কক্সবাংলা ডটকম :: এ নিয়ে তিনবার। ভারতের মর্যদাপূর্ণ ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড (বাংলা) উঠল জয়া আহসানের হাতে। ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অতনু ঘোষ পরিচালিত ‘বিনিসুতোয়’ সিনেমার জন্য সম্মাননা পেলেন বাংলাদেশী অভিনেত্রী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জমকালো আয়োজনে তাকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর সম্মাননা তুলে দেয়া হয়।
তিনবার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস পেয়ে উচ্ছ্বসিত জয়া আহসান। নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘পরপর তিনবারের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে সম্মানিত হতে পেরে আপ্লুত। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জনপ্রিয় বিভাগে “বিনিসুতোয়” সিনেমার জন্য কৃষ্ণ সুন্দরী হাতে এলেন। ধন্যবাদ দর্শক এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কার কর্তৃপক্ষকে, এত ভালোবাসা দেয়ার জন্য।’
জয়া আরো লিখেছেন, ‘আমার পরিচালক অতনু ঘোষ বিনিসুতোয় সিনেমার মধ্য দিয়ে যে নাগরিক রূপকথা বুনেছেন তার রেশ রয়ে গেল এই প্রাপ্তিতে। সিনেমার সমস্ত টিমকে অভিনন্দন জানাই ফিল্মফেয়ারের মঞ্চে সমালোচকদের পছন্দের সেরা সিনেমা, সমালোচকদের পছন্দের সেরা পরিচালক ও সেরা সম্পাদনার শিরোপা জয়ের জন্য। বিনিসুতোর বুনন আরো পোক্ত হলো আজ, শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা উজ্জ্বলতর হোক, সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই।’
‘মহামারীর ধাক্কা সামলে ২০ আগস্ট কলকাতায় মুক্তি পায় বিনিসুতোয়। ছবিটি পরিচালনা করেছেন ময়ূরাক্ষী ও রবিবার সিনেমার পরিচালক অতনু ঘোষ। তখন বিনিসুতোয় ও এর চরিত্র নিয়ে জয়া বলেন, ‘আমি যখন এ চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়েছি, বারবার সচেতনভাবে খেয়াল করেছি শ্রাবণীর অভিনয়ে যেন কমতি থাকে। অভিনয়টা যেন পুরোপুরি না হয়। জয়া আহসান তো শ্রাবণী বড়ুয়ার চরিত্র করছেন। শ্রাবণী বড়ুয়া আরেকটি শ্রাবণী চরিত্রে অভিনয় করছেন। সেখানে ভুলভ্রান্তি, হ্যাজিটেশন সবকিছুই থাকবে। সেই অভিনয়টায় যেন ঘাটতি থেকে যায়। সেই অভিনয়টা যেন তুখোড় না হয়। এ দুটো বিষয় মাথায় রেখেই আমরা বিনিসুতোয় করেছি।’
এর আগে ২০১৯ সালে টালিউডের ছবি বিজয়া ও রবিবারের জন্য ফিল্মফেয়ার (বাংলা) পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান জয়া আহসান। এছাড়া বিসর্জন ছবিতে অভিনয়ের জন্য ২০১৮ সালেও সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পান জয়া আহসান। তারও আগে অরিন্দম শীলের ঈগলের চোখ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ২০১৪ সালে অরিন্দমের আবর্ত ছবির জন্যও মনোনয়ন পেয়েছিলেন এ অভিনেত্রী।
কলকাতায় জয়া আহসান ধারাবাকিভাবে সফল। শুধু পুরস্কারই নয়, তার সিনেমাগুলো ব্যবসায়িকভাবেও সফল হচ্ছে। জয়ার তৈরি হয়েছে নিজস্ব দর্শক। কলকাতায় জয়ার সফলতার কারণ বলতে গিয়ে পরিচালক অতনু ঘোষ বলেন, ‘জয়া খুব সংবেদনশীল শিল্পী। অনেক যত্ন করে, ভাবনাচিন্তা করে, হোমওয়ার্ক করে একটা চরিত্রকে রূপ দেয়।’ অতনু ঘোষ জয়া আহসানকে নিয়ে বানিয়েছেন ‘রবিবার’। এ ছবির হাত ধরেই স্পেনের মাদ্রিদ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহেও মুক্তি পায় ছবিটি। জয়াসহ অন্যান্য বাংলাদেশী শিল্পীর কলকাতায় কাজ প্রসঙ্গে পরিচালক অতনু ঘোষ বলেন, ‘দেশের মানুষের কাছে চাহিদা আছে বলেই বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীরা কাজ করছেন। এখানকার ছবিতে বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীরা বড় পর্দায় কিছু চরিত্র করে দর্শকদের মনে স্থান করে নিয়েছেন। অভিনয়গুণের পাশাপাশি দর্শক চাহিদার কারণে এ দেশের প্রযোজক ও পরিচালকেরা তাদের কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন।’
নয় বছর ধরে ভারতের চলচ্চিত্রে কাজ করছেন জয়া আহসান। সেখানে তার প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি ‘আবর্ত’। ‘রাজকাহিনি’, ‘কণ্ঠ’, ‘ভালোবাসার শহর’, ‘বিজয়া’, ‘বিসর্জন’, ‘বিনিসুতোয়’সহ যেসব ছবি মুক্তি পেয়েছে, সবক’টিই প্রশংসিত হয়েছে। কলকাতায় জয়ার জনপ্রিয়তা, সিনেমায় তার চাহিদা সেখানকার যেকোনো অভিনেত্রীর জন্য ঈর্ষণীয়। যদিও জয়ার কাছে সফলতা কেবলই এক গন্তব্য। সবাইকে ছাপিয়ে একা হাঁটা নয়, বরং সবাইকে জড়িয়ে থাকা। তাই তো তিনি সফল নন, তিনি সার্থক। এ বিষয়ে জয়া বলেন, ‘শিল্পে সফলতা বলে কোনো বিষয়ই নেই। সফলতা একটা গন্তব্য। শিল্পে তো কোনো তৈরি হওয়া পথ বা রাস্তা থাকে না। তাহলে সেই পথের কোনো গন্তব্যও নেই। এখানে যেটা আছে, সেটা হলো অবিরাম পথচলা। সফলতা হলো একার। সবাইকে পেছনে ফেলে একাই এগিয়ে যাওয়া। মানে একাই সবকিছু নিয়ে নেয়া। সার্থকতার অনুভূতি হলো সবাইকে জড়িয়ে থাকো। এর মধ্যেই শান্তি। আমি যে অভিনয়ে এসেছি, এর মস্তবড় একটা কারণ হলো আমি এর মাধ্যমে মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাই। নিজের মধ্যে গভীর প্রশান্তি পাই। যার সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নেই, একটা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা তেমন মানুষের কাছ থেকে পাচ্ছি। এটা একটা অসাধারণ ব্যাপার। একটা ছোট্ট মানবজীবনে আর কতটাইবা পাওয়ার থাকতে পারে।’
কলকাতায় এ মুহূর্তে যেসব পরিচালক ও প্রযোজক ভালো কাজ করছেন, তাদের আস্থার শিল্পী তিনি।
Posted ৭:৫৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২০ মার্চ ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta