হুমায়ূন রশিদ,টেকনাফ(১৪ সেপ্টেম্বর) :: টেকনাফে প্রশাসনের সচেতনতামূলক প্রচারনা সত্বেও শাহপরীরদ্বীপ এলাকা দিয়ে বোট মালিক ও শত শত দালালদের বানিজ্যিক মনোভাবের কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী বহনের ফলে নৌকা ডুবির ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলও দীর্ঘ থেকে আরো দীর্ঘতর হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখখা গেছে,১৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপের জালিয়াপাড়া, বাজারপাড়া,মিস্ত্রীপাড়া,দক্ষিণপাড়া,ঘোলার পাড়া,মাঝেরপাড়া,সাবরাং নয়াপাড়া,মৌলভীপাড়া এবং নাজির পাড়া পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এখনো অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর হত্যা,নির্যাতন এবং বসত-বাড়িতে অগ্নিসংযোগের কারণে বাংলাদেশ সরকার সহনশীল মনোভাব প্রকাশ করায় রোহিঙ্গারা বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এলাকার কতিপয় জনপ্রতিনিধি,বোট মালিক ও চিহ্নিত দালালেরা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের নদী ও সাগরের মাঝপথে এনে সর্বস্ব লুট এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও বোট ডুবির ঘটনায় ডজন ডজন মৃত্যুর ঘটনা জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এরপর উপজেলা প্রশাসন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তাকারী দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করে। এরপরও বোট মালিক এবং ওৎঁপেতে থাকা শত শত দালাল মোটাংক আয় করে পকেটভারীর জন্য তৎপর রয়েছে।
উক্ত এলাকার কতিপয় মেম্বার, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট ওপারে নৌকা পাঠিয়ে রোহিঙ্গাদের এনে আস্তানায় রাখার পর মুক্তিপণ আদায় করছে। মাঝের ঘাট হয়ে আসা রাশিদংয়ের জিয়াউল বলেন, আগে জনপ্রতি ৮/১০হাজার টাকা করে দালালেরা নিত। এখন লোকজন কমে আসায় আমাদের কাছ হতে ২হাজার টাকা করে নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
আগে পালিয়ে আসতে হলেও এখন সেখানকার সেনা সদস্যরা বিভিন্ন গ্রাম হতে বাংলাদেশমুখী হতে সহায়তা করছে বলেও জানা গেছে। আর হাজার হাজার রোহিঙ্গা উক্ত পয়েন্টে সমুহের দালালের খপ্পর থেকে মুক্ত হয়ে টেকনাফ শহর ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পমুখী হতে দেখা গেছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ,শিশু-কিশোর অনাহার আর আতংকের ছাপ নিয়ে গন্তব্যে রওয়ানা করছে।
অনেকে যানবাহন না পেয়ে নিজের জন্মদাতা পিতা কাঁেধ,প্রতিবন্ধি বোনকে পিঠে,অক্ষম পিতাকে বাদুঁড় ঝোলায় এবং আহত মা-বাবার অপেক্ষায় শিশু ভাইকে কোলে নিয়ে বোনকে অপেক্ষার প্রহর গুনতে দেখা গেছে। অনেকে ওপারে রেখে আসা বসত-বাড়ির অগ্নিকান্ড দেখে হাউ-মাউ করে কাঁদতে দেখা গেছে।
এদিকে নৌকা ডুবির ঘটনায় নাফনদীর সাবরাং নয়াপাড়া পয়েন্ট হতে সকালে পুলিশ ১নবজাতক ও নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে।
অপরদিকে দুপুর ১২টারদিকে শাহপরীর দ্বীপ মাঝের পাড়া সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা খালাস করতে আসার সময় নৌকা ডুবির ঘটনায় ১শিশু ও ১মহিলার লাশ উদ্ধার করা হলেও আরো একজন নিখোঁজ ছিল।
দুপুর ১টারদিকে একই পয়েন্টের অদূরে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। এসময় বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও কাউকে মৃত পাওয়া যায়নি। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে কোস্টগার্ড এবং পুলিশের বিশেষ দল সাগর উপকূলে অবস্থান নেওয়ায় রোহিঙ্গা বোঝাই বোট সমুহ উত্থাল সাগরে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
স্থানীয় সাধারণ মানুষ জানিয়েছে,সন্ধ্যার পর পরই দালাল চক্র তাদের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে খালাস করে মুক্তিপণ আদায়ের পর ছেড়ে দিবে বলে আশংকা করছেন।
এদিকে রোহিঙ্গাদের আটক করে মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না থাকায় দালাল চক্রটি দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। এই দালাল চক্রের হাত থেকে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের রক্ষার দাবী উঠেছে।
Posted ১:১৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta