কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৯ ফেব্রুয়ারী) :: কক্সবাজারের টেকনাফের আত্মসমর্পণকারী ১০২ ইয়াবা কারবারি মাদক কারবারে জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ দিলে ওই ব্যক্তির সম্পদ ও হিসাব জব্দ করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত সোমবার এনবিআরের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) সাত কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি টাস্কফোর্স কমিটিও করা হয়েছে।
এ কমিটি সম্প্রতি আত্মসমর্পণকারী মাদক কারবারি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব এবং আয় ব্যয়ের তথ্য খতিয়ে দেখবে। তথ্যে গরমিল পাওয়া গেলে রাজস্ব আইন অনুসারে চূড়ান্ত ব্যবস্থা হিসেবে সম্পদ ও হিসাব জব্দ করা হবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, সোমবার টাস্কফোর্স কমিটি গঠনের পর সদস্যরা এদিন বিকেলেই জরুরি ভিত্তিতে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এনবিআরের মূল দপ্তর থেকে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ মাদক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাদক কারবারে জড়িত থাকার প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে তা সিআইসিতে পাঠাতে বলা হবে। তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পর কোনো প্রশ্ন না তুলে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সব হিসাব এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করবে এনবিআর।
বৈঠকে সম্প্রতি আত্মসমর্পণকারী মাদক কারবারিদের ব্যাংক ও সম্পদের হিসাব খতিয়ে দেখার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আত্মসমর্পণকারী ১০২ ইয়াবা কারবারির নামের তালিকা, ঠিকানা, সম্পদের পরিমাণ ও তাদের কোন ব্যাংকে কী পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে তার হিসাব এনবিআরে পাঠানোর পর সিআইসির টাস্কফোর্স কমিটি তা যাচাই করবে। কোনো আত্মসমর্পণকারী মিথ্যা তথ্য দিলে তার সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হবে। সমান গুরুত্ব দিয়ে এনবিআর এসব কারবারির পরিবারের সদস্যদের সম্পদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ খতিয়ে দেখবে। পরিবারের সদস্যদের হিসাবে গরমিল পওয়া গেলেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্পদ ও হিসাব যাচাইয়ের তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
আয়কর অধ্যাদেশের ধারা ১১৩ (এফ) অনুযায়ী আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারিদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের একক বা যৌথ নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা এফডিআর, যেকোনো মেয়াদি আমানতের হিসাব, যেকোনো ধরনের বা মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড, ভল্ট, সঞ্চয়পত্র বা যেকোনো সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্ট হিসাব সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে পদক্ষেপ নেবে টাস্কফোর্স। বর্তমানে বন্ধ আছে বা চলমান সব হিসাবইও যাচাই করে দেখা হবে। আত্মসমর্পণকারী মাদক কারবারিদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের বিস্তারিত তথ্য যাচাই করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আশা করছি না যে এসব মাদক কারবারি আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছে। তাই বিকল্প উপায় বের করে তথ্য যাচাই করা হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে এবং স্থানীয় এনবিআর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।’
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এনবিআর সরকারের অংশ। সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে মাদকের বিরুদ্ধে এনবিআর কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘এনবিআরের দায়িত্ব শুধু রাজস্ব আদায় নয়, এনবিআর চোরাচালান, মাদক ব্যবসা বন্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ঋণখেলাপি, অর্থপাচারকারীদের ওপরও নজরদারি বাড়িয়েছে। এরই মধ্যে শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদপ্তর, সিআইসি, মূসক গোয়েন্দা থেকে এসব অসাধু ব্যক্তির অনেককে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে এনবিআর এসব ব্যক্তিকে আটকাতে আরো কঠোর হবে।’
Posted ৩:১২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta