শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

টেকনাফ বন্দর নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দার তদন্ত : এক বছরে ৮৩০১ টন আমদানি পণ্য শুল্ক পরিশোধ ছাড়াই খালাস

শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪
131 ভিউ
টেকনাফ বন্দর নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দার তদন্ত : এক বছরে ৮৩০১ টন আমদানি পণ্য শুল্ক পরিশোধ ছাড়াই খালাস

বিশেষ প্রতিবেদক :: কক্সবাজারের সাথে মিয়ানমারের আমদানি-রপ্তানী বাণিজ্যের অন্যতম বন্দর টেকনাফ শুল্ক স্টেশনে গত এক বছরে ৮ হাজার ৩০১ টন আমদানি পণ্য শুল্ক পরিশোধ ছাড়াই খালাস করা হয়েছে।

ওজনে কারচুপির মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এজন্য বন্দর অপারেটরকে দায়ী করছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর!

যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ ছাড়া এককভাবে বন্দরের পক্ষে কারচুপি করা সম্ভব নয়। মিয়ানমার থেকে বাঁশ, কাঠ, আদা, পেঁয়াজ, নারিকেল, সুপারি, কাঁচা মাছসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।

আমদানি পণ্যের ওজনে কারচুপির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশে শুল্ক গোয়েন্দা ১০ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। যুগ্ম পরিচালক শামসুল আরেফিন খানকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। কমিটি টেকনাফ শুল্ক স্টেশন, ইউনাইটেড পোর্টল্যান্ড লিমিটেড ও অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডে রক্ষিত আমদানির তথ্য যাচাই-বাছাই করে কারচুপির অভিযোগের সত্যতা পায়।

টেকনাফ বন্দরের আমদানির তথ্য পর্যালোচনা করে শুল্ক গোয়েন্দারা দেখতে পান-বন্দর অপারেটরের হিসাবে এক বছরে (জানুয়ারি-২০২৩-জানুয়ারি-২০২৪) এক লাখ ৬৩ হাজার ৮৭১ টন পণ্য আমদানি হয়েছে।

অন্যদিকে কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের তথ্য অনুযায়ী-এক লাখ ৫৫ হাজার ৫৭০ টন পণ্য আমদানি হয়েছে। দুই সংস্থার আমদানির তথ্যে ৮ হাজার ৩০১ টন পণ্যের গরমিল পাওয়া যায়।

শুল্ক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়-আমদানি পণ্যের বিপরীতে বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর পণ্যের কায়িক পরীক্ষার বিধান রয়েছে। কিন্তু এর আগেই কিছু পণ্য সরাসরি জাহাজ থেকে ট্রাকে বোঝাই করা হয় এবং কিছু পণ্য ওয়্যারহাউজে সংরক্ষণ করা হয়। ট্রাকে বোঝাইয়ের পর পণ্যের ওজন করা হয়। যদিও কাস্টমস আইনে এ সংক্রান্ত কোনো বিধিবিধান নেই।

কাস্টমস কর্মকর্তারা ট্রাকে পণ্য বোঝাইয়ের সময় ৫-১০ শতাংশ পণ্য এবং ওয়্যারহাউজে রক্ষিত পণ্য খালাসের আগে ৫-১০ শতাংশ পণ্যের কায়িক পরীক্ষা করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পণ্যের ওজন স্কেলের পরিমাপ তথ্য ম্যানুয়ালি এক্সেল শিটে এন্ট্রি দেওয়া হয়। যা সহজেই পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজন করা যেতে পারে। ট্রাকবোঝাই পণ্যের খালাসের দিনই বিল অব এন্ট্রি জমা দেওয়া হয় এবং পরে শুল্কায়ন করা হয়। কাস্টমস শুল্কায়ন করলে শুল্ককর পরিশোধ সাপেক্ষে বন্দর কর্তৃপক্ষ আউট পাশ ইস্যু করে। বন্দরে প্রবেশ করা ট্রাক এন্ট্রি বা এক্সিটের যথাযথ অনুমোদন নেওয়া হয় না।

ভ্যাটের হেফাজতে থাকা কম্পিউটারের তথ্য গায়েব! : পণ্য আমদানির সঠিক তথ্য জানতে শুল্ক গোয়েন্দা ১৭ জানুয়ারি ইউনাইটেড পোর্টল্যান্ডের অফিসে হানা দেয়।

কম্পিউটারে রক্ষিত তথ্য যাচাই-বাছাই করে শুল্ক গোয়েন্দারা জানতে পারেন-একদিন আগে অর্থাৎ ১৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ভ্যাটের ১৫ সদস্যের দল প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালিয়ে ওজন স্কেল সংশ্লিষ্ট চারটি সিপিইউ ও একটি ল্যাপটপ জব্দ করেছে।

২০ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটি কক্সবাজার ভ্যাট অফিসে বন্দর অপারেটরের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী ও ওজন স্কেলের সুপারভাইজারের উপস্থিতিতে জব্দ সিপিইউ চালু করে দেখতে পায়-১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিটে ওজন স্কেলের সফটওয়্যার ‘স্কেল ওয়েট’ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সব তথ্য সিপিইউ থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।

তথ্য উদ্ধারে কক্সবাজার থেকে আইটি এক্সপার্ট নেওয়া হলেও মুছে ফেলা তথ্য উদ্ধার করা যায়নি।

অর্থাৎ যে দিন দুপুরে শুল্ক গোয়েন্দা ইউনাইটেড পোর্টল্যান্ডের অফিসে হানা দেয়, সে দিন সন্ধ্যায় ‘স্কেল ওয়েট’ সফটওয়্যার থেকে তথ্য মুছে ফেলা হয়। ভ্যাটের হেফাজতে জব্দ কম্পিউটার থেকে কীভাবে তথ্য মুছে ফেলা হলো বা মুছে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অথচ শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে এ ঘটনায় গাফিলতির জন্য কাস্টমসের কাউকে দায়ী করা হয়নি।

কাস্টমস কর্মকর্তাদের সখ্য আড়াল :

একটি জাহাজ বন্দরে আসার সঙ্গে সঙ্গে জাহাজের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাস্টমসে আইজিএম দাখিলের বিধান আছে। কিন্তু টেকনাফ শুল্ক স্টেশনে অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে আইজিএম জমা দেয় মেনিফেস্ট শাখার কর্মকর্তা! এক জাহাজে একাধিক আমদানিকারকের পণ্য থাকলে একটি আইজিএমের পরিবর্তে একাধিক আইজিএম কাস্টমস কর্মকর্তাদের ইউজার আইডি থেকে অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে জমা দেওয়া হয়।

শুল্ক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, টেকনাফ বন্দরে সঠিকভাবে আইজিএম দাখিল ও বহির্গমনের কার্যক্রম আইন পরিপালন হচ্ছে না। এর ফলে জাহাজে কী পরিমাণ পণ্য আনা হয়েছে, কী পরিমাণ পণ্য বন্দরের ওয়্যারহাউজে মজুত আছে এবং কী পরিমাণ পণ্যের বিপরীতে শুল্ক-কর পরিশোধ করা হচ্ছে তা পরিমাপ করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে রাজস্ব ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে।

এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব যুগ্ম পরিচালক সাইফুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, টেকনাফ শুল্ক স্টেশনে ওজনে কারচুপির পেছনে বন্দরে জাহাজে পণ্য আগমন থেকে ট্রাকে বেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সিস্টেমে কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে। যেমন আগে এক্সিট পাশ ইস্যু করত বন্দর কর্তৃপক্ষ, এখন করছে কাস্টমস। এ ধরনের ত্রুটিগুলো ঠিক করতে পারলে রাজস্ব ক্ষতি বহুলাংশে বন্ধ হবে।

কাস্টমস কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া কারচুপি সম্ভব কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ায় সময়ের স্বল্পতা থাকায় কাস্টমস কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা নির্ধারণ সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে আরও তদন্ত হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত প্রতিবেদনে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপিয়েছে। পচনশীল পণ্য যেমন-আদা, পেঁয়াজ, তেঁতুল, আচার, নারিকেল, কাঁচা মাছ ইত্যাদি মিয়ানমারের ট্রলার থেকে সরাসরি ট্রাকে পণ্য উঠানো হয়। কিন্তু সেটিও কাস্টমস কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে হয়।

কাস্টমস কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করা ছাড়া পণ্য কোনোভাবেই বন্দরের বাইরে নেওয়া সম্ভব নয়। ওজনে কারচুপির মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটলে তা বন্দর-কাস্টমসের যোগসাজশেই ঘটেছে।

অথচ প্রতিবেদনে একতরফাভাবে বন্দর অপারেটরকে দায়ী করা হয়েছে। অন্যদিকে কক্সবাজার ভ্যাট সার্কেলে রক্ষিত কম্পিউটার থেকে কীভাবে তথ্য মুছে ফেলা হলো, এর পেছনে ভ্যাট কর্মকর্তাদের যোগসাজশ আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

এ বিষয়ে টেকনাফ বন্দর অপারেটর প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পোর্টল্যান্ড লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত রিপোর্ট এখনো দেখিনি। ওজনে কারচুপির তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হলে-তা সত্য নয়। কারণ ওজনে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই।

131 ভিউ

Posted ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com