কক্সবাংলা ডটকম(১০ জুন) :: ছয় বারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারিয়ে মেয়েদের এশিয়া কাপের ফাইনাল জিতল বাংলাদেশ৷ রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শেষ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২ রান৷ ম্যাচের শেষ ওভারে হরমনপ্রীতের শেষ বলে ২ রান নিয়ে ম্যাচে জিতে নেয় বাংলাদেশে৷
ইনিংসের শেষ বলে ১ রান হলেও ভারতের দুর্বল ফিল্ডিং বাংলাদেশকে দু’রান নেওয়ার সুযোগ করে দেয়৷ শেষ বলে জঘন্য ফিল্ডিং দেখে হতাশা চেপে রাখতে পারেননি ভারতের অধিনায়িকা হরমনপ্রীত কউর৷ ১১৩ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে ৩ উইকেটে৷ লিগের ম্যাচেও ভারতীয় মহিলা দলকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ৷ এই প্রথমবার মেয়েদের এশিয়া কাপ জিতল বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট দল৷
বাংলাদেশের বোলিং দাপটের সামনে এদিন নির্ধারিত কুড়ি ওভারে মাত্র ১১২ রান তুলতে পারে ভারত৷ ‘উইমেন ইন ব্লু‘-র হয়ে অধিনায়িকা হরমনপ্রীত কউর ছাড়া কেউই রান পাননি৷ ডানহাতি হরমনপ্রীত ৫৬ রানে ডাগআউটে ফেরেন৷ ভারতের পাঁচ ব্যাটার দুই অঙ্কের রানে পৌঁছনোর আগে ডাগআউটে ফিরে যান৷
ভারতের দেওয়া ১১৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশের। জাহানার-শুকতারার ব্যাটে সহজেই এসেছে জয়। ওপেনিং জুটিতে আয়েশা ও শামিমা শুরুটা ভালোই করেছিলেন। তবে ভারতীয় স্পিনার পূনম যাদবের পর পর দুই বলে আয়েশা (১৬) ও শামিমা (১৭) সাজঘরে ফিরলে কিছুটা বিপদে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এই জুটিতে আসে ৩৫ রান। দুই ওপেনারকে হারিয়ে ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে হাফসেঞ্চুরি করা ফারজানা হক ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান নিগার সুলতানা দেখে শুনে খেলতে থাকেন। যদিও অফস্ট্যাম্পের বাইরের একটি বল খেলতে গিয়ে উইকেট কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ফারজানা (১১)।
চতুর্থ উইকেটে নিগার ও ওয়ানডে অধিনায়ক রুমানা মিলে জয়ের কাছেই নিয়ে যাচ্ছিলেন দলকে। আচমকা বাংলাদেশ শিবিরে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেন ক্যাচ আউট হয়ে। পূনম যাদবের ফুলটস বল মিড অনে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলে দারুণ একটি ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। ২৪ বলে ৪ চারে ২৭ রানের ইনিংস খেলেন নিগার।
বাকি দায়িত্বটুকু ঠিকভাবেই সামলাচ্ছিলেন ফাহিমা-রুমানা। আর শেষ দিকেই নড়বড়ে পরিস্থিতিতে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সাত রান করে আউট হন ফাহিমা। ৬ষ্ঠ উইকেটে সানজিদা ও রুমানা মিলে জয়ের কাছেই ছিলেন। কিন্তু সানজিদা বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়ার পর পর রুমানাও ফিরে যান রান আউটে। ফেরার আগে ২২ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার।
শেষ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল দুই রান। জাহানারা বলটি বাঁ পাশে ঠেলেই দেন ছুট। দৌঁড়ে দুই রান নিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের উপলক্ষ এনে দেয় মেয়েরা। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ৭ উইকেট হারিয়ে। ম্যাচসেরা হয়েছেন রুমানা আহমেদ। টুর্নামেন্ট সেরা ভারতের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কর।
ফাইনালের সেরা হয়েছেন রুমানা আহমেদ৷ টুর্নামেন্টের সেরা হয়েছেন ভারতের হরমনপ্রীত কউর৷
২০০৪ থেকে শুরু হয়েছে মেয়েদের এশিয়া কাপ। ভারত গত ৬ আসরের সবগুলোতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ এবারের আসরসহ তিনটি আসরে মাঠে নেমেছে। আগের দুই আসরে সাদামাটা পারফরম্যান্স করলেও তৃতীয় আসরে শিরোপা জেতার স্বাদ পেয়েছে সালমারা। শুধু তাই নয়, আরও একটি বৃত্ত ভেঙেছে বাংলাদেশ। এতদিন ভারতের বিপক্ষে খেলা মানেই ছিল বাংলাদেশে হার। ভাগ্যদেবীর ছোঁয়ায় এবার সেই অসাধ্য সাধন করেছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ১০টি টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হওয়া দুই দলের মধ্যে ভারত জিতেছে ৮টিতে। হারের বৃত্ত ভেঙে বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টেই জিতলো দুটিতে।
ছেলেরা পারেনি এখনো পর্যন্ত। প্রথমবারের মতো কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশের মেয়েরা
ক্রিকেট বাংলাদেশকে অনেক কিছুই দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী পরিচয়, এশিয়ান গেমসের সোনা। কিন্তু সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজারাও একটি অতৃপ্তি রেখে দিচ্ছিলেন বারবার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো শিরোপা জিতে উৎসবের সুযোগ করে দিতে পারেননি তাঁরা। কিন্তু ছেলেদের অতৃপ্তি ঘোচালেন মেয়েরা। রুমানা-আয়েশাদের হাত ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম শিরোপা পেল বাংলাদেশ। ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে সপ্তম এশিয়া কাপ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।
আইসিসি ও এসিসি ট্রফি নামে দুটো শিরোপা ছেলেরা এনে দিয়েছিলেন বিংশ শতাব্দীতে। কিন্তু সেগুলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অর্জন নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ কোনো শিরোপা জয়ের কাছাকাছি গিয়েছে দুবার। ২০১২ সালের এশিয়া কাপ আর ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফি, দুবারই শিরোপার গন্ধ পেতে পেতেও শেষ বলে এসে দীর্ঘশ্বাস সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের। ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে ফাইনালে গিয়েও হারতে হয়েছে ধোনি-কোহলিদের উত্তুঙ্গ ফর্মের কাছে।
এবারও ২০১২ সালের স্মৃতিটা ফিরে এসেছিল। শেষ ওভারে ৯ রান দরকার। পাকিস্তানের বিপক্ষে সে ফাইনালই কি ফিরে এল! প্রথম ৩ বলে ৬ রান তুলে রুমানা আহমেদ আশা জাগালেন। কিন্তু পর পর দুই বলে উইকেটে থাকা দুই ব্যাটার সানজিদা ও রুমানা আউট হয়ে গেলেন। শেষ বলে দরকার ২ রান। আবারও আরেকটি হতাশার গল্প লিখতে হবে? লিখতে হবে আরেকটি দীর্ঘশ্বাস ফেলার কথা। ছন্দময় কথার গাঁথুনিতে লুকাতে হবে অশ্রুতে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টার কথা?
কিন্তু জাহানারা সে কষ্ট দিতে রাজি হলেন না। ভারত অধিনায়ক হারমীত কাউরের বল মিড উইকেট দিয়ে পাঠিয়েই ভোঁ দৌড়। ছুট ছুট ছুট। বাঁধা ভাঙা এক দৌড়ে এশিয়ার ক্রিকেটের হিমালয় সমদূরত্বে থাকা ভারতকে স্তব্ধ করে দিয়ে দৌড়াতেই থাকলেন জাহানারা, অন্যপ্রান্তে সালমা। সে দৌড়টা যখন থামল, ততক্ষণে ইতিহাস হয়ে গেছে। মাঠে ঢুকে গেছেন রুমানা-সানজিদারা। বাংলাদেশের দুঃখের অবসান ঘটল আজ, একটি আন্তর্জাতিক ট্রফি উচানোর দৃশ্য দেখালেন মেয়েরা। টানা ছয়বারের চ্যাম্পিয়নদের হারিয়েই বাংলাদেশকে অমৃত স্বাদ এনে দিলেন রুমানা-সানজিদা-আয়েশারা।
Posted ৩:৫১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১০ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta