কক্সবাংলা ডটকম(২১ অক্টোবর) :: বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সেবাপ্রাপ্তিতে সারা বিশ্বেই ব্যবহার হচ্ছে পরিচয়পত্র। তার পরও অনেক দেশেই নাগরিকদের বড় অংশ বৈধ পরিচয়পত্রের বাইরে রয়েছে। এ তালিকায় আছে বাংলাদেশও। নাগরিকদের বৈধ পরিচয়পত্র না থাকা শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। দেশের প্রায় সোয়া চার কোটি মানুষের জাতীয়ভাবে দেয়া পরিচিতিমূলক একক কোনো সনদ নেই, যা মোট নাগরিকের সাড়ে ২৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১১ সালের আদমশুমারি ও জন্মনিবন্ধনসংক্রান্ত ইউনিসেফের ২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্রহীন নাগরিকের এ হিসাব করেছে বিশ্বব্যাংক। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে জন্মনিবন্ধনের আওতায় এসেছে এখন পর্যন্ত ১৫ কোটি ৭৫ লাখের বেশি মানুষ। এর বাইরেও অনেকে আছে যাদের জন্মনিবন্ধন নেই।
আর নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য বলছে, দেশে মোট ভোটারের সংখ্যা ১০ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৬০১ জন। ভোটারদের দেয়া পরিচয়পত্রই এখন পর্যন্ত বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র। ১৮ বছরের বেশি বয়সী এসব ভোটারকে নতুন করে স্মার্টকার্ড দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আর্থিক সেবা, সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, রাজনৈতিক ও আইনি অধিকার এবং অভিবাসনের জন্য নাগরিকদের পরিচয় নিশ্চিতের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয় জাতীয়ভাবে দেয়া পরিচয়পত্র। বাংলাদেশেও ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে শুরু করে ঋণগ্রহণের মতো আর্থিক সেবায় জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন পড়ে। সেলফোন সংযোগসহ অন্যান্য সেবাপ্রাপ্তিতেও এটি থাকতে হয়।
তারপরও বিপুলসংখ্যক মানুষের পরিচয়পত্রের বাইরে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস (সিআরভিএস) ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এর আওতায় জন্মের পর পরই নিবন্ধনের মাধ্যমে একক একটি নম্বর দেয়া হয়।
সারা জীবন এ নম্বরটিই বিভিন্ন সেবা গ্রহণে ব্যবহার করতে পারেন তারা। দেশেও এটি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে পরিচয়পত্র প্রদানের বিষয়টির সঙ্গে একাধিক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা থাকায় এটির বাস্তবায়ন কিছুটা সময়সাপেক্ষ।
জাতীয় পরিচয়পত্র বিভিন্ন দেশে ন্যাশনাল আইডি কার্ড, সিটিজেনশিপ আইডি কার্ড, ন্যাশনাল ভোটিং কার্ড প্রভৃতি নামে পরিচিত।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সংখ্যায় জাতীয় পরিচয়পত্রের বাইরে সবচেয়ে বেশি রয়েছে ভারতের নাগরিক। দেশটির ২০ কোটি ৯৮ লাখ মানুষের জাতীয় কোনো পরিচয়পত্র নেই, যা মোট জনসংখ্যার ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে সম্প্রতি আধার নামে নাগরিকদের পরিচয়পত্র প্রদানের কাজ শুরু করেছে ভারত।
জাতীয় পরিচয়পত্রের বাইরে থাকা শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে এর পরের স্থানটি আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ার। ১৪ কোটি ৯২ লাখ নাইজেরীয় নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। এটি নাইজেরিয়ার মোট জনসংখ্যার ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
এছাড়া পাকিস্তানের ৮ কোটি ৩৭ লাখ ও ইথিওপিয়ার ৬ কোটি ৪৪ লাখ নাগরিকের এ ধরনের কোনো শনাক্তকরণ সনদ নেই। জাতীয় পরিচয়পত্রের বাইরে রয়েছে দেশ দুটির যথাক্রমে ৪২ দশমিক ৫ ও ৬১ দশমিক ৭ শতাংশ নাগরিক।
আর বাংলাদেশে শনাক্তকরণের এমন ব্যবস্থার আওতার বাইরে রয়েছে ৪ কোটি ২১ লাখ মানুষ, যা দেশের জনসংখ্যার ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ। বৈধ পরিচয়পত্র না থাকা অন্য শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পরেই যথাক্রমে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, তানজানিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব ও উগান্ডা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শনাক্তকরণের সুনিশ্চিত ব্যবস্থার অভাবে বিভিন্ন সেবা নাগরিকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। কার্যকর প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রেও অন্তরায় হিসেবে কাজ করতে পারে এটি। এছাড়া নির্ভুল পরিসংখ্যানের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।
দেশে ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নে প্রকল্প গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এ প্রকল্পের আওতায়ই দেশে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ২০১১ সালে আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এ প্রকল্পের অধীনে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান অবার্থুর টেকনোলজিসের (ওটি) সঙ্গে চুক্তি করে নির্বাচন কমিশন। ১০ কোটি ২০ লাখ ডলারের এ চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের জন্য স্মার্টকার্ড উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। এতে ব্যর্থ হলে চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে এ সময়েও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
গত বছরের ২ অক্টোবর স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এ হিসাবে এক বছরে বিতরণ করা হয়েছে ৩২ লাখ স্মার্টকার্ড। আরো ৭ কোটি ৩৩ লাখ ব্ল্যাংক কার্ডের মধ্যে ১ কোটি ৯২ লাখ স্মার্টকার্ড বিতরণের জন্য তৈরি রয়েছে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। স্মার্টকার্ড প্রদানের ক্ষেত্রে নাগরিকদের অন্যান্য তথ্যের পাশাপাশি ১০ আঙুলের ছাপ ও আইরিশ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
বর্তমানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্মার্টকার্ড সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করছে কমিশন। ভোটার তালিকা তৈরি ও স্মার্টকার্ড প্রদান কার্যক্রম পরিচালনায় নতুন করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ভোটার তালিকা প্রস্তুত এবং জাতীয় পরিচিতি সেবা প্রদানে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে। এতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ হাজার ৬১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
Posted ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta