কক্সবাংলা ডটকম(২৩ জুলাই) :: অবৈধ পথে ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টায় তুরস্ক গিয়ে আটকা পড়া প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এদের মধ্যে প্রাথমিক তালিকায় থাকা প্রায় ৫০০ জনের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে তিন শতাধিক বাংলাদেশীকে দেশে ফেরার অনুমতিপত্র (ট্রাভেল পারমিট) দিয়েছে আঙ্কারাস্থ বাংলাদেশ দূতবাস।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত কয়েক মাসে ইউরোপে পাড়ি জমানোর লক্ষ্যে তুরস্কে গিয়ে আটকা পড়েন প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশী। তাদের বেশির ভাগেরই নেই কোনো পাসপোর্ট বা বৈধ কাগজপত্র। মূলত দেশী-বিদেশী দালালচক্রের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে ইরান, লেবানন ও জর্ডান হয়ে তুরস্ক গেছেন তারা।
আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলস্থ বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তাদের সরবরাহ করা তথ্যমতে, আটকা পড়া বাংলাদেশীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়া হয়ে তুরস্কে গেছে। যদিও প্রায় দুই বছর ধরে লিবিয়া ভ্রমণে বাংলাদেশ সরকারের নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে বৈধভাবে কর্মরত বাংলাদেশীরা ইউরোপের মোহে পড়ছেন। দালালচক্রের মাধ্যমে বৈধ কর্মসংস্থান ছেড়ে অবৈধ ও অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ছুটছেন তারা। যদিও তুরস্ক মিশন ঢাকাকে যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, তুরস্ক হয়ে অবৈধ পথে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টা যেকোনো সময়ই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমান সময়ে এটি প্রায় বন্ধ।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশীদের তুরস্কে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে জানিয়ে তুরস্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আল্লামা সিদ্দিকী তাদের দ্রুত দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এক চিঠিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশীদের অবৈধভাবে তুরস্ক যাওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিশেষ করে লিবিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ হয়ে অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার লক্ষ্যে কেউ যাতে ঢাকা থেকে বের হতে না পারে, সেজন্য জোরদার ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে তুরস্কে বাংলাদেশীদের নিয়ে মানবিক সংকট হতে পারে এবং এটি ঢাকা-আঙ্কারা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ইউরোপ যাওয়ার জন্য যেসব বাংলাদেশী তুরস্ক গেছেন, তাদের একটি বড় অংশ দেশটির ডিটেনশন সেন্টারে রয়েছেন। অনেকে ছাড়াও পাচ্ছেন। দেশটির ডিটেনশন সেন্টারে বেশিদিন রাখা হয় না। ঢাকা যাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে দূতাবাসে রিপোর্ট পাঠায়, তাদেরও অনেক সময় খোঁজ পাওয়া যায় না।
জানা গেছে, ডিটেনশন সেন্টার থেকে বের হয়েও অনেকে সমুদ্রপথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে। এতে অনেকেরই সাগরে মৃত্যু হয়েছে। অতিসম্প্রতি ইস্তাম্বুলে একজন বাংলাদেশী মারা গেছেন। তুরস্কে সক্রিয় ও সংঘবদ্ধ দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে ভিনদেশী যেসব মানুষ জীবনের এমন ঝুঁকি নেয়, তারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গেও যুক্ত হয়ে পড়ে। সেই তালিকায় বাংলাদেশীরাও রয়েছে।
ইউরোপে পাড়ি দেয়ার চেষ্টায় তুরস্কে প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশী আটকে পড়ার বিষয়ে ঢাকাস্থ তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেভরিম ওজতুর্ক বলেন, তিনি এ বিষয়ে অবগত নন। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তুরস্ক দূতাবাসে কোনো প্রকার যোগাযোগও করা হয়নি। তবে এতটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি, যেসব বাংলাদেশী সেখানে দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন, তাদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য তুরস্ক সরকার সহযোগিতা করছে।
তিনি আরো বলেন, অভিবাসী প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে তিন থেকে চার বছর আগে একটি খসড়া প্রস্তাব দিয়েছিল তুরস্ক। পরবর্তীতে আবারো ২০১৫ সালে প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ ও তুরস্ক। তবে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশ বিষয়টি নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাট জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯৩ হাজার অবৈধ বাংলাদেশী রয়েছেন। তাদের ফিরিয়ে নিতে চলতি মাসের মধ্যে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস’ (এসওপি) চূড়ান্ত করতে চায় ইইউ। বাংলাদেশও তাদের ফিরিয়ে নিতে নীতিগতভাবে সম্মত রয়েছে।
Posted ২:৩৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৩ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta