বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ডিজিটাল হুন্ডি চক্রের কবলে রেমিট্যান্স

মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট ২০২২
198 ভিউ
ডিজিটাল হুন্ডি চক্রের কবলে রেমিট্যান্স

কক্সবাংলা ডটকম :: ডিজিটাল হুন্ডির কবলে পড়ে বৈধ পথে কমছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। হুন্ডি কারবারিরা এর জন্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিয়েছে। কিছু অসাধু এজেন্ট এ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে প্রবাসে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ কমে গেছে। বিএফআইইউর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এরই মধ্যে কয়েকটি এমএফএস প্রতিষ্ঠান ৫ হাজার ৪১৯ এজেন্টশিপ বাতিল করেছে।

অন্যদিকে অবৈধ গেমিং, বেটিং বা জুয়া এবং অনলাইনে বৈদেশিক মুদ্রার বাণিজ্যের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে নগদ ডলার। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক বিশেষ অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। আর এ ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্তে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বিএফআইইউ জানতে পেরেছে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে বিকাশ, নগদসহ বিভিন্ন এমএফএস প্রতিষ্ঠানের নামে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করছে একটি চক্র।

হুন্ডি চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশি এজেন্টের কাছে অ্যাপ বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবাসীদের সুবিধাভোগীর এমএফএস অ্যাকাউন্ট নম্বর ও টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে এসএমএস পাঠাচ্ছে। এখানকার এজেন্ট সুবিধাভোগীর নম্বরে ক্যাশ ইন করে দিচ্ছে। এতে করে প্রবাসীদের অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় দেশে আসছে না।

জানা গেছে, বিদেশে বিভিন্ন এমএফএসের সাইনবোর্ড টানিয়ে প্রবাসীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংশ্নিষ্ট দেশের বাংলাদেশি দূতাবাস যেন ব্যবস্থা নেয়, সে অনুরোধ জানিয়ে গত ১১ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। অন্যদিকে, তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিআইডিতে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।

বিএফআইইউর অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, অনলাইন গেমিং, বেটিং, ক্রিপ্টোট্রেডিং বা অনলাইন ফরেক্স ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে এমএফএস এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় কিছু অসাধু এমএফএস এজেন্টের কাছে এসে ‘ক্যাশ আউট’ করে খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে ওইসব অনলাইন সাইটের পরিচালনাকারীদের কাছে পাচার হচ্ছে। এ ধরনের বেশিরভাগ সাইট ভারত ও চীন থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

বেশ কিছুদিন ধরে দেশে ডলারের সংকট চলছে, যার অন্যতম কারণ রেমিট্যান্স কমে যাওয়া। ব্যাংকের পাশাপাশি খোলাবাজারেও ডলারের দর অনেক বেড়ে গেছে। চলতি বছরের শুরুর দিকেও খোলাবাজারে প্রতি ডলার ৯০ টাকার আশপাশে ছিল। সম্প্রতি যা সর্বোচ্চ ১১৯ টাকায় উঠেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনসহ বিভিন্ন উদ্যোগের পর দর এখন কিছুটা কমে ১০৬ থেকে ১১০ টাকায় নেমেছে। আবার আমদানি পর্যায়েও ৮৬ টাকায় থাকা ডলারের দর ১১২ টাকায় উঠেছিল। এখন যা কিছুটা কমে ১০৪ থেকে ১০৬ টাকায় নেমেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় ডলারের দর এভাবে বেড়েছে। এর প্রভাবে বাজারে পণ্যমূল্য বেড়েছে।

জানা গেছে, এমএফএস প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ডিজিটাল হুন্ডি এবং অবৈধ গেমিং, বেটিং, ক্রিপ্টোট্রেডিং বা অনলাইন ফরেক্স ট্রেডিং-সংক্রান্ত লেনদেন চিহ্নিত করতে মোট ৪ লাখ এমএফএস এজেন্টের তথ্য বিশ্নেষণ করেছে বিএফআইইউ। চারটি নির্দেশকের ভিত্তিতে গত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ের লেনদেন বিশ্নেষণ করে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৮১ হাজার ৫০৫টি সন্দেহজনক লেনদেন চিহ্নিত করা হয়।

এসব নির্দেশকের একটি হলো- যেসব এজেন্ট নম্বরের মোট লেনদেনের ৯০ শতাংশ বা তার বেশি শুধু ‘ক্যাশ ইন’ হয়েছে। অন্য নির্দেশকের মধ্যে রয়েছে- মোট লেনদেনের ৯০ শতাংশের বেশি, যেখান থেকে শুধু ‘ক্যাশ আউট’ হয়েছে, এক মিনিটে চারটি বা তার বেশি ‘ক্যাশ ইন’ এবং রাত ২টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে ‘ক্যাশ ইন’। এভাবে বিকাশের ৬৯ হাজার ৬১৩টি, উপায়-এর ৩৮ হাজার ৮৩৫টি, রকেটের ৩৮ হাজার ৩৫৮টি এবং নগদের ৩৪ হাজার ৩৫৮ এজেন্টকে প্রাথমিকভাবে সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এরপর সংশ্নিষ্ট এমএফএস প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব এজেন্টের তথ্য দিয়ে অধিকতর বিশ্নেষণ করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। সে আলোকে ৫ হাজার ৮৯ জনের এজেন্টশিপ বাতিল করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এর বাইরে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত আরও ৩৩০টি এজেন্টের এজেন্টশিপও বাতিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বাতিল হওয়া ৫ হাজার ৪১৯ এজেন্টের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিআইডিতে তথ্য দেওয়া হয়েছে।

বিকাশের চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল (অব.) শেখ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিপালন নীতিমালাবহির্ভূত যে কোনো লেনদেন প্রতিরোধে বিকাশ সবসময় কার্যকারী ভূমিকা পালন করে আসছে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউর নীতিমালা মেনে নিয়মিত লেনদেন তদারকি ও মাঠ পর্যায়ে যাচাই করে থাকি। প্রয়োজনীয় ঝুঁকি নিবারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করি। পাশাপাশি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য প্রথা অনুযায়ী উত্থাপন করি। হুন্ডি প্রতিরোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বর্তমান উদ্যোগেও আমরা সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’

নগদের হেড অব কমিউনিকেশন মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম সজল বলেন, ‘ডিজিটাল হুন্ডির বিরুদ্ধে সব সময় স্বোচ্চার রয়েছে নগদ। সর্বোচ্চ সতর্কতার মাধ্যমে যে কোনো সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিরোধে আমরা বদ্ধপরিকর। নগদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে কোনো এজেন্ট থেকে হঠাৎ করে লেনদেন অনেক বাড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাল সংকেত পাওয়া যায়। লেনদেন কেন হঠাৎ বাড়ল, তা যাচাই করে সেখানে কোনো অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হলে বিএফআইইউতে সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্টিং (এসটিআর) করা হয়।’

বিএফআইইউর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ডিজিটাল হুন্ডিতে অধিকতর সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত ৩৩০ এজেন্টের মধ্যে ১৩১টির মোট লেনদেনের ৯৯ দশমিক ৯৫ শতাংশই শুধু ‘ক্যাশ ইন’ হয়েছে, যেখানে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি টাকার বেশি। ৬১ এজেন্টের মোট লেনদেনের ৯৯ শতাংশ শুধু ‘ক্যাশ আউট’ হয়েছে, যেখানে মোট লেনদেনের পরিমাণ ৭০ লাখ টাকার বেশি। ৭৪টি হিসাব থেকে এক মিনিটে ৪ বা তার বেশিবার ‘ক্যাশ ইন’ হয়েছে। এসব এজেন্টের ক্ষেত্রে কমপক্ষে শতাধিকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। রাত ২টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে ২৫০টির বেশি ক্যাশ ইনের ঘটনা ঘটেছে ৬৪টি এজেন্ট নম্বর থেকে।

সংশ্নিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হুন্ডি চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এমএফএসের এজেন্টশিপ নিয়েছে। তাদের কাছে বিদেশ থেকে শুধু টাকার পরিমাণ ও নম্বর উল্লেখ করে নির্দেশনা আসে। সে আলোকে সুবিধাভোগীর নম্বরে এখান থেকে অর্থ পরিশোধ হয়। দ্রুততম সময়ে সুবিধাভোগীর নম্বরে টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়। সাধারণত এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সার্ভিস চার্জ নেয় না হুন্ডি কারবারিরা।

ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে যেখানে গড়ে ৪ শতাংশের মতো খরচ হয়, আবার ব্যাংকিং চ্যানেলের তুলনায় দর বেশি দেওয়া হয়। হুন্ডি কারবারিদের আউটলেট বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিদেশে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকার কাছে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা বাসা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসে। কখনও কখনও প্রবাসীর পক্ষে অগ্রিম অর্থ পাঠিয়ে দেয়। এ রকম নানা সুবিধার কারণে হুন্ডিতে ঝুঁকছেন অনেকে।

বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ বাড়লেও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমছে। আবার বিদেশ ভ্রমণ নানাভাবে নিরুৎসাহিত করার পরও দেশের বাজারে নগদ ডলারের ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের অর্থবছরের তুলনায় যা ৩৭৫ কোটি ডলার বা ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম। অথচ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত বছর ৬ লাখ ৩০ হাজার শ্রমিক বাইরে গেছেন। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসেই বিদেশে গেছেন আরও ৬ লাখ ৫০ হাজার শ্রমিক। এর পরও রেমিট্যান্স কমার বিষয়টি আশঙ্কাজনক।

জানতে চাইলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের ইকোনমিকস ক্রাইম স্কয়াডের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, বিএফআইইউ থেকে একটি প্রতিবেদন তাঁরা পেয়েছেন। প্রতিবেদন পাওয়ার আগেই তাঁরা ডিজিটাল হুন্ডি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। এখন তাঁদের সুবিধা হলো। সন্দেহজনক এজেন্টের বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানের আলোকে তথ্য-প্রমাণ পেলে মামলা দায়েরসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হুন্ডি, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্থ পাচার অনেক পুরোনো একটি সমস্যা। বর্তমানে প্রবাসী আয়ের অর্ধেকের বেশি হুন্ডিতে আসছে। সাধারণত দেশের ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ কিংবা কর ফাঁকির অর্থ পাচার হচ্ছে। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর না হলে এ প্রবণতা কমানো যাবে না। তিনি বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের তুলনায় হুন্ডিতে অনেক বেশি দর দেওয়া হচ্ছে। ফলে হুন্ডির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চ্যানেল পেরে উঠছে না। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা বাইরেই থেকে গিয়ে দেশের মুদ্রাবাজারে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

198 ভিউ

Posted ৩:৩১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট ২০২২

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com