কক্সবাংলা ডটকম(১ নভেম্বর):: আগামী সাধারণ নির্বাচন হবে নানাদিক দিয়েই ঘটনাবহুল। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নানা হিসাব নিকাশ। সমীকরণে চলছে যোগবিয়োগ। এসব অদৃশ্য কুট-কৌশলী তৎপরতায় পাল্টে যেতে পারে নির্বাচনী ময়দানের দুই পরাশক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দৃশ্যমান চিত্র।
এদিকে জামায়াতবিহিন বিএনপিকে নির্বাচনে নামানোর জন্য অস্থির আওয়ামীলীগ , কিন্তু বিএনপি কোনভাবেই তার জোট ভাঙ্গবে না।
আওয়ামীলীগ বিএনপির চেয়েও রাজনীতির মাঠে জামায়াতকে বেশি ভয় পাচ্ছে বলেও অনেকের বিভিন্ন সুত্র জানায়। আর এ জন্যই যে কোনভাবেই হোক জামায়াত ছাড়া বিএনপিকে নির্বাচনে টানতে অস্থি যে কোন কৌশল খুজছে আওয়ামীলীগ। এরই ধারাবাহিকতায় জাায়াতের শীর্ষ নেতাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জামায়াতের শীর্ষমহল জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাযায়, বিভিন্ন সংস্থাপ্রাপ্ত বরাতের ভিত্তিতে অগ্রসর হচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিগত নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া ক্ষমতাসীন এ দলটি বিএনপির গতিবিধির ওপর দৃষ্টি রেখে অগ্রসর হচ্ছে। ইতিমধ্যে দলটি জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনেই প্রার্থী নির্বাচন করে রাখছে।
নেতৃত্বস্থানীয় সূত্র পূর্বাভাস হচ্ছে,নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণী কুট-কৌশলের ওপরই নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতার বিষয়টি। বিএনপি এককভাবে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগকেও এককভাবে নির্বাচনী লড়াইয়ে দেখা যেতে পারে। এরকম চিন্তাভাবনা থেকে হাইকমান্ড ৩০০টি সংসদীয় আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করছেন বলে জানা যায়। আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু প্রার্থিতা চূড়ান্তের বিষয়ে মুখ না খুললেও নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে সমক্য ধারণা দিয়েছেন।
এক সময়ে আওয়ামী লীগের কিং মেকার বলে খ্যাত এ নেতা বলেছেন, বর্তমান সংসদের মেয়াদ পূর্ণের তিন মাস আগে যে কোনদিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রখ্যাত পার্লামেন্টারিয়াণ বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও বলেছেন আগাম নির্বাচন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে। তা অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সরকারের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা। নির্বাচনকালীনও শেখ হাসিনার সরকারই থাকছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বিএনপি জামায়াতকে নিয়ে জোটগতভাবে লড়াইলে নামলে আওয়ামী লীগও বর্তমান শরীকদের নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে এক্ষুন্নি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক আসনে আওয়ামী লীগ শরীকদের জন্য দলীয় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবে।
অবশ্য দল থেকে ওই আসনগুলোতে প্রার্থীদের মাঠে নামার নির্দেশ দেয়া হবে। কিন্তু এসব প্রার্থীদের সময়মতো জোটের প্রশ্নে ছাড় দেয়ার মানসিকতায় তৈরি রাখার নির্দেশ থাকছে। আওয়ামী লীগের ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে গোটা নির্বাচনী লড়াইয়ের হিসাব-নিকাশের ওপর।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আশাপ্রকাশ করে বলেছেন, বিএনপি আবারও নির্বাচনী অংকে ভুল করবে না। তারা বিগত নির্বাচন বর্জন করে যে ভুল করেছে সেথেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে বলে মনে হচ্ছে তাদের কথাবার্তায়।
সংসদীয় মনোয়ন বোর্ডের সদস্য সচিব ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং তা কেবল বিএনপির অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন বিকল্প পথ নেই, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে হবে, এবং তারা নেবেও।
বিএনপি নির্বাচন বর্জন করবে এরকম আশঙ্কা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহলে নেই। তারপরেও ‘যদি’র প্রশ্নে একটা বিকল্প চিন্তা মাথায় রাখছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বর্জন করলে আওয়ামী লীগ বর্তমান শরীক দলগুলোকে নিজ নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরামর্শ দেবে। শরীক দল জাতীয় পার্টির ন্যায় অপর ১৪টি দলের সঙ্গে আসনভিত্তিক আঁতাত গড়ে তুলবে। সেক্ষেত্রে তাদের বর্তমান আসনগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হবে।
সূত্র মতে, বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন বর্জন করলে আসম আব্দুর রবের জাসদ, মোজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সিপিবি ও বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষকশ্রমিক জনতা লীগসহ অন্যান্য ছোট দলগুলোকেও নির্বাচনে নিয়ে আসার চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের দু’জন প্রভাবশালী সদস্য বলেছেন, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে ভুল করবে বলে মনে হয় না, কিন্তু বর্জন করে বসলেও নির্বাচন হবে। বিগত নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে অজুহাত তার পুনরাবৃত্তি হতে দেয়া হবে না।
জাতীয় পার্টিসহ শরীকরা স্ব স্ব প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা জানান এই দু’নেতা।
এছাড়াও আওয়ামী লীগ মনে করছে, যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচারকার্যের দিকটি গুরুত্ব দিয়ে এককভাবেই নির্বাচন করতে পারে বিএনপি। ‘৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ন্যায় নির্দিষ্টসংখ্যক আসনে জামায়াতের সঙ্গে পরোক্ষভাবে আঁতাত করতে পারে দলটি।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো সরকারকে বিএনপির নির্বাচনমুখী সকল তৎপরতার ওপর নজর রাখতে বলা হয়ে সরকারের হাইকমান্ড থেকে।
এদিকে সরকারের হাইকমান্ড গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পৃথক রিপোর্ট বিচার-বিশ্লষণপূর্বক ৩০০ আসনে একটি প্রার্থী তালিকা তৈরি করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
সূত্র মতে, নির্বাচনকে সামনে রেখে হাইকমান্ড প্রার্থি তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে শরীক দলগুলোর বর্তমান আসনগুলোর প্রতি দৃষ্টি রেখেছেন। স্বল্পসংখ্যক আসন প্রার্থী নির্বাচন বাদ রাখা হয়েছে শরীক দলগুলোর কয়েকজন সংসদ সদস্যের কথা মাথায় রেখে। নির্বাচনের প্রাক্কালে তারা মনোনয়নের বিনিময়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করবেন বলে জানা যায়। হাইকমান্ড কর্তৃক তৈরিকৃত মনোনয়ন তালিকাটি এই মুহূর্তে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না করলেও শিগগিরই মনোনীত প্রার্থীদের মৌখিকভাবে মাঠে নামার নির্দেশ দেয়া হবে হাইকমান্ড থেকে। প্রার্থী তালিকাটি যথাসময়ে দলের সংসদীয় বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবে বলেও জানা গেছে।
অনিবার্য কারণ ব্যতীত তালিকায় খুব একটা যোগ-বিয়োগের সম্ভাবনা নেই বলে দাবি করেছে এ সূত্রটি।
সূত্র মতে,”অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা” নেয়ার নীতিগ্রহণ করে আওয়ামী লীগ তার গতি প্রকৃতি নির্ধারণ করছে।
Posted ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০১ নভেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta