রবিবার ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

তিব্বত : নিষিদ্ধ সেই নগরী

শনিবার, ০৯ জুন ২০১৮
545 ভিউ
তিব্বত : নিষিদ্ধ সেই নগরী

কক্সবাংলা ডটকম(৯ জুন) :: ছোটবেলায় সাধারণ জ্ঞান হিসেবে আমরা পড়ে আসতাম, নিষিদ্ধ নগরী হলো তিব্বত। কথাটা আধা ভুল তো আধা ঠিক। আসলে নিষিদ্ধ নগরী ছিল তিব্বতের রাজধানী লাসা নগরী। কিন্তু কেন লাসা নিষিদ্ধ ছিল? সে রহস্যের অনুসন্ধানেই আজকের এ লেখা।

তিব্বতের অবস্থান; Source: Wikimedia Commons

গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের দক্ষিণ পশ্চিমের এক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হলো তিব্বত (Tibet)। এ অঞ্চলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে। এখন যে তিব্বত আমরা দেখি তার সীমারেখা সেই অষ্টাদশ শতকেই নির্ধারিত হয়। ক্ষেত্রফল সুবিশাল- ১২,২৮,৪০০ বর্গ কিলোমিটার। চীনের জিংজিয়াং অঞ্চল বাদ দিলে এটাই সবচেয়ে বড় প্রাদেশিক অঞ্চল। তবে এর জনসংখ্যা ঘনত্ব সবচেয়ে কম, কারণ এলাকাটা খুবই পাহাড়ি, দুর্গম, উঁচু ও বৈরী আবহাওয়ার। একই কারণে এ অঞ্চলের অর্থনীতিও খারাপ। ৭৫ লাখ তিব্বতীর মাঝে ৩০ লাখই বাস করে তিব্বতের বাইরে। গবাদি পশু চড়ানো বাদে কম দক্ষতাই আছে তিব্বতবাসীদের। টুরিজম ব্যবসা ছাড়া অন্য তেমন কিছু থেকে আয় হয় না এখানে। শিক্ষার হারও বেশ কম। অনেক তিব্বতবাসী স্বাধীন হতে চাইলেও তিব্বত এখনও চীনেরই অংশ। তাছাড়া দালাই লামা সংক্রান্ত খবর আর বেইজিং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহজনিত সংবাদের কারণে প্রায়ই বিশ্বসংবাদের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তিব্বত।

এই তিব্বতের প্রশাসনিক রাজধানী হলো লাসা (Lhasa-ལྷ་ས་)। আর লাসার শহুরে এলাকা বলতে বোঝায় মূলত Chengguan জেলা। তিব্বতী মালভূমির দ্বিতীয় জনবহুল অঞ্চল হলো লাসা, প্রথমটা হলো Xining; একইসাথে লাসা পৃথিবীর উচ্চতম শহরগুলোর একটি, সমুদ্র তল থেকে প্রায় ১১,৪৫০ ফুট (৩,৪৯০ মিটার) উঁচুতে। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি থেকেই লাসা ছিল তিব্বতের রাজধানী। তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র অনেকগুলো স্থান এখানে অবস্থিত যার মাঝে আছে পোটালা প্রাসাদ, জোখাং মন্দির, নরবুলিংকা প্রাসাদসমূহ ইত্যাদি।

হলুদ অংশটি লাসা; Source: Wikimedia Commons

তিব্বতের বৌদ্ধদের জীবন্ত ঈশ্বরনামে খ্যাত আগের দালাই লামার নগরী লাসার নামের অর্থ ‘দেবতাদের ভূমি‘ (Land of the Gods)। তিব্বতের প্রাচীন পাণ্ডুলিপি অনুযায়ী, আগে এ জায়গার নাম ছিল ‘রাসা’ যার মানে কিনা ‘ছাগলদের ভূমি’। তবে হতে পারে শব্দটা এসেছে রাও-সা থেকে যার মানে ‘দেয়াল আবিষ্ট এলাকা’। হতে পারে, মারপরি টিলার রাজকীয় পরিবারের শিকার করবার সংরক্ষিত এলাকা হবার কারণে এরকম নাম ছিল। ৮২২ সালে চীন ও তিব্বতের মাঝে হয়ে যাওয়া চুক্তিতে প্রথমবারের মতো ‘লাসা’ নামখানা উল্লেখিত দেখা যায়। প্রসংগত উল্লেখ্য, রাজা সংস্তান গ্যাম্পোকে বলা হয় তিব্বতী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা, যার হাত ধরে এখানে বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাব হয়।

রাজা সংস্তান গ্যাম্পো; Source: Wikimedia Commons

লাসা কেন নিষিদ্ধ নগরী নাম পেল? কারণ, বিদেশিদের জন্য এ নগরে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। আধুনিক যুগে এসেও সাংবাদিকরা পর্যন্ত ঢুকতে পারতেন না লাসা নগরীতে ছবি তুলবার জন্য। যেহেতু আলাদা থাকাটাই তিব্বতীদের বেশি পছন্দ ছিল, তাই আধুনিকতার সাথে পরিচয় খুবই দেরিতে হয়েছে তিব্বতের। কেউ কখনো লাসাতে উড়ে যেতে পারত না, এমনকি গাড়িতে যাওয়াও যেত না; যেতে চাইলে একদম হেঁটেই যেতে হবে। এখানের প্রথম যে থিয়েটার চালু হয় সেটা বর্তমান চতুর্দশ দালাই লামার কারণেই হয়েছে। দালাই লামাকে নিয়ে জানতে পড়ুন আমাদের এ লেখাটি- কে এই দালাই লামা?

বর্তমান দালাই লামা; Source: Wikimedia Commons

অতীতে, সপ্তদশ শতকে স্থানীয় তিব্বতীগণ ছাড়াও ভারতবর্ষ থেকে আগত বণিক ও চীন থেকে আগতরা আবাস গাড়ে লাসা-তে। তাই সেখানে এমনকি হিন্দু ও মুসলিমও ছিল। ১৯৫০ সালের পর রেড আর্মি তিব্বতের দখল নিয়ে নেয় ও কড়া নজরে রাখে দশকের পর দশক। আজকে অবশ্য ৫ জনের কোনো দল চাইনিজ দূতাবাস থেকে ভিসা নিয়ে তিব্বতে হাজির হয়ে পরতে পারে। কিন্তু এখানে চলাফেরা করতেও বিশেষ অনুমতি লাগে চীন সরকারের, কাগজে কলমে লেখা থাকবে কবে কোথায় আপনি যাচ্ছেন। ছাদে ছাদে চৈনিক সেনা থাকে। আপনি হান চাইনিজ না হলে, লাসা-কে এখনো আপনার জন্য পুরো মুক্ত বুঝি বলা যাচ্ছে না। স্বাধীনতাকামীদের আন্দোলনের পর থেকে নিষেধাজ্ঞা কড়াকড়ি হয়েছিল। ২০০৮ সালেও হয়েছিল দাঙ্গা। তবে, অন্তত তিব্বতী রেলওয়ে দেখবার জন্য হলেও সেখানে ভ্রমণ উচিত।

চলছে ট্রেন তিব্বতে; Source: Wikimedia Commons

কী কী দেখার আছে নিষিদ্ধ নগরী লাসাতে?

শুরুতেই বলা যায় পোটালা প্রাসাদের কথা। এটা মূলত দালাই লামার শীতকালীন আবাস। ১৬৪৫ সালে পঞ্চম দালাই লামা নির্মাণ করেন পোটালা প্রাসাদ। পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় একটি জায়গা হলো এই প্রাসাদ যেখানে রয়েছে ১৩টি তলা, প্রায় ১,০০০ কক্ষ, ১০,০০০ মঠ এবং ২ লাখ মূর্তি। মার্পো রি বা রেড হিলের চূড়ায় ৩৮৪ ফুট উঁচু এ প্রাসাদ উপত্যকা ভূমি থেকে প্রায় ১,০০০ ফুট উঁচু।

এই সেই পোটালা প্রাসাদ; Source: Wikimedia Commons

এরপর আছে জোখাং মন্দির (Jokhang Temple)। রাজা সংস্তান গ্যাম্পো সপ্তম শতকে এটি নির্মাণ করেন। এখানে রয়েছে শাক্যমুনি বুদ্ধের মূর্তি, যেটি কিনা রাজকুমারী ওয়েন চেং ১,৩০০ বছর আগে নিয়ে আসেন, তিব্বতের সবচেয়ে পূজনীয় বস্তু এটিই। চার তলা উঁচু সোনায় মোড়া ছাদওয়ালা মন্দিরটি দক্ষিণমুখী ও দেখতে চমৎকার। পুরনো লাসার মাঝখানে অবস্থিত বার্খোর স্কোয়ারে রয়েছে এ মন্দিরটি।

জোখাং মন্দিরের সোনায় মোড়ানো ছাদ; Source: Wikimedia Commons

আরেকটি দেখার জায়গা হলো নরবুলিংখা প্রাসাদ। এটি দালাই লামার গ্রীষ্মকালীন আবাস। ১৭৫৫ সালে সপ্তম দালাই লামা এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই পুরনো  প্রাসাদখানাতে আছে ছোট একটি চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং একটি ম্যানশন। পোটালা থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নরবুলিংক্ষা পর্যটনের বড় একটি কেন্দ্র।

নরবুলিংখা; Source: Quora

এরপর আসা যাক বার্খোর স্ট্রিট মার্কেটের কথায়। সপ্তদশ শতকের মাঝে তিব্বতের বিদেশী পণ্য কেনাবেচার শ্রেষ্ঠ স্থান হয়ে দাঁড়ায় জমজমাট বার্খোর। এ এলাকায় থাকতেন বণিক ও দেশান্তরীগণ। আজ জায়গাটা মুখর থাকে পর্যটকদের বুলিতে। তিব্বতী নানা হাতের কারুকাজ এখানে কিনতে পাওয়া যায়।

বার্খোর; Source: Quora

যারা ভ্রমণের জন্য তিব্বতের লাসা যাবেন ভাবছেন, তাদের জন্য কিছু বিষয়ে জানা জরুরি। কখনোই জোখাং, পোটালা কিংবা কোনো তীর্থস্থানে মাথায় হ্যাট বা টুপি পরা যাবে না। এমনকি কোনো হাফ প্যান্টও না। যদি কোনো মঠে যাওয়া পরে, তবে সেখানে অল্প হলেও কোনো অনুদান দিয়ে আসা উচিত। কোনো পবিত্র বস্তুকে প্রদক্ষিণ করবার একটি প্রথা প্রচলিত আছে, সেটা করতে হলে ঘড়ির কাটার দিকেই করতে হবে। কোনো পবিত্র বস্তু বা মূর্তি আরোহণ করা যাবে না। তিব্বতীরা মন্দিরে রসুনের গন্ধ অপছন্দ করে, তাই সেখানে যাবার আগে রসুন খাওয়া বারণ। পোটালা প্রাসাদে গেলে আপনি ছবি তুলতে পারবেন না আদৌ, যদিও জোখাং মন্দিরে ইচ্ছে মতো মনের আশ মিটিয়ে ছবি তোলা যাবে। কোনো কোন মঠে টাকা অনুদান দিলে ছবি তুলবার অনুমতি পাওয়া যায়। ছবি তোলার আগে তাই জিজ্ঞেস করে নেয়াই ভালো।

১৯৯৯ সালের ৫ অক্টোবর তিব্বত মিউজিয়ামের যাত্রা শুরু হয়। এটি তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় যাদুঘর। এখানে প্রায় ১,০০০ এর মতো মূল্যবান বস্তু রয়েছে। পোটালা প্রাসাদের পশ্চিমে নরবুলিংখা রোডের কোণায় একটি L-আকৃতির ভবনে এ মিউজিয়াম রয়েছে। লাসা ভ্রমণে গেলে ইতিহাস জানবার জন্য এ যাদুঘরের বিকল্প নেই।

তিব্বত মিউজিয়াম

লাসাতে গেলে বর্ষাকালে যাওয়া উচিত। কারণ, এটাই নাকি লাসার শ্রেষ্ঠ সময়। তখন রাত্রেই কেবল বৃষ্টি প্রে, বাকি সময়টা দিনের বেলায় থাকে রৌদ্রোজ্জ্বল। তবে, অন্য সময় গেলে যে লাসাকে খারাপ লাগবে তা কিন্তু নয়!

নিষিদ্ধ সে নগরী; Source: The Daily Signal

তো, কবে ঘুরে আসছেন নিষিদ্ধ নগরী থেকে?

ফিচার ইমেজ: Best-Wallpaper.Net

545 ভিউ

Posted ৫:১১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৯ জুন ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com