হুমায়ূন রশিদ,টেকনাফ(১৪ আগষ্ট) :: টেকনাফের নয়াপাড়া পাড়া শরণার্থী ক্যাম্প সংলগ্ন উভয় পাশের্^র আনসার ব্যারাক হামলা, অস্ত্র ও বুলেট লুট এবং আনসার কমান্ডার হত্যা মামলার আসামী, মিয়ানমারে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলাকারী গ্রুপের সদস্য নুর আলম তথাকথিত কমান্ডার জুবাইরের স্বশস্ত্র বাহিনীর অপতৎপরতায় হ্নীলার মানুষ আতংকিত হয়ে উঠেছে।
এছাড়াও স্থানীয় এবং রোহিঙ্গা অপরাধীরা মিলে ছিনতাই, জুয়ার আসর, ইভটিজিং, অবৈধ অস্ত্রধারীদের আনাগোনাসহ নানা অপরাধে সাধারণ মানুষজন চরম উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, উপজেলার নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে সাম্প্রতিক সময়ে আরসা সদস্য ও কুখ্যাত নুর আলম ডাকাত তথা কমান্ডার জুবাইরের স্বশস্ত্র বাহিনী ভাড়াটে খুনী, ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ এবং মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। তার বাহিনীর সদস্যদের রাজত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো ক্যাম্পের উভয় পাশের্^ স্থানীয় অর্ধ শিক্ষিত, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনে সম্পৃক্ততার দাপটে বখাটে ও ইয়াবার চালান বহনে নিয়োজিত এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর যুবক কিশোরো মিলে এইসব অপরাধে সম্পৃক্ত হয়ে উঠেছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে।
এই নুরুল আলম সিন্ডিকেটের ৩৫জন স্বশস্ত্র গ্রুপের অপতৎপরতায় রোহিঙ্গাসহ পাশর্^বর্তী গ্রামের সাধারণ মানুষ জিম্মি অবস্থায় রয়েছে অভিযোগ উঠেছে। এই ডাকাত নুর আলম বিপদের সময় আশ্রয় নেওয়ার জন্য পাশর্^বর্তী এলাকার চিহ্নিত অপরাধীদের সাথে ব্যবসায়িক, ধর্মীয় ওয়াস্তে ভাই-বোনের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ক্যাম্প প্রশাসন কঠোর হলেই এই সম্পর্কিত স্বজনের নিকট আশ্রয় নেয়। গত ২/৩ মাস আগ হতে রঙ্গিখালী, আলীখালী, লেদা, মোচনী, নয়াপাড়ায় অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, ভাড়াটে হিসেবে গুম ও খুন, মাদকের বড় বড় চালান ছিনতাই, মাদক চালানের লেন-দেনের বকেয়া টাকা উদ্ধার কাজে এই চক্রের সদস্যরা সরাসরি জড়িত বলে বিভিন্ন সুত্র থেকে অভিযোগ উঠছে।
উল্লেখ্য, র্যাব সদস্যরা তাকে অস্ত্রসহ নাইক্ষ্যংছড়ি পাহাড়ী এলাকা থেকে আটক করে আদালত হয়ে কারাগারে প্রেরণ করেন। পরে জামিনে এসে নতুন কৌশলে বিভিন্ন সংস্থার কতিপয় সদস্যদের সাথে গোপন আতাঁত রেখে আবারো নানা অপরাধে সম্পৃক্ত হয়ে বিশেষ বাহিনীর মাধ্যমে জন-জীবন বিষিয়ে তুলেছে। ডাকাত নুর আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে কথা বললে দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে ধরে নিয়ে মারধর ও খুন করে ফেলে। কেউ বাঁচানোর জন্য এগিয়ে না আসায় সাধারণ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনসাধারণ চোখের পানিতে বুক ভাসাচ্ছে।
চলতি বছরের গত জুন মাসের শেষের দিকে রহিম উল্লাহ-রশিদুল্লাহ নিখোঁজ হয়। ২২দিন নিখোঁজ থাকার পর গত মাসের ৯ তারিখ নাফনদী হতে রশিদুল্লাহ রক্তাক্ত ও ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় নুর আলমের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে অভিযোগ রয়েছে। অথচ প্রাণের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেনা। একই মাসের ১৬ জুলাই একটি হিরের আংটির জন্য এইচ ব্লকের তজল আহমদের পুত্র কেফায়ত উল্লাহ (৩০) কে গুম করে ফেলে। এখনো সন্ধান মেলেনি। নুর আলম সিন্ডিকেটের স্বশস্ত্র সদস্যরা গত মাসের শেষের দিকে মিয়ানমার সীমান্তে গিয়ে ৬ লাখ ইয়াবার চালান ছিনতাই করে নিয়ে আসে।
পরে ক্যাম্পের “ছৈয়দ আলম মাঝি ” নামের হেড মাঝির মাধ্যমে বিক্রি করার গুঞ্জন উঠে। গত বৃহস্পতিবার মোচনীর মোজাহেরের পুত্র দেলোয়ারকে অপহরণ করে মারধর এবং মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেয় বলে এলাকায় খবর রটে যায়। এই নুর আলম গ্রুপের স্বশস্ত্র সদস্যরা ক্যাম্প ও পাহাড় কেন্দ্রিক অপরাধ করে ক্ষান্ত না, গ্রামে-গঞ্জে ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে নানা খুন-খারাবীর মতো অপকর্ম করে বেড়ায়। এই গ্রুপের কোন সদস্য আহত হলে পাহাড়ে চিকিৎসা করার জন্য চিকিৎসক দলও রয়েছে।
এই ব্যাপারে অভিযুক্ত নুরুল আলমের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে, সে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার কোন স্বশস্ত্র গ্রুপ নেই। স্থানীয় কোন অপরাধীদের সাথে আমার সম্পর্কও নেই। কোন নির্যাতত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের উপর অন্যায় করলে আমি প্রতিবাদ করি এটাই আমার অপরাধ।
এই বিষয়ে নয়াপাড়া ক্যাম্প পুলিশের আইসি মোঃ কবির হোসেন জানান, কথিত এই স্বশস্ত্র গ্রুপের অবস্থান ক্যাম্প এলাকার বাহিরে। বিগত সময়ে আনসার ব্যারাকে স্বশস্ত্র হামলা, অস্ত্র-বুলেট লুট এবং আনসার কমান্ডারকে খুনের পর হতে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সর্তক অবস্থানে থাকি। পুলিশ কঠোর অবস্থানে থেকে ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও শৃংখলার স্বার্থে অনেক অপরাধীকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করি।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ রনজিত কুমার বড়–য়া জানান, নুর আলম ডাকাত একজন চিহ্নিত দূধর্ষ অপরাধী। পুলিশ তাকে আটকের জন্য খুঁজছে। পাহাড়ে অবস্থান করে আতœগোপনে থাকায় আটক করতে বিলম্ব হচ্ছে।
এদিকে নিবন্ধিত নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের মরহুম আবু বক্কর মেম্বারের রাস্তার মাথা, পশ্চিম লেদা, শালবন, নয়াপাড়া ও উত্তর মোচনী সংলগ্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত দৈনিক মাদকের চালান, টাকা-পয়সা, ব্যাগ, মূল্যবান জিনিস পত্র ছিনতাই, মাদক সেবন করে মাতলামি করে কলহ-বিবাদের সৃষ্টি করে। আর একটি চক্র বিভিন্ন পয়েন্টে জুয়ার আসর বসিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা পকেটস্থ করছে চিহ্নিত দালালেরা।
ক্যাম্পে নিয়োজিত আইন-শৃংখলা বাহিনী সদস্যরা এসব প্রতিরোধ করতে গেলে নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাবশালী চক্রের সাথে সুসম্পর্ক আর রহস্যজনক কারণে বহাল তবিয়তে রয়ে যায়। কর্মরত এনজিও নারী কর্মীরা কর্মস্থলে আসা-যাওয়া এবং রোহিঙ্গা নারীরা চলাচলের সময় এসব বখাটে চক্রের হাতে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। অস্ত্রধারীদের অপতৎপরতায় রোহিঙ্গাসহ সাধারণ মানুষ প্রাণ ভয়ে মুখ খুলতে পারছেনা।
এই ব্যাপারে স্থানীয় মর্জিনা আক্তার মেম্বার বলেন, এলাকায় জুয়ার আসর, চুরি-ছিনতাই ও ইভটিজিংয়ে বাঁধা দিতে গিয়েই অনেক সময় আমাকেও নাজেহাল হতে হয়েছে। এসব অপরাধীরা মসজিদের সৌর বিদ্যুতের প্লেট পর্যন্ত চুরি করে নিয়ে গেছে। তাদের সমন্বিতভাবে দমন করতে হবে।
স্থানীয় সুশীল সমাজ চিহ্নিত অপরাধীদের সাথে আপোষ-সমঝোতা না করেই যেকোন মূল্যে আইনের আওতায় আনতে একযোগে কাজ করার জন্য টেকনাফে নিয়োজিত আইন-শৃংখলা বাহিনীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন।
Posted ২:২৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৫ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta