়ালের দিকে ভারী। তবে ইউরোসেরার মঞ্চে কিন্তু দ্বৈরথে এগিয়ে ‘অল রেড’রা। ইউরোপিয়ান আসরে দুই দলের পাঁচ লড়াইয়ে রিয়ালের দুই জয়ের বিপরীতে লিভারপুল জিতেছে তিনটি। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে অল রেডদের ছয় গোলের বিপরীতে রিয়ালের গোল সংখ্যা চার। আবার চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ইয়ুর্গেন ক্লোপের সাফল্যও ঈর্ষণীয়।
রিয়ালের বিপক্ষে ছয় দ্বৈরথে তিনবারই জিতেছেন ক্লোপ। হার মোটে একটি আর বাকি দুটি ড্র। কিয়েভের মাটিতেও এগিয়ে ‘অল রেড’রাই। কিয়েভে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলে রিয়ালের হার-জিত-ড্র একটি করে। আর কিয়েভে দুই ম্যাচ খেলে কোনো হার নেই লিভারপুলের। দুই ম্যাচে একটি জয় আর একটি ড্র ‘অল রেড’দের।
মাঠের লড়াইয়ে এসব পরিসংখ্যান কতটা কী কাজ দেয়, সেটা অবশ্যই প্রশ্নসাপেক্ষ। যেহেতু ম্যাচটি ফাইনাল তাই জিদান-রোনালদোরা যে বাড়তি প্রণোদনার রসদ পাবেন, তা বলাই বাহুল্য। সর্বশেষ পাঁচ ফাইনালেই হারের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ক্লোপকে।
এর মধ্যে একবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে (২০১৩ সালে, বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে) আরেকবার ইউরোপা লিগ ফাইনালে (২০১৬ সালে, সেভিয়ার বিপক্ষে)।
প্লেয়ার কিংবা কোচ জিদান আজ অবধি লিভারপুলের মুখোমুখি হননি। তবে শিরোপা জেতার দিক থেকে সবার উপরে তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের হাতছানি এই ফরাসি কিংবদন্তির সামনে। রোনালদো তো আরো এক কাঠি সরেস। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছেন চার-চারবার।
ফুটবলে পরিসংখ্যানের বাইরে আরেকটা বিষয় থাকে। সাম্প্রতিক ফর্ম। তবে এটুকু বলাই যায়, ফাইনালে ওঠার পথে রিয়ালের চেয়ে আলো ছড়িয়েছে লিভারপুল। চলতি আসরে ৪০ গোল করে তারা। রিয়ালের গোল ৩০।
ফিরমিনো-মানে-সালাহ ত্রিফলা চ্যাম্পিয়ন্স লিগজুড়েই আতঙ্ক ছড়িয়েছে প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগে। এই ত্রয়ী গোল করেন ২৯টি (১০টি করে সালাহ ও ফিরমিনো এবং মানে ৯টি)। সেখানে রিয়ালের গোল করার পুরো দায়িত্বই যেন রোনালদোর। ১৫ গোল করে এ আসরেও সবার উপরে এই গোলমেশিন।
রোনালদো না সালাহ— এ নিয়ে কিছুদিন ধরেই চলছে বিস্তর গবেষণা। কাকতালীয়ভাবে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ মৌসুমে দুজনেরই গোল সংখ্যা ৪৪। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল নির্ধারণ করলে এবার ব্যালন ডি’অর জিতবেন রোনালদো না সালাহ, এটা এ সময়ের ‘টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। তবে এ ধরনের তুলনার ঘোরবিরোধী রোনালদো।
তার কথায়, ‘সালাহ আর আমি পুরোই আলাদা। সে খেলে বাম দিকে আর আমি ডান দিকে। সালাহ খাটো, আমি কিছুটা লম্বা।’ ব্যক্তিগত তুলনাকে পাত্তা না দিয়ে শিরোপা জয়ের দিকেই বেশি মনোযোগ রোনালদোর। বলেছেন, ‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিততে চাই। পঞ্চমবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারাটা বিশেষ কিছু।’
মাঠের ভেতরে রোনালদো-সালাহদের লড়াইয়ের মতোই মাঠের বাইরে জিদান-ক্লোপের কৌশলের যুদ্ধ নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। জার্মান কোচ ক্লোপের কৌশল প্রেসিং ফুটবল। বল যেখানে, সেখানেই প্লেয়ারের উপস্থিতি। দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাকে গিয়ে প্রতিপক্ষ রক্ষণকে বেসামাল করে ফেলা। আর ভার্জিল ফন ডিকের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা রক্ষণভাগের জালে প্রতিপক্ষ স্ট্রাইকারদের আটকে ফেলা।
প্রশ্নটা হচ্ছে, ক্লোপের প্রেসিং ফুটবলকে নিষ্প্রভ করে দিতে জিদান কি গতির ঝড় তুলবেন, নাকি বল ধরে খেলার কৌশল নেবেন? গতিতে ঝড় তোলার অর্থই হচ্ছে, শুরু থেকেই গ্যারেথ বেল ও অ্যাসেনসিও হয়ে উঠতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ। সালাহকে আটকানোর কৌশল জিদান কীভাবে নেন, তাও দেখার বিষয়। পজিশনের হিসাবে সালাহকে আটকানোর দায়িত্ব মার্সেলোর।
কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক এ ফুলব্যাক বেশিরভাগ সময়ই সহায়তা করেন আক্রমণভাগে। ওভারল্যাপ করে উঠে আসেন। এতে অনেকটা ফাঁকা জায়গা পাবেন সালাহ। সেক্ষেত্রে সালাহকে আটকানোর চ্যালেঞ্জটা নিতে হতে পারে মিডফিল্ডার ক্যাসিমিরোকে। রিয়ালের আরেকটা সমস্যা সার্জিও রামোসের মেজাজ হারানো। গত ১৩ বছরে ২৬ বার লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন এ ডিফেন্ডার।
২০ কোটি ইউরোর ব্যবধান !
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল সামনে রেখে কয়েক দিন ধরেই রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুলের পরিসংখ্যান ঘাঁটাঘাঁটিতে ব্যস্ত থেকেছেন ফুটবল অনুরাগীরা। তুলনা হয়েছে দুই দলের নানা দিক নিয়ে। খেলোয়াড়দের মধ্যে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বনাম মোহাম্মদ সালাহ, কেইলর নাভাস বনাম লরিস কারিউস এবং সার্জিও রামোস বনাম ভার্জিল ফন ডিককে নিয়ে তুলনার যেন শেষ নেই। তবে একটি বিষয় নিয়ে মানুষ কৌতূহল দেখিয়েছে কমই— দুই দলের আর্থিক সক্ষমতার তফাৎ।
এ নিয়ে অবশ্য বসে নেই স্পোর্টস মার্কেটিং কনসালট্যান্সি সিএসএম। তারা বাণিজ্যিক ও আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে দুই দলের মধ্যকার ব্যবধান বের করে আনার প্রচেষ্টা দেখিয়েছে। তাদের সমীক্ষা বলছে, আর্থিক সক্ষমতায় লিভারপুলের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
লস ব্লাঙ্কোসদের ব্র্যান্ডের আনুমানিক মূল্য ১২৮ কোটি ৮০ লাখ ইউরো, অন্যদিকে লিভারপুলের ব্র্যান্ডের মূল্য ৯৮ কোটি ৬০ লাখ ইউরো। আয়ের খাত তুলনা করলেও স্প্যানিশ দলটি এগিয়ে থাকবে। এ মৌসুমে স্তাদিও বার্নাব্যুর টিকিট বিক্রি করে এসেছে ১৩ কোটি ৬৪ লাখ ইউরো, ২৩ কোটি ৬৮ লাখ ইউরো এসেছে সম্প্রচার খাত থেকে, ৩০ কোটি ১৪ লাখ ইউরো এসেছে বাণিজ্যিক চুক্তি থেকে। সব মিলিয়ে মাদ্রিদ জায়ান্টদের আয় ৬৭ কোটি ৪৬ লাখ ইউরো। বিপরীতে লিভারপুলের মোট আয় ৪২ কোটি ৪২ লাখ ইউরো।
উয়েফা র্যাংকিংয়েও দুই দলের মধ্যে ব্যবধান অনেক। রিয়াল মাদ্রিদ রয়েছে এক নম্বরে, আর ‘অল রেড’রা ২২ নম্বরে। কিয়েভের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আজকের ফাইনালের মূল চরিত্র খেলোয়াড়দের মূল্য বিবেচনায় নিলেও এগিয়ে থাকবে রিয়াল মাদ্রিদ। তাদের সব খেলোয়াড়ের মূল্য ৭৭ কোটি ১০ লাখ ইউরো, বিপরীতে লিভারপুল তারকাদের মোট মূল্য ৪৫ কোটি ৯০ লাখ ইউরো।
ব্যয়বহুল খেলোয়াড় বেশি থাকায় বেতনের পেছনে রিয়াল মাদ্রিদেরই ব্যয় বেশি। স্প্যানিশ দলটি বছরে খেলোয়াড়দের গড় বেতন দেয় ৬৯ লাখ ৮০ হাজার ইউরো। আর অ্যানফিল্ডের ক্লাবটির খেলোয়াড়দের গড় বেতন ৪০ লাখ ৮০ হাজার ইউরো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও জিনেদিন জিদানের দলের জনপ্রিয়তা বেশি। বিশ্বব্যাপী রিয়ালের রয়েছে ২০ কোটি অনুসারী, সেখানে প্রতিপক্ষ ক্লাবের ঝুলিতে মাত্র ৫ কোটি।
এসব পরিসংখ্যান মাঠের ফলাফলের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন— চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বশেষ পাঁচ আসরে বেশি আয়কারী ক্লাবই শিরোপা জিতেছে। বলাবাহুল্য, সর্বশেষ চার আসরে তিনবার শিরোপা জয় করেছে বিশ্বের অন্যতম ধনী ক্লাব রিয়াল। ২০১৩ সালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে হারিয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ; এক বছর পর অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ (২০১৬ সালেও মাদ্রিদ ডার্বিতে জয় পায় রিয়াল); ২০১৫ সালে বার্সেলোনা হারায় জুভেন্টাসকে, লস ব্লাঙ্কোসরা গত বছর হারায় জুভেন্টাসকেই।
আর্থিকভাবে এগিয়ে থাকা দলের হাতে শিরোপা ওঠার ঐতিহ্য যদি বহাল থাকে, তবে আজ শিরোপা জিততে চলেছে রিয়াল মাদ্রিদই! মার্কা