কক্সবাংলা ডটকম :: আজারবাইজানি তুর্কি বংশোদ্ভূত শিক্ষাবিদ সিনান ওগান এখন তুরস্কের ‘কিং মেকার’। গত ২০ বছর ধরে দাপটের সঙ্গে দেশ চালানো প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান পুনর্নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট না হওয়ায় মাত্র ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তুরস্কের ‘ভাগ্য বিধাতা’ হয়ে উঠেছেন সিনান।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা টিআরটি জানিয়েছে এখন পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ ভোট গণনায় দেখা গেছে ক্ষমতাসীন পিপলস এলায়েন্সের প্রার্থী এরদোয়ান পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনস এলায়েন্সের কামাল কিলিজদারগলু পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ ভোট।এরদোয়ানের তৃতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী আতা এলায়েন্সের সিনান ওগান পেয়েছেন ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোট।
কোনো প্রার্থীই প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট না পাওয়ায় দেশটিতে আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার তুরস্কের সংবাদমাধ্যম হুরিয়াত ডেইলি নিউজ জানিয়েছে, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কামাল কিলিজদারগলু তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিনানের সমর্থকদের ভোট পাওয়ার আশায় তাকে ফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফলে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় ঝুলে আছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের ভাগ্য। প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী, রান অফ বা দ্বিতীয় দফায় গড়াতে যাচ্ছে নির্বাচন। ফলে ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এরদোগান ফের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন কিনা, সেই প্রশ্ন থেকে গেছে। খবর রয়টার্স ও আল জাজিরা।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ ভোট গণনার ফল প্রকাশ হয়েছে। এরদোগান পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৪২ শতাংশ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারোগলু পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ ভোট। তৃতীয় প্রার্থী সিনান ওগান পেয়েছেন ৫ দশমিক ২০ শতাংশ ভোট।
দেশটির সংবিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে নির্বাচন রান অফ বা দ্বিতীয় দফায় গড়ায়। জয় নিশ্চিতের জন্য ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতেই হবে। দেশটির গত ১০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়াচ্ছে। দ্বিতীয় দফার ভোট হবে ২৮ মে।
এদিকে আঙ্কারায় নিজের সমর্থকদের উদ্দেশে এরদোগান বলেন, ‘জনগণ যদি দ্বিতীয় দফার কথা বলে তবে আমরা তাতে অংশ নেব এবং জয়ী হব।’ দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার শপথ নিয়েছেন কেমাল কিলিচদারোগলুও।
তিনি বলেছেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী মানুষের আস্থা ভোট অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন ৫ দশমিক ২০ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান লাভ করা সিনান ওগান। তিনি এরই মধ্যে কেমাল কিলিচদারোগলুকে সমর্থন দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সিনান বলেন, কুর্দিপন্থীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না শুধু এমন শর্তে রাজি থাকলে বিরোধী নেতা কিলিচদারোগলুকে সমর্থন দেবেন তিনি।
পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ এরদোগানের দল: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন পার্লামেন্টের ৬০০ এমপি নির্বাচনেও ভোট গ্রহণ হয়েছে। এরদোগানের ভাগ্য ঝুলে থাকলেও নির্বাচনে বাজিমাত করেছে তার দল। এরদোগানের দল এ কে পার্টির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট পিপলস অ্যালায়েন্স পেয়েছে ৩২৩টি আসন। এর মধ্যে এ কে পার্টি একাই ২৬৭টি আসনে জয়ী হয়েছে। ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স জয়ী হয়েছে ২১১ আসনে।
তুরস্কের নির্বাচনে এবার ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৪০ লাখের বেশি। স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৯টায় ভোট শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল ৫টায়। এর আগে প্রবাসী তুর্কিরা ভোট দিয়েছেন। এবার ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ৮৫ দশমিক ১৪ শতাংশ।
দেশটিতে এমন সময় নির্বাচন হলো যখন জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং মুদ্রার মান পড়ে যাওয়ায় অস্থিরতা দেশটিতে। এরদোগানের বিরুদ্ধেও কথা বলছে বহু মানুষ। যার বাস্তবতা দেখা গেছে নির্বাচনের ফলাফলে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে দেশটির ৮ কোটি ৫০ লাখ মানুষ।
তবে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন গড়ানোয় দেশটির জনগণ আগামী দুই সপ্তাহ ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকবে, এ সময় স্থানীয় মুদ্রা ও স্টক মার্কেটের দরপতনের মাধ্যমে বাজার আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে অনুমান বিশ্লেষকদের।
Posted ১:১৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta