শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারে চীন ও ভারতের নতুন সমীকরণ

শুক্রবার, ২৩ মার্চ ২০১৮
432 ভিউ
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারে চীন ও ভারতের নতুন সমীকরণ

কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৩ মার্চ) :: সারা দুনিয়ায় বাণিজ্যিক পরাশক্তি আকারে চীন তার অবস্থান জানান দিয়েছে ইতোমধ্যে। সেই ধারাবাহিকতায় চীন তার প্রতিবেশী দেশগুলোতেও প্রভাব বাড়াতে ব্যাপক তৎপরতা দেখিয়ে আসছে। বৈশ্বিক রাজনীতির বর্তমান সমীকরণ মোতাবেক যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ও চীনের বড় প্রতিবেশী ভারতও অত্র দক্ষিণ এশিয়ায় আলাদাভাবে প্রভাব বলয় জারি রাখতে বেশ তৎপর। চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তিকে টেক্কা দিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিতে ভারত কি কোন অংশে পিছিয়ে পড়ছে?

টাইমস অব ইন্ডিয়া এ নিয়ে তথ্য উপাত্তসহ বিশেষ প্রতিবেদন করেছে। গুরুত্ব বিবেচনা করে জবানের পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি অনুবাদ করে দেয়া হলো।

দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ধারাবাহিক প্রভাব বৃদ্ধি মোদি সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার ২০১৮-১৯ বর্ষে তার সকল প্রতিবেশী দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।

যেখানে ভারত তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে নানা রকম সহায়তা দেওয়ার নীতি নিয়েছে, সেখানে চীন তার পুঁজিবাদী উপায়ে এই অঞ্চলে নানা বিনিয়োগ করে তার প্রভাব বাড়িয়ে চলেছে। চীন তার নিজের স্বার্থ রক্ষা এবং সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের স্বার্থে দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশেই নানা ধরণের উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

চীনের এই ক্রমবৃদ্ধিমান প্রভাব ঠেকাতে কোন নতুন কৌশলের আশ্রয় নিতে সক্ষমতা দেখাতে পারছে না। ফলে ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে আগে যে আর্থিক সহায়তা দিত, তা বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এছাড়া যেকোন উন্নয়ন পরিকল্পনায় নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে সে অঞ্চলে প্রভাব টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এক্ষেত্রে ভারত সরকার নেপাল ও ভুটানকে সবচেয়ে বেশি আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। নেপালে এই অর্থ-সহায়তা ৭৩ শতাংশ বেড়ে এইবার ৬৫০ কোটিতে উঠে এসেছে। যা গত বছরে ছিল মাত্র ৩৭৫ কোটি রুপি।

নেপালের চেয়ে ভারতের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তিতে এগিয়ে ভুটান। ভুটানকে এই অর্থবর্ষে প্রায় ১৮১৩ কোটি রুপি সহায়তা দেওয়ার কথা রয়েছে। যেই সহায়তার অধীনে রয়েছে ৫ বছর মেয়াদী নির্মানাধীন হাইড্রো-ইলেক্ট্রিক প্রজেক্টসহ আরো নানা পরিকল্পনা।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির ভাষ্যমতে, “চীন আমাদের প্রতিবেশী সকল দেশে তার অবকাঠামোগত প্রজেক্টগুলোতে তাদের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে চীনের এই প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের পরিবর্তিত নীতি অনুযায়ী নেপাল ও ভুটানের সাথে আমাদের উন্নয়ন সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে।”

ফলে ১৮-১৯ অর্থবর্ষে ভুটান এবং নেপালে আমাদের বরাদ্দকৃত অর্থ অবশ্যই আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে সাহায্য করবে এবং আমাদের মধ্যকার পরামর্শ, সুসম্পর্ক আমাদের সকলের স্বার্থ সুরক্ষায় কাজে দিবে।”

বেশ কিছুদিন যাবত নেপালে চীনের দৃশ্যমান প্রভাব বাড়াতে ভারত এ ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রতিবেদন প্রকাশিত তথ্যমতে, “ভারত এবং নেপালের মধ্যকার সাংস্কৃতিক এবং সভ্যতার সম্পর্ক অনেক পুরনো। এবং নানা সেক্টরে এ দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান।”

অন্যদিকে ভুটানে ভারতের আর্থিক সহায়তা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ভুটানের সাথে চীনের সম্পর্কের উষ্ণ সম্পর্ক থাকলেও ভারত তাতে ততটা উদ্বিগ্ন নয়। কারণ ভুটানের সাথে ভারতের দীর্ঘ সময়ের বন্ধুত্ব রয়েছে, এবং নানাসময়ে ভুটানে ভারতীয় সামরিক সহযোগিতাও তারা নিয়েছে।

২০১৭ সালে ডোকলাম নিয়ে যখন চীন-ভারত মুখোমুখি, তখন পেছন থেকে ভারতকে সমর্থন জানিয়েছিল ভূটান। আর দোকলামকে নিয়ে চীন এবং ভুটানের সম্পর্কের টানাপোড়েন বেশ পুরানো।

১৯৪৯ সালের চুক্তি অনুযায়ী যা পরে ২০০৭ সালে নবায়ন করা হয়, যেখানে ভুটানের পররাষ্ট্র বিষয়ক সকল সিদ্ধান্ত ভারতের পরামর্শক্রমে করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া ভুটানের সাথে চীনসহ আরও পাচটি পরাশক্তির কারো সাথেই কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারেনি। যেখানে চীন ভুটানের সীমান্তবর্তী দেশ।

এদিকে নেপালে চীনের দৃষ্টি মূলত হিমালয়ের দেশে ভারতের প্রভাবকে কমিয়ে আনার জায়গাটাতে। শুধু তাই নয়, নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলি যেকোন সময়ে ভারতের স্বার্থে আঘাত হানতে পারে বলেও অনেক বিশ্লেষকের ধারণা।

ওলি সবসময়েই একজন চীনাপন্থী রাজনীতিক হিসেবেই পরিচিত। ফলে এবারের নির্বাচনে জিতে তিনি চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার প্রয়াস নিয়েছেন। ফলে ভারতের সাথে নেপালের একতরফা সম্পর্কে বিরাট বিপত্তি আসছে বলেই মনে হচ্ছে। এবং সকল সুযোগ কাজে লাগানোর কথা ঘোষণা দিয়ে ওলি চীনের সাথে দেনদরবারের বিষয়টি আরো পরিস্কার করলেন।

চীনের সাহায্যে আড়াই বিলিয়ন ডলারের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প যা কিনা আগের সরকারের আমলে থেমে গিয়েছিল সেটি নিয়ে আবারো চিন্তাভাবনা করার কথাও বলেছেন নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

চীনেও এক্ষেত্রে আশার পাল্লা বেশ ভারি। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে সরে যাওয়ার আগে বেইজিংয়ের সাথে ট্রানজিট চুক্তি করেছিলেন। যা ভারতের সাথে নেপালের ভারসাম্যহীন সম্পর্কে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছিল।

এক স্বাক্ষাৎকারে ওলি মত দেন। “চীনের সাথে আমাদের যোগাযোগ ভাল, আছে উন্মুক্ত সীমান্ত। আমরা এই যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি করতেও আগ্রহী। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, নেপালের প্রতিবেশী দেশ একটি নয়, দুইটি। ফলে একটি দেশের উপর এভাবে আমাদের নির্ভরতা বাড়ুক আমরা তা চাই না।”

এ মাসের শুরুতে, নেপালের উন্নয়নের স্বার্থে চীন ৪৮ বিলিয়ন রুপি দেবে। সাথে ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ টাটোপানি সীমান্ত রক্ষায় এ অর্থ ব্যয় হবে। উল্লেক্ষ্য, টাটোপানি সীমান্তই চীন-নেপালের বাণিজ্যিক রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দুটি দেশের মধ্যে ট্রেন স্থাপনের পরিকল্পনাও বেশ এগিয়ে এসেছে বলে জানা গেছে।

এখন পর্যন্ত নেপালে চীনের ২২টি প্রকল্প কার্যাধীন আছে। বাংলাদেশেও নিজেদের প্রভাব বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে চীন। বিদ্যুৎ প্রকল্প, সমুদ্রবন্দর এবং রেলপথ নির্মানে বাংলাদেশকে ২৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে চীন।

দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের বিনিয়োগও চুক্তির পরিমাণ

চীন এই ধরণের বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যখন ভারত তার বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। যেখানে ভারত মনে করে, বাংলাদেশে তার প্রভাব অপরিবর্তনীয়।

আরো নানা ধরণের ২৫টি প্রকল্পে সহায়তা করবে চীন। যার মধ্যে আছে, ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎপ্লান্ট এবং গভীর সমুদ্রবন্দর। যাতে করে চীন-বাংলাদেশ সামরিক সম্পর্কে উন্নয়নের মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা সম্পর্কিত চুক্তি করা যায়। যে নিরাপত্তা-চুক্তির আওতায় থাকবে প্রশিক্ষনসহ নানা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন।

তা ছাড়াও ৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তার মাধ্যমে ছয়টি রেলপথ প্রকল্পের পরিকল্পনা তারা হাতে নিয়েছে, যার একটি আবার ভারত সীমান্ত ঘেঁষে।

চীন তার বহুল প্রতিক্ষিত বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর আওতায় ভারতের পাশ্ববর্তী সকল দেশকে নিজের প্রভাবের আওতায় এনে ভারতকে নিয়ন্ত্রন করার পরিকল্পনা করছে।

সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এর মতে, মালদ্বীপসহ আটটি দেশকে নানাধরণের ঋণ দিয়ে চীন তার পক্ষে টানার চেষ্টা করছে। যা তার ঐতিহাসিক সিল্ক রুটের পরিকল্পনাকে সাহায্য করবে।

এক্ষেত্রে চীনের কৌশল খুবই সহজ। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে উচ্চ সুদে ঋণ দিয়ে নানা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার প্রকল্প হাত নেয়। তবে একসময়ে এই ঋণ অফেরতযোগ্য পর্যায়ে চলে গেলে চীন সেই প্রকল্পগুলোর সেমুল্যে ইজারা নিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।

এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা একটি ভাল উদাহরণ, সেখানের হাম্বানটোটা নামের একটি সমুদ্রবন্দর স্থাপনের কাজে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ঋনসহায়তা দেয় চীন। পরবর্তীতে এই বন্দরটি ৯৯ বছরের জন্যে লিজে নিয়ে নেয় চীন।

মার্কিন প্রভাবান্বিত অঞ্চলে চীনের প্রভাব বেড়ে যাওয়া ভারতের জন্যে নিঃসন্দেহে দুঃসংবাদ। এবং মার্কিন গনমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস আশঙ্কা প্রকাশ করে, যেকোন সময়ে মার্কিন-ভারত প্রভাব গুরুত্বহীন হিসেবে দেখা দিতে পারে।

যেখানে এতদিন এশিয়ায় একমাত্র প্রভাবশালী দেশ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে চীনের ক্রমবৃদ্ধিমান প্রভাব আসলে মার্কিন-ভারত সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করবে বলেই সকলের ধারণা।

তবে ট্রাম্পের অস্থিতিশীল পররাষ্ট্রনীতি ইতিমধ্যে এশিয়ার দেশগুলকে বিকল্প ভাবতে বাধ্য করছে। এই মুহুর্তে এশিয়ার সবগুলো দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক আমেরিকার চেয়ে চীনের সাথে বেশি। এবং এ ধরণের ভারসাম্যহীনতা মার্কিন প্রভাব কমাতে কাজে লাগাতে পারে চীন।

432 ভিউ

Posted ৯:০৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৩ মার্চ ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com