কক্সবাংলা ডটকম(২৪ এপ্রিল) :: বাণিজ্য নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের বিরোধ উদ্বেগে ফেলেছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতকে। দুপক্ষের বিরোধে অর্থনীতির সম্ভাব্য ক্ষতির ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বাণিজ্য উদ্বৃত্ত সংকুচিত করতে দেশটি থেকে আরো তেল, ড্রোন ও উড়োজাহাজ আমদানির পরিকল্পনা করেছে ভারত। খবর ব্লুমবার্গ।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কেবল তেল আমদানির মাধ্যমেই ৪০০ কোটি ডলার পর্যন্ত উদ্বৃত্ত কমিয়ে আনতে পারবে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্ অর্থনীতিটি। গণমাধ্যমকে এমন কথা বলেছেন ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা।
ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পরিকল্পনা পুনর্গঠন ও বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতি সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা ভারতসহ বিভিন্ন দেশকে উদ্বেগে ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে অন্য অংশীদার দেশগুলোর মতো ভারতও আমদানি বৃদ্ধির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ভীতি প্রশমনের চেষ্টা করছে।
চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ওই দেশগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যারা সম্ভাব্য মুদ্রা কারসাজি কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে রফতানি জোরদার করছে বলে ভাবছে দেশটি। এসব দেশকে নজরদারিতে রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
এদিকে রফতানিকে সহায়তা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের বিষয়টি অস্বীকার করেছে ভারত। তবে দেশটি মার্কিন তালিকার প্রধান শর্তগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ অন্তত ২ হাজার কোটি ডলার।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কেবল ভারতই দেশটির সঙ্গে উদ্বৃত্ত (মার্চেন্ডাইজ ও সেবা) কমিয়েছে।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের উপাত্ত অনুসারে, যেখানে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮০ কোটি ডলার, সেখানে ২০১৭ সালে উদ্বৃত্ত কমে ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের মার্চেন্ডাইজ বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৬ দশমিক ১ শতাংশ কমে ২ হাজার ২৯০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
মূলত ২০১৭ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্বিগুণের বেশি উড়োজাহাজ ও এর যন্ত্রাংশ আমদানি এ উদ্বৃত্ত সংকোচনে সহায়তা করেছে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৭ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশটির উড়োজাহাজ ও যন্ত্রাংশ আমদানির পরিমাণ ৪২৪ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্র অপরিশোধিত তেল রফতানির ওপর থেকে চার দশকের দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় চলতি বছর বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আরো সংকুচিত হবে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর গত বছরের আগস্টে ভারত প্রথমবারের মতো মার্কিন তেলের চালান গ্রহণ করে।ভারত ৪০০ কোটি ডলার মূল্যের মার্কিন তেল আমদানি করতে পারে বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এদিকে ১৯ এপ্রিল ট্রাম্প আনম্যানড এরিয়াল সিস্টেমস রফতানির মার্কিন নীতি শিথিল করেছেন। যার ফলে এখন ভারত দেশটি থেকে ড্রোনও কিনতে পারবে।
দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতিটি প্রয়োজনের ৮০ শতাংশের বেশি অপরিশোধিত তেল আমদানি করে থাকে। গত ছয় মাসে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে। চলতি মাসের ১৭ এপ্রিল রাজধানী নয়াদিল্লিতে মার্কিন জ্বালানিমন্ত্রী রিক পেরি বলেন, কয়েক বছর ধরে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস ক্রয় ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য ঠিক করতে সহায়তা করবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জশুয়া পি মেলত্জার বলেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যাপক পরিমাণে আমদানি বাড়িয়েছে। যদি এটা দেশটির নিজের স্বার্থে হয়ে থাকে, তবে তা ভালো বিষয়। কিন্তু ট্রাম্পের বাণিজ্যবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি বেশ নেতিবাচক ও উৎপাদনশীলতার পরিপন্থী। তার এ দৃষ্টিভঙ্গি দেশগুলোকে নিজেদের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত সংকুচিত করার বিষয়ে ভাবতে বাধ্য করছে।
মেলত্জ বলেন, বিষয়টি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা বলার সময় এখনো হয়নি। তবে হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের দীর্ঘমেয়াদের বিপদ রয়েছে। এর ফলে দেশগুলো স্থায়ীভাবে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করবে।
এদিকে বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে বিরোধ অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ভারত আপাত নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিরোধ নিষ্পত্তি পর্ষদকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ মীমাংসায় হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছে।
একই সঙ্গে যুক্তরষ্ট্রের কাছে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আরোপিত শুল্ক থেকে অব্যাহতি পাওয়ার চেষ্টা করছে দেশটি।
Posted ২:৫৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta