কক্সবাংলা ডটকম(১৮ ডিসেম্বর) :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের কারণে টানা চারদিন ছুটির ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে দেশের ব্যাংকিং খাত। ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সব ব্যাংকে লেনদেন বন্ধ থাকবে। ছুটি শেষে ব্যাংক খুলবে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি।
এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন’ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশ দেয়া হয়।
৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের তারিখ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। ওইদিন দেশে সাধারণ ছুটি থাকবে। এর আগের দুদিন তথা ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর যথাক্রমে শুক্র ও শনিবার। সরকারি ছুটি হওয়ায় এ দুদিন দেশের কোনো ব্যাংকে লেনদেন হবে না।
ভোটের পরদিন তথা ৩১ ডিসেম্বর দেশের সব ব্যাংকে ‘ব্যাংক হলিডে’ পালিত হবে। এদিন সব ব্যাংকে লেনদেন বন্ধ থাকবে। এ হিসেবে ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা চারদিন দেশের কোনো ব্যাংকেই লেনদেন হবে না।
ব্যাংকাররা বলছেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ব্যাংকারদের জন্য সবচেয়ে ব্যস্ততম সময়। খেলাপি ঋণ আদায়, লাভ-লোকসানের খতিয়ান তৈরিসহ বার্ষিক হিসাবায়ন চূড়ান্ত করার জন্য এ সময়ে ব্যাংকারদের দিন-রাত কাজ করতে হয়। ৩০ ডিসেম্বর ভোট হলে তার তিন-চারদিন আগে থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা নির্বাচনী প্রশিক্ষণ, ভোটের উপকরণ গ্রহণসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যস্ত থাকবেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকবেন। তাছাড়া ভোট উপলক্ষে ওইদিন সাধারণ ছুটিও।
দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভুক্ত ৫৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে কর্মরত ৪৮ হাজার ৩৩১ জন। সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ১৬৭ জন রয়েছেন সোনালী ব্যাংকে।
এছাড়া জনতা ব্যাংকে ১১ হাজার ৮৭৬, অগ্রণী ব্যাংকে ১২ হাজার ৭৯৮, রূপালী ব্যাংকে ৫ হাজার ৪৯০ জন ব্যাংকার কর্মরত রয়েছেন। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়ে ১১ হাজার কর্মকর্তা রয়েছেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে। অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক মিলিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে কর্মরত রয়েছেন প্রায় দুই লাখ জনবল।
৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার) হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অফিসার, সিনিয়র অফিসার ও প্রিন্সিপাল অফিসারদের। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিতে পারবে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদেরও। ভোটার হিসেবে অন্য ব্যাংকাররা পাড়ি দেবেন নিজ নিজ এলাকায়।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর ৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা অর্থাৎ, প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগের জন্য রিটার্নিং অফিসার একটি প্যানেল প্রস্তুত করবেন।
রিটার্নিং অফিসার তার অধীন নির্বাচনী এলাকা বা জেলায় স্থাপিত সব সরকারি অথবা বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রধানদের কাছে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর লিখিত তালিকা সরবরাহের নির্দেশ দেবেন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার তালিকা থেকে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং অফিসার ও প্রতি ভোটকক্ষে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও দুজন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেবেন।
স্বাভাবিক সময়ে দেশের ব্যাংকগুলো ৩০ ডিসেম্বর বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত করে। এটিই বিশ্বব্যাপী অধিকাংশ ব্যাংকের হিসাবায়ন চূড়ান্ত করার দিন। বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত হওয়ার পর ওই বছরে কোনো লেনদেন করার বিধান নেই। লাভ-লোকসানের খতিয়ান চূড়ান্ত করার পর ৩১ ডিসেম্বর ‘ব্যাংক হলিডে’ হিসেবে পালন করেন দেশের ব্যাংকাররা।
কোনো ব্যাংক হিসাবায়ন চূড়ান্ত করতে না পারলে এদিন প্রধান কার্যালয়ে বসে সে হিসাব চূড়ান্ত করা হয়। দিনটিতে বন্ধ থাকে দেশের ব্যাংকগুলোর সব ধরনের লেনদেন। কেবল খোলা থাকে প্রধান কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু শাখা। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের কারণে এ বছর ২৭ ডিসেম্বর বার্ষিক হিসাবায়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর ২০১৮ সালে ব্যাংকগুলো কোনো লেনদেন করতে পারবে না।
২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। এ উপলক্ষে ওইদিন দেশে সরকারি ছুটি থাকবে। ফলে ডিসেম্বরের শেষ সাতদিনের মধ্যে ব্যাংক খোলা থাকবে মাত্র দুদিন। আর চলতি বছরের শেষ ১১ দিনের মধ্যে মাত্র চারদিন ব্যাংক খোলা থাকবে।
Posted ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta