কক্সবাংলা ডটকম(১ আগস্ট) :: কৃষি গবেষণায় বরাদ্দ, খাতটিতে জনপ্রতি ব্যয় ও এর প্রাপ্তি— সর্বোপরি বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান। কয়েক বছরের ব্যবধানে দেশে দানাদার খাদ্যশস্য, বিশেষ করে চাল উৎপাদনে লক্ষণীয় সাফল্য এসেছে। বেড়েছে সবজি ও ফলজাতীয় খাদ্যশস্য উৎপাদনও। তা সত্ত্বেও বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকের দুর্বল অবস্থান থেকে বের হতে পারছে না বাংলাদেশ।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে ১১৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯০তম। গত আট বছরে বাংলাদেশ স্কোরে উন্নতি করলেও সার্বিক সূচকে ১৭ ধাপ পিছিয়েছে। ২০০৮ সালে সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩২ দশমিক ৪ পয়েন্ট। ২০১৬ সালে তা দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ১ পয়েন্টে।
সূচক নির্ধারণে চারটি মূল নির্দেশক ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো হলো— অপুষ্টি, শিশুর উচ্চতার তুলনায় ওজন হ্রাস, বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা ও শিশুমৃত্যু হার। এসব নির্দেশকের ভিত্তিতে ১০০ পয়েন্টে সূচক নির্ধারণ করা হয়। যে দেশ যত কম নম্বর অর্জন করবে, সেখানকার শিশুর অবস্থা তত ভালো। সূচকে ৫০-এর বেশি পয়েন্টকে চরম সতর্কাবস্থা, ৩৫ থেকে ৪৯ দশমিক ৯ সতর্কাবস্থা, ২০ থেকে ৩৪ দশমিক ৯ গুরুতর, ১০ থেকে ১৯ দশমিক ৯ মধ্যম মাত্রার ও ৯ দশমিক ৯-এর নিচের স্কোরকে নিম্নক্ষুধার হার নির্দেশ করা হয়।
এর আগে ১৯৯২ সালে সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫২ দশমিক ৪ ও ২০০০ সালে ৩৮ দশমিক ৫। সর্বশেষ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত (৯৭তম), পাকিস্তান (১০৭তম) ও আফগানিস্তানের (১১১তম) চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে আছে নেপাল (৭২তম), মিয়ানমার (৭৫তম) ও শ্রীলংকার (৮৪তম) চেয়ে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) নির্ধারিত সংজ্ঞা অনুসারে, একটি শিশুর দৈনিক গ্রহণ করা খাদ্যের পুষ্টিমান গড়ে ১ হাজার ৮০০ কিলোক্যালরির কম হলে বিষয়টিকে ক্ষুধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট জনগোষ্ঠীর ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। পাঁচ বছরের নিচে থাকা ৩৬ শতাংশ শিশু খর্বকায় ও উচ্চতার তুলনায় ওজন কম ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ শিশুর। একই বয়সের শিশুদের মধ্যে ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশের আবার উচ্চতা তুলনামূলক কম। এছাড়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যু হার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল বলেন, সূচকের মানদণ্ডে বাংলাদেশের পয়েন্ট বেড়েছে বটে। তবে অন্য দেশের মান আরো দ্রুত হারে বেড়েছে। ফলে বাংলাদেশর অবস্থানের অবনমন হচ্ছে। দেশে অপুষ্টির পকেট মূলত তিনটি— হাওড়, পাবর্ত্য ও চরাঞ্চল। চালের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীলতাও ঝুঁকি তৈরি করছে।
দেশে পুষ্টিহীনতা শুধু খাদ্য সংকটের কারণেই হচ্ছে, বিষয়টি এমন নয় জানিয়ে তিনি বলেন, অপর্যাপ্ত খাদ্যের পাশাপাশি ব্যাধি, আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে আমিষজাতীয় খাদ্য সংগ্রহে অপারগতা, মা ও শিশুর যত্নের অভাব, দুর্বল পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন এবং গুণগত মানসম্পন্ন আর্থিক সম্পদের অভাবের কারণেও এমনটা হচ্ছে।
আইএফপিআরআইয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ভাতের ওপর রির্ভরশীলতা অত্যধিক। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৭৮ শতাংশ ক্যালরি আসে ভাত থেকে। এ জনগোষ্ঠীর ৫৭ শতাংশ প্রোটিন, ৬২ শতাংশ জিংক ও ৪৫ শতাংশ আয়রনেরও জোগান দিচ্ছে চাল। দরিদ্র জনগোষ্ঠী ছাড়াও সার্বিকভাবে দেশের মানুষের পুষ্টি ও প্রোটিন জোগানের একক মাধ্যম চাল।
আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) সেন্টার ফর নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি বিভাগের পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, পুষ্টিহীনতা দূর করা কেবল স্বাস্থ্যগত ইস্যু নয়, এটি কৃষি উৎপাদন ও তার বৈচিত্র্য, নারীর ক্ষমতায়নসহ পরিবারগুলোর আর্থসামাজিক বৈশিষ্ট্যের ওপরও নির্ভর করে। পুষ্টির বিষয়টি এখন শর্করা ও ধাননির্ভর হয়ে পড়েছে। কারণ খাদ্যতালিকায় অন্যান্য, বিশেষ করে প্রাণিজ আমিষ পর্যাপ্ত যাচ্ছে না। তাই ধানের ওপর যেভাবে নজর দেয়া হয়েছে, ডাল ও প্রাণিজ জাতীয় খাদ্য উৎপাদনেও ঠিক একইভাবে জোর দিতে হবে।
Posted ৭:২৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta