কক্সবাংলা রিপোর্ট(১২ জুলাই) :: কক্সবাজারের মাদক অধ্যূষিত উপজেলা টেকনাফের ইয়াবা কারবারীদের অনেকেরই পরিচয় দেয়ার মতো কোনো পেশা নেই। তারপরও তারা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার মালিক, চড়েন দামি গাড়িতে, থাকেন বিলাসবহুল বাড়িতে। যাদের গ্রামে ছিল ঝুপড়ি ঘর, তাদের কেউ কেউ শহরে করেছেন চোখ ধাঁধানো বাড়ি।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের (চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা) দেড় শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ীর সম্পদের অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থাটি গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীর অবৈধ সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধান করছে।
অনুসন্ধান শেষে গত তিন মাসে চারজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে থানায় মামলা করেছে দুদক। আরও বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে। বাকি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চলছে অনুসন্ধান।
দুদকের সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার অন্তত একশ’ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। এর মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষ হয়ে মামলার অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। বাকিদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
অন্যদিকে দুদকের চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয়ের উপ-পরিচালক লুৎফর কবির চন্দন বলেন, প্রায় অর্ধশত মাদক ব্যবসায়ীর সম্পদের অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যে কয়েকজনের অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
দুদকের জালে দেড়শ’ ইয়াবা কারবারি :
দেড়শ’ ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকা ধরে তাদের সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুদক।এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা ও কক্সবাজার মিলে রয়েছে একশ’জন।
তালিকার উল্লেখযোগ্যরা হল- টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ ও তার স্ত্রী আমেনা খাতুন, একই উপজেলার আমির হোসেনের ছেলে আবদুর রহিম, টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর আবদুল্লাহ মনির, আনোয়ারা উপজেলার জালাল উদ্দিন শাহ, টেকনাফের মোহাম্মদ আমিন ও তার স্ত্রী নাঈমা খানম।
সম্প্রতি বন্দুকযুদ্ধে নিহত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুল করিমও আছে এ তালিকায়।
তালিকায় আরও আছে সাইফুল করিমের স্ত্রী হামিদা বেগম, সাইফুল করিমের ভাই জিয়াউল করিম, টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ভাগ্নে সাহেদুর রহমান নিপু, চৌধুরী পাড়ার এজাহার আলীর ছেলে মো. সফিক, মৌলভীপাড়া এলাকার ফজল আহমেদের ছেলে একরাম হোসেন ও তার ভাই আবদুর রহমান।
চারজনের বিরুদ্ধে মামলা :
দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, দেড়শ’ ইয়াবা ব্যবসায়ীর মধ্যে এ পর্যন্ত চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এর মধ্যে টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা ইয়াবা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আমিনের বিরুদ্ধে গত জুনে নগরীর ডবলমুরিং থানায় মামলা করে দুদক। তার বিরুদ্ধে ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৩২ লাখ ২৯ হাজার ৩৫৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকের সমন্বিত উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
একইভাবে গত এপ্রিলে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ ও তার স্ত্রী আমেনা খাতুন ও একই উপজেলার আমির হোসেনের ছেলে আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় পৃথক তিনটি মামলা করে দুদক। দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে এসব মামলা করেন।
এর মধ্যে জাফর আহমেদের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৯০ লাখ ৬৯ হাজার টাকার এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকার আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীর সম্পদ জব্দ চায় দুদক :
চট্টগ্রাম অঞ্চলের শীর্ষ দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীর সম্পদ জব্দে আদালতে আবেদনের প্রস্তুতি নিয়েছে দুদক। এরা হল- টেকনাফ উপজেলার মোহাম্মদ আমিন ও বন্দুকযুদ্ধে নিহত সাইফুল করিম। আগামী সপ্তাহে তাদের সম্পদ জব্দে আদালতে আবেদন করা হতে পারে বলে নিশ্চিত করেছেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন।
এর মধ্যে কক্সবাজার টেকনাফ পৌরসভার শীলবুনিয়া পাড়ার বাসিন্দা সাইফুল করিম (বন্দুকযুদ্ধে নিহত) ১৯৯৭ সালে নাফ নদী হয়ে মিয়ানমার থেকে এ দেশে প্রথম ইয়াবার চালান আনে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এছাড়া দেশের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে সাইফুল করিমের নাম।
দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি ইয়াবা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আমিনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। তার স্ত্রী নাঈমা খানমের বিরুদ্ধেও আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য মিলেছে। তার বিরুদ্ধেও মামলা হবে।
এছাড়া বাকি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে যাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য মিলবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
Posted ৩:৩০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta