কক্সবাংলা ডটকম(৯ সেপ্টেম্বর) :: চীন থেকে আমদানি করা সব পণ্যেই শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা চরমে পৌঁছালেও জাপান ও ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো সহজ হতে যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে কথা বলতে ভারতের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়া নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (নাফটা) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার মধ্যে আলোচনাতেও বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর রয়টার্স।
সাউথ ডাকোটার সিওয়াক্স ফলসে যাওয়ার আগে স্থানীয় সময় শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, টোকিও জানে যদি কোনো সমঝোতা না হয়, তাহলে ‘এটি খুবই বড় একটি সমস্যা’ হবে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তা শুরু করেছি। এমনকি জাপানের পক্ষ থেকে আমাদের আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা গত সপ্তাহে এসেছিল।’
সিওয়াক্স ফলসে দেয়া এক বক্তৃতায় ট্রাম্প আরো বলেন, ‘ভারতের পক্ষ থেকেও আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা। এই প্রথমবারের মতো।’
এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে ট্রাম্প আরো বলেন, ‘তারা আমাদের সাবেক প্রশাসনের সঙ্গে এ ধরনের আলোচনা করেনি। তারা বর্তমান অবস্থা নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট।’
বাণিজ্য ইস্যু নিয়ে এরই মধ্যে চীন, মেক্সিকো, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন ট্রাম্প। জাপানের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে তিনি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও এ অসমতা দূর করতে টোকিওকে নির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানানো হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একজন কলামিস্টকে জানান যে, তিনি জাপানের সঙ্গে বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতার বিষয়গুলো ভেবে দেখছেন। এ খবর প্রকাশের পর ইয়েনের বিপরীতে ডলার দুর্বল হয়ে পড়ে। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে— প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ন্যায্য বাণিজ্যে জোর দিচ্ছেন।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র লিন্ডসে ওয়ালটারস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, তিনি জাপানসহ বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে উদার, ন্যায্য এবং পারস্পরিক বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখতে ইচ্ছুক।
এ দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে। এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করার উপায় অনুসন্ধানে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান। এ উদ্যোগের মধ্যে ইউএস-জাপান ইকোনমিক ডায়ালগ অন্যতম।’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণকালে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মধ্যে পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। দুই পক্ষের এ আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু থাকবে বাণিজ্য। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্নে আলোচনায় বসতে জাপানকে চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, অন্যদিকে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তিতে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত হতে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে জাপান। গত বছর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১১ সদস্যের এ আঞ্চলিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন।
এছাড়া জাপানের বিরুদ্ধে গাড়ি বাজারে অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিদেশী কৃষিপণ্য আমদানিতে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ নিয়েও সমালোচনা করেছে দেশটির। ট্রাম্পের হুমকি অনুযায়ী গাড়ি ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলে জাপানের মতো শীর্ষ গাড়ি রফতানিকারক দেশগুলো বিপদে পড়বে।
এছাড়া কিছুদিনের মধ্যেই চীন থেকে আমদানি করা আরো ২০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরো জানিয়েছেন, তিনি চাইলে আরো ২৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার মূল্যমানের চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপ করতে পারেন।
সবমিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করা চীনের ৫১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের পণ্য ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির মধ্যে রয়েছে। চীনের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের আরো বেশি প্রবেশাধিকারের পাশাপাশি মার্কিন কোম্পানিগুলোর মেধাসম্পদের সুরক্ষা, শিল্প ভর্তুকি অপসারণ এবং অব্যাহত বাণিজ্য উদ্বৃত্ত কমিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন ট্রাম্প।
Posted ১১:২২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta