হুমায়ূন রশিদ,টেকনাফ(১৮ ফেব্রুয়ারী) :: টেকনাফে বনবিভাগের ৩টি রেঞ্জের আওতাভূক্ত বিট সমুহের দায়িত্বরতদের রহস্যজনক আচরণ ও রোহিঙ্গা নিয়ে অস্থিরতার সুযোগে দিবা-রাত্রি পাহাড়-টিলা কাটা অব্যাহত রয়েছে। এবার পাহাড় কাটতে গিয়েই মাটি চাপা পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে।
জানা যায়, ১৮ ফেব্রুয়ারী সকাল সাড়ে ৬টারদিকে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মরিচ্যাঘোনায় পইরার বাপের পাহাড় থেকে মাটি কেটে ট্রলিতে ভতির সময় মাটি চাপা পড়ে স্থানীয় মৃত মোহাম্মদ হোছনের পুত্র মোঃ দেলোয়ার হোছন (২২) রক্তাক্ত ও মুমূর্ষ হয়ে পড়ে। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হ্নীলা হয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনার খবর পেয়ে টেকনাফ মডেল থানার এসআই জাহিদ সর্ঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পারিবারিকভাবে সমঝোতা হওয়ায় মাটি চাপায় নিহত ব্যক্তিকে দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। স্থানীয় মেম্বার বশির আহমদ মাটি কাটতে গিয়ে মাটি চাপা পড়ে শ্রমিক নিহতের বিষয়টি স্বীকার করেন।
এস আই জাহিদ হোসেন বলেন,পাহাড় কাটার সময় মাটি চাপা পড়ে শ্রমিক নিহতের বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। পারিবারিকভাবে কোন অভিযোগ না থাকায় লাশ বিকালে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়,স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি দালালের মাধ্যমে বনবিভাগের লোকজনকে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক চুক্তিতে ম্যানেজ করে সরকারী-বেসরকারী পাহাড়-টিলা কেটে সাবাড় করছে। এসবের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাদের বা আতœীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে উল্টো বন মামলা হওয়ার হয়রানিতে ভয়ে কেউ মুখ খুলছেনা বলে জানায়।
এদিকে আরো জানা যায়, উপজেলার উপকূলীয় বাহারছড়া শীলখালী রেঞ্জের নোয়াখালী পাড়া, কচ্ছপিয়া, হাজমপাড়া, বড় ডেইল, মাথাভাঙ্গা, পিনিজভাঙ্গা, শামলাপুর পুরানপাড়া, মনতইল্যা, টেকনাফ রেঞ্জের সদর ইউনিয়নের নাইট্যং পাড়া, পল্লান পাড়া, জাহালিয়া পাড়া, ফকিরা মোরা পাহাড়, নুর আহমদের ঘোনা, শিয়াইল্যা ঘোনা, চাইল্যাতলী, হ্নীলার মরিচ্যাঘোনা, রোজার ঘোনা, আলী আকবর পাড়া, ভিলেজার পাড়া, বৃহত্তর পানখালী, পশ্চিম সিকদার পাড়া, মইন্যারজুম, উলুচামরী, রসুলাবাদ, রঙ্গিখালী, আলীখালী, লেদা, মোচনী, নয়াপাড়া, জাদিমোরা ও দমদমিয়ায়, হোয়াইক্যং রেঞ্জের দৈংগ্যাকাটা, মনিরঘোনা, লম্বাঘোনা, মুলাপাড়া, লম্বাবিল, রইক্ষ্যং, কুতুবদিয়াপাড়া, কাঞ্জর পাড়া, নয়াপাড়া, মিনা বাজার, নয়া বাজার, পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়া, পশ্চিম মহেশখালীয়া পাড়া, রোজার ঘোনা, কম্বনিয়া পাড়ার প্রত্যন্ত এলাকায় নতুন করে বসতি স্থাপন এবং চাষাবাদের জমি তৈরীর জন্য পাহাড় ও টিলা কাটা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব কাজ হচ্ছে। অনেকে রাতের অন্ধকারে মাটি কাটার বাণিজ্য চালিয়ে আসলেও বনবিভাগের দায়িত্বশীলরা ঘুমের ঘোরে অচেতন থাকায় মাটি ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
বন বিভাগের উপর মহলের চাপে লোক দেখানো অভিযান হলেও পরবর্তীতে কিছু ভিলেজারের গোপন আতাঁত ও অবৈধ লেন-দেনের কারণে দাড়িয়ে থাকা পাহাড় সমুহ রক্ষা করা যাচ্ছেনা বলে সচেতন মহলের ক্ষোভ।
তাই সচেতন মহলের দাবী এই সীমান্ত জনপদে যেসব পাহাড়-টিলা বিদ্যমান রযেছে তা রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
Posted ১১:১১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta