শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দেশের এনজিও খাতে নৈরাজ্য চরমে

মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৭
352 ভিউ
দেশের এনজিও খাতে নৈরাজ্য চরমে

কক্সবাংলা ডটকম(২৭ নভেম্বর) ::  দেশের এনজিও (বেসরকারি সেবা সংস্থা) খাতে চরম নৈরাজ্য চলছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতর থেকে আলাদা আলাদা অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। ফলে দেশে কতটি এনজিও কাজ করছে, তার সঠিক হিসাব সরকারের একক কোনো সংস্থার কাছে নেই।

এতে সংস্থাগুলোর কার্যক্রমেও তেমন নজরদারি নেই। ১৯৯০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত বিদেশ থেকে আসা ৬৭ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। এ অর্থ কীভাবে ব্যয় হচ্ছে, তা যথাযথভাবে মনিটর করা হয় না। সব মিলে এ খাতে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলছে।

গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ, চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা, দেশের বাইরে অর্থ পাচার, রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, শ্রমিকদের উসকানি দেয়া এবং জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে অনেক এনজিরও বিরুদ্ধে। এছাড়াও ক্ষুদ্রঋণের নামে গ্রাহকের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে কোনো কোনো বেসরকারি সংস্থা। এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামের প্রান্তিক জনগণ।

গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এনজিওগুলোকে কঠোর নজরদারিতে আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, এনজিওগুলোর কাছে শৃঙ্খলা ফেরানো জরুরি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সবার আগে এনজিওগুলোর ব্যাপারে সরকারি সংস্থার সমন্বয় জরুরি। বিশেষ করে একটি সংস্থার কাছে সার্বিক হিসাব ও নজরদারির দায়িত্ব থাকতে হবে।

তিনি বলেন, এনজিওর নামে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট করছে। অনুমোদন দেয়ার আগেই এসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বিবেচনায় নেয়া উচিত। এতে অনুমোদনের পর বিশৃঙ্খলা এড়ানো সম্ভব। তার মতে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ফৌজদারি অপরাধ করে। ফলে আইন অনুসারে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বর্তমানে দেশে দেশি-বিদেশি এনজিওর সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার। আর সরকারি সংস্থা এনজিও ব্যুরোর হিসাবে দেশে ২ হাজার ৫৬৫ এনজিও কাজ করছে। এর মধ্যে দেশি ২ হাজার ২০৯টি এবং বিদেশি ২৫৬টি। তবে সংস্থাটি দাবি করছে, এ পর্যন্ত তারা ৪৮৪টি এনজিওর লাইসেন্স বাতিল করেছে।

সর্বশেষ তারা চলতি বছরের ৫ জুলাই উইমেন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডব্লিউডিও) নামে একটি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করেছে। এছাড়া ২০১৬ সালে একতা সমাজকল্যাণ সংস্থা নামে একটি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করা হয়। ঢাকা আহ্ছানিয়া মহিলা মিশন, আল আমিন ইয়াতিমখানা, বাংলাদেশ সমাজ উন্নয়ন সমিতি এবং নিউ লাইফ সেন্টারের লাইসেন্সও বাতিল হয়েছে।

সূত্র জানায়, এনজিও ব্যুরোর মাধ্যমে ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে ৭৯ হাজার ৬৪ কোটি টাকা অনুদান অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে ছাড় হয়েছে ৬৭ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট ৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকার অর্থ ছাড় করেছে।

খাতভিত্তিক হিসাবে গত অর্থবছরে যে টাকা ছাড় হয়েছে, তার মধ্যে শিক্ষা খাতে ১ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ১ হাজার ৮৮০ কোটি, স্থানীয় সরকার বিষয়ে ১৩৮ কোটি টাকা, কৃষি, মৎস্য ও পশুপালন খাতে ২১৯ কোটি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ ১২৮ কোটি, তথ্যপ্রযুক্তি ১৫ কোটি, পরিবেশ সুরক্ষা ১৭ কোটি এবং অন্যান্য খাতে ১ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা ছাড়া করা হয়েছে।

ছাড় করা অর্থ কীভাবে ব্যয় হয়েছে, তার কোনো হিসাব এনজিও ব্যুরোর কাছে নেই। কাজগুলো যথাযথভাবে নজরদারি করা হয় না। ব্যুরোর নির্ধারিত অডিট ফার্মের রিপোর্টই ভরসা।

জানতে চাইলে এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহাদাৎ হোসাইন বলেন, শুধু বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে এনজিরও নজরদারি করছি। আমাদের নির্ধারিত অডিট ফার্ম রয়েছে। তিনি বলেন, এনজিওগুলো বিদেশ থেকে যেসব কাজের কথা বলে টাকা আনছে, ওই টাকা সঠিকভাবে খরচ হল কিনা, তা নজরদারি করা হয়। বিশেষ করে জঙ্গি অর্থায়নে কোনো টাকা খরচ হলে তা বার্ষিক অডিট রিপোর্টে মন্তব্য আকারে উল্লেখ করা হয়। সে অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হয়।

অন্যদিকে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষ এমআরএ’র (মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি) হিসাবে ৬৯২টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু সূত্র বলছে, অনুমোদন ছাড়াও ৩০ হাজারের বেশি এনজিও ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করছে, যা একেবারেই অবৈধ।

প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি। অন্যদিকে আইন মানছে না দেশের ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী এনজিওগুলো। ফলে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাত্রা বাড়ছেই।

চাকরি দেয়ার নামে মানুষের টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। বিতরণ করা ঋণেও ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয়া হচ্ছে। ফলে এ পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া ৭৭৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪ বছরে ৮১টির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

এমআরএ সূত্র জানায়, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে সীমাহীন অভিযোগ রয়েছে। তবে মোটা দাগে অভিযোগ ৫টি। এগুলো হল- গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ, উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ, বিতরণ করা ঋণে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয়া, চাকরির প্রলোভন দিয়ে জামানত হিসাবে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়া এবং অনুমোদন ছাড়া ঋণ বিতরণ।

এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় চার বছরে ৮১টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করেছে এমআরএ। একই সঙ্গে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার জন্য দেশের সব জেলা প্রশাসককে চিঠির মাধ্যমে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শাখার সংখ্যা ১৬ হাজার ৪৬৪টি। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ খাতে ঋণগৃহীতার সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ। এদের কাছে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৭৮ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠানের ঋণ ৫৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ক্ষুদ্রঋণের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান শুধু নামেই বেঁচে আছে।

এমআরএ’র পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য জানান, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সুশাসন নিশ্চিতকরণ, পরিচালন ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুমোদন ছাড়া ঋণ বিতরণ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

352 ভিউ

Posted ২:০০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com