শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপবাসীর ভোগান্তি শেষ হবে কবে?

বুধবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৭
240 ভিউ
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপবাসীর ভোগান্তি শেষ হবে কবে?

বিশেষ প্রতিবেদক(১৪ নভেম্বর) :: সম্রাট শাহ সুজার ‘শাহ’ এবং স্ত্রী পরীবানুর ‘পরী’ মিলিয়ে নামকরণ হয়েছিল শাহপরীর দ্বীপ। কারো মতে ‘শাহ ফরিদ’ আউলিয়ার নামে এ দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছিল।

অপরদিকে অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি সা’বারিদ খাঁ’র ‘হানিফা ও কয়রাপরী’ কাব্যগ্রন্থের অন্যতম চরিত্র ‘শাহপরী’, রোখাম রাজ্যের রানী কয়রা পরির মেয়ে শাহপরীর নামেই এই দ্বীপের নামকরণ হয়েছে বলেও অনেকের ধারণা। স্বাধীনতার আগে দ্বীপের আয়তন ছিল দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১০ কিলোমিটার। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের অব্যাহত ভাঙনে ছোট হয়ে এসেছে দ্বীপের আয়তনও।

একসময় চতুর্দিকে সাগর-নদীবেষ্টিত শাহপরীর দ্বীপ পরবর্তীতে উত্তর দিকে চর জেগে ভরাট হয়ে যায়। তখন থেকে দ্বীপের সাথে উপজেলা শহর টেকনাফের সড়কে জোড়া লাগে। সড়ক পথেই নিয়মিত চলাচল করে আসছিল কক্সবাজারের টেকনাফের সর্বদক্ষিণের স্থল জনপদ শাহপরীর দ্বীপের মানুষ।

২০১২ সালের ২ আগস্ট শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমের বেড়িবাঁধের ভাঙন ধরলে সেই সময় ত্বরিত কোনো উদ্যোগ না নেওয়াতে ভাঙন আরো বড় আকার ধারণ করে। একে একে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, মসজিদসহ বহু স্থাপনা সাগরে তলিয়ে যায়। এ ভাঙনের কারণে অরক্ষিত বেড়িবাঁধ দিয়ে নিয়মিত সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকে একসময় টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের বিভিন্ন অংশে ভাঙন ধরে।

এ সড়কের শাহপরীর দ্বীপ উত্তর পাড়া থেকে সাবরাং হারিয়াখালী পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার রাস্তা বিলীন হয়ে সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সড়কের দীর্ঘ অংশজুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। তখন থেকে সড়কের ৪ কিলোমিটার পথ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়।

টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ সড়কের এ দীর্ঘ ৪ কিলোমিটার পথ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেলে দ্বীপ জনপদের ৪০ হাজার মানুষের ভোগান্তিও বেড়ে যায়। জোয়ার-ভাটার বৃত্তে বন্দি হয়ে বিকল্প খাল দিয়ে গত ৫ বছর ধরে ৪ কিলোমিটার পথ নৌকায় পাড়ি দিয়ে হারিয়াখালী পৌঁছতে হয় দ্বীপের বাসিন্দাদের।

নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে এ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে ২০১৪ সালে দুর্ঘটনায় সায়মা নামে ৯ বছর বয়সী এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছিল। ওই সময় বহু হতাহত ছাড়াও নৌকায় চলাচলে একাধিকবার দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিল এলাকাবাসী।

একদিকে জোয়ার ভাটার বৃত্তে বন্দি, অন্যদিকে নৌকায় ঝুঁকির যাত্রা। দ্বীপের বাসিন্দারের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় নৌকায় যাতায়তে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নারী, বৃদ্ধ, রোগী ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে।

কখনো কখনো ভাটার সময় খালে পানি শুকিয়ে গেলে ৪ কিলোমিটার পথই পাড়ি দিতে হয় পায়ে হেঁটে। ওই সময়ে কোনো রোগী বা গর্ভবতী মায়েদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে জোয়ারের অপেক্ষায় রোগীকে দীর্ঘসময় যন্ত্রণা ভোগ করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় থাকে না।

সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় দ্বীপের ব্যবসায়ী, জেলে সহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষের ভোগান্তিও বেড়ে যায়। দ্বীপের ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনে পদে পদে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া বাহন পরিবর্তনে পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে যায়। এতে দ্বীপের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ প্রায় পণ্যের মূল্য মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যায়।

শাহপরীর দ্বীপ তিন রাস্তার মাথা বাজারের ব্যবসায়ী নেওয়াজ উদ্দীন বলেন, ‘সড়ক বিচ্ছিন্ন থাকায় আমাদের মালামাল পরিবহনে কষ্ট এবং অতিরিক্ত ব্যয় দুটিই বেড়ে যায়। অনেক সময় মাল বোঝাই নৌকাডুবির সম্ভাবনা থাকায় এক সাথে বেশি মালামাল পরিবহনও সম্ভব হয় না। এতে বাজারে পণ্যের সংকটও নিয়মিত লেগে থাকে। এর পরও আমরা নানা ভোগান্তি সয়ে ভোক্তাদের কথা ভেবে মালামাল নিয়ে আসি এবং দামও নাগালে রাখার চেষ্টা করে থাকি। ’

এদিকে গত বছর ২ জুন ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ পরবর্তী শাহপরীর দ্বীপ পরিদর্শনে এসেছিলেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আসার পথে তিনি সড়কের বেহাল দশা দেখেছিলেন।

ওই দিন দুপুরে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী দ্বীপবাসীর উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘সড়কের জোড়া লাগাতে হলে, আগে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ১০৬ কোটি টাকার বরাদ্দ একনেকে অনুমোদন দিয়েছেন, শিগগির কাজ শুরু হবে। বেড়িবাঁধ হয়ে গেলে রাস্তা আমি করে দেব। ’

এদিকে একনেকে অনুমোদিত শাহপরীর দ্বীপ বাঁধ নির্মাণে ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী। গত ১৯ অক্টোবর নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয় এবং ইতোমধ্যে বাঁধ নির্মাণে প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে আসা হচ্ছে। খুব অল্প সময়ে দ্বীপের অরক্ষিত বেড়িবাঁধে মাটি ফেলে প্রথম পর্যায়ে লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তারা।

দ্বীপের প্রাক্তন শিক্ষক ও শাহপরীর দ্বীপ রক্ষা কমিটির সভাপতি মাস্টার জাহেদ হোসেন বলেন, ‘বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যে লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশও বন্ধ হতে পারে। তবে, শাহপরীর দ্বীপ- টেকনাফ বিচ্ছিন্ন সড়কের কাজ শুরু হচ্ছে কবে, তা আমরা এখনো জানি না। সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে দ্বীপের বাসিন্দাদের ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না। আমরা দ্বীপবাসী দ্রুত এ বিচ্ছিন্ন সড়কের জোড়া লাগানোর পাশাপাশি যান চলাচলের উপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ’

বেড়িবাঁধের কাজ শুরুর মাধ্যমে বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে সড়কের ধারে জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ করা গেলে দ্রুততম সময়ে সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ।

240 ভিউ

Posted ৯:২২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com