কক্সবাংলা ডটকম(১৬ নভেম্বর) :: জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনী সে দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। এ ঘটনাকে রবার্ট মুগাবের ৩৭ বছরের শাসনের অবসান হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
যদিও সেনাবাহিনী বলেছে, তারা কোনো অভ্যুত্থান ঘটায়নি এবং প্রেসিডেন্টের পাশে থাকা দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে। খবর এএফপি।
মঙ্গলবার গভীর রাতে সেনাবাহিনীর ট্যাংকবহর জিম্বাবুয়ের পার্লামেন্টের কাছে অবস্থান নেয়। এ সময় প্রেসিডেন্ট ভবনের কাছ থেকে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। গতকাল ভোরে পদস্থ জেনারেলরা রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ভবনে গিয়ে বিবৃতি পাঠের মাধ্যমে সরকারের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের ঘোষণা দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারের সদস্যরা ভালো আছেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ঘটনাটি কোনো সামরিক অভ্যুত্থান নয় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, যেসব অপরাধী প্রেসিডেন্টের পাশে থেকে অপরাধ করছেন, আমরা তাদের টার্গেট করছি। আমাদের কাজ শেষ হলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে।
১৯৮০ সাল থেকে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ও পরে ১৯৮৭ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাসীন ছিলেন রবার্ট মুগাবে। স্কুলশিক্ষক মুগাবে তরুণ বয়সে জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন-প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্টের (জানু-পিএফ) সঙ্গে জড়িয়ে যান এবং ঔপনিবেশিক শাসকদের রোষানলে পড়েন।
নাশকতামূলক বক্তব্য রাখার অভিযোগে ব্রিটিশ সরকার ১৯৬৪ সালে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। কারাগার থেকে বেরিয়ে তিনি তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলেন এবং সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেন। ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে তিনি স্বাধীন জিম্বাবুয়ে সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন থাকাকালে মুগাবের সঙ্গে অনেক সহকর্মীর দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এ রকম একটি সম্পর্কের দূরত্বের জের ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ রাষ্ট্রনায়ককে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হলো। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন এমনাংগাগোয়া ষাটের দশক থেকে মুগাবের বিশ্বস্ত সহযোগী। জানু-পিএফ দলে ও সরকারে তিনি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
৯৩ বছর বয়সী মুগাবের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে দলের নারী শাখার প্রধান ও ফার্স্ট লেডি গ্রেস মুগাবে প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের কাছে আসতে তোড়জোড় শুরু করেন।
এরই মধ্যে গ্রেসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। গ্রেসের সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের জেরে কয়েক দিন আগে এমারসনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নিতে হয়। এমারসনের ঘনিষ্ঠ ও জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল কনস্টান্টিনো চিওয়াঙ্গা বিষয়টি ভালোভাবে নেননি।
শেষ খবরে জানা গেছে, গ্রেস মুগাবে গতকাল সকালে জিম্বাবুয়ে ছেড়ে নামিবিয়া গেছেন। আর একই সময় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে জিম্বাবুয়ে ফিরেছেন এমারসন এমনাংগাগোয়া। পদচ্যুত হওয়ার পর থেকে এমারসন দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট ও মুগাবের দীর্ঘদিনের মিত্র জ্যাকব জুমা বলেছেন, রবার্ট মুগাবের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়েছে। মুগাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি সুস্থ আছেন এবং তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।
Posted ২:৩০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta