কক্সবাংলা ডটকম(১ আগস্ট) :: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। খুনিদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী ও রিসালদার মুসলেহ উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় পালিয়ে আছেন।
এদের ফেরত দেয়ার ব্যাপারে দেশ দুটির কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম এবং আবদুল মাজেদ কোথায় আছেন- এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে নেই। এই ছয় খুনিই পলাতক। পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। আরেক খুনি আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন।
জানা গেছে, রাশেদ চৌধুরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। মুসলেহ উদ্দিন কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন এ ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। অপরদিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত নূর চৌধুরী বাংলাদেশে তার জীবন বিপন্ন হতে পারে বলে কানাডা সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। কানাডায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই। এ সুযোগ নিয়ে ওই আবেদনের ওপর ভিত্তি করেই কানাডায় অবস্থান করছেন এ খুনি।
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স আগে থেকেই কাজ করছে। এই টাস্কফোর্স খুনিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও কোনো কিনারা করতে পারছে না।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি আছে কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সোমবার বলেন, কোনো আপডেট নেই।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, শিগগিরই টাস্কফোর্সের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, নূর চৌধুরী কানাডায় নাগরিকত্ব পাননি, শরণার্থীর মর্যাদাও পাননি। ২০০৩-০৪ সালের দিকে এসবের জন্য আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। কানাডায় ‘প্রি-রিস্ক রিমুভাল অ্যাসেসমেন্ট’ নামের একটা আইন আছে। কারও ঝুঁকি আছে এমন ব্যক্তিরা এ আইনে সুরক্ষার আবেদন করতে পারেন। মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর নূর চৌধুরী এ আইনের আওতায় আবেদন করে কানাডায় আছেন।
তিনি আরও বলেন, নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা কানাডায় জনমত গড়ে তুলছি। সেখানে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান চলছে। পাশাপাশি চলছে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। পার্লামেন্ট হিলের ক্যাফেটেরিয়ায় নৈশভোজ ও সেমিনারের আয়োজন করে সেখানকার এমপিদের এ ব্যাপারে বলা হচ্ছে।
বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘কানাডায় আলবার্টা প্রদেশের প্রিমিয়ারের (প্রাদেশিক প্রধান) সঙ্গে দেখা করে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাডানা সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রু–ডোর সঙ্গে আলোচনায় খুনি নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ট্রু–ডো তখন শেখ হাসিনাকে বলেন, এ বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। ট্রু–ডোর সেই বক্তব্যের সূত্র ধরেই আমরা কানাডার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে দু’জন রাশেদ চৌধুরী ও রিসালদার মুসলেহ উদ্দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য গত ১৬ বছর ধরে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ করছি। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে। ফলে তাদের ফিরিয়ে দিতে বড় কোনো বাধা দেখছি না। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের কোনো সিদ্ধান্ত এখনও পাওয়া যায়নি।’
সূত্রমতে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট দুই বছর আগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে আলাপকালে জানান, রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন।
রাশেদ চৌধুরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকায় তার অবস্থান সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিগত সরকারের আমলে তাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ জানানো হয়। তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরে এলে বিষয়টি তোলা হয়। হিলারি তখন দেশে ফিরে গিয়ে বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। তারপর আর কোনো সাড়া নেই।
এ অবস্থায় রাশেদ চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দৃশ্যত তাকে বাংলাদেশের কাছে ফিরিয়ে না দেয়ার ইঙ্গিতই দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনতে সব রকমের কৌশলই গ্রহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে আইনি ফার্ম নিযুক্ত করে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি চলবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে তার বিচার বন্ধ করা হয়। আত্মস্বীকৃত এই ১২ খুনিকে বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনে চাকরি দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর ১২ নভেম্বর ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ সুগম করে। তারপর বিচারের আয়োজন করা হয়। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
যেসব খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে তারা হলেন : সাবেক লে. কর্নেল ফারুক রহমান, মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), শাহরিয়ার রশিদ খান এবং একেএম মহিউদ্দিন আহম্মেদ (ল্যান্সার) ও সাবেক মেজর বজলুল হুদা। ঢাকা ও ব্যাংককের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরের পর বজলুল হুদাকে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকলেও সেনা সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বরখাস্তকৃত লে. কর্নেল একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্র ফিরিয়ে দেয়।
Posted ৩:৫৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta