রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দেশের চিকিৎসায় আস্থার সংকট : প্রতি বছর বিদেশ পাড়ি দিচ্ছেন তিন লাখের বেশি রোগী

মঙ্গলবার, ২২ মে ২০১৮
480 ভিউ
দেশের চিকিৎসায় আস্থার সংকট : প্রতি বছর বিদেশ পাড়ি দিচ্ছেন তিন লাখের বেশি রোগী

কক্সবাংলা ডটকম(২১ মে) :: রোগের চিকিৎসায় রোগী-চিকিৎসক আস্থার সম্পর্ক বিশেষ কিছু। এ আস্থার উপচার চিকিৎসকের দক্ষতা, সেবিকার শুশ্রূষা। বাংলাদেশে চিকিৎসকের অদক্ষতায় রোগীর আস্থায় চিড় ধরেছে আগেই। সেবিকাদের যেনতেন শুশ্রূষা একে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আস্থারই এ সংকটই রোগীদের বিদেশমুখী করতে মূল ভূমিকা রাখছে।

চিকিৎসার উদ্দেশ্যে উচ্চবিত্তরা পাড়ি দিচ্ছেন সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায়। মধ্যবিত্তরা খুঁজে নিচ্ছেন ভারতের বিভিন্ন ডাক্তারখানা।

বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বলছে, প্রতি বছর শুধু চিকিৎসার জন্যই দেশের বাইরে পা রাখছেন তিন লাখের বেশি বাংলাদেশী। এর বড় অংশই যাচ্ছেন ভারতে, যাদের সংখ্যা বছরে দুই লাখের কম নয়।

চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কেউ নিজ দেশের সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশে পা রাখলে তাকে মেডিকেল ট্যুরিস্ট বলা হয়। এটা শুধু চিকিৎসাসেবা গ্রহণ নয়, গন্তব্য দেশের জন্য এটা আয়েরও বড় উৎস। মেডিকেল ট্যুরিজমের বাজার, কারা যাচ্ছে, কারা তাদের আকৃষ্ট করছে, তা নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা গবেষণা হয়েছে।

এ ধরনের একটি গবেষণা করেছেন ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব আলি ও অস্ট্রেলিয়ার সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. অনীতা মাধেকার।

গবেষণায় তারা বাংলাদেশী রোগীদের বিদেশমুখিতার গতিপ্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করেছেন। দেশীয় চিকিৎসাসেবা বাদ দিয়ে কেন তারা বিদেশমুখী হচ্ছেন, চেষ্টা করেছেন তার কারণ খোঁজার।

বাংলাদেশ থেকে মেডিকেল ট্যুরিজম নিয়ে এক দশক ধরেই কাজ করছেন এ দুই গবেষক। প্রথম পর্যায়ে তারা ভারতে চিকিৎসা নিয়ে ফেরা ছয়টি বিভাগ ও দুটি জেলার ১ হাজার ২৮২ জনের ওপর একটি জরিপ চালান। এদের তথ্য সংগ্রহ করেন ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে ২০১২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত।

দ্বিতীয় পর্যায়ে থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নেয়া ১১৩ জনের ওপর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আরেকটি জরিপ চালান তারা। উভয় জরিপের ফলাফলেই চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতি আস্থার সংকট বিদেশমুখিতার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

প্রথম পর্যায়ের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে বিদেশে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রায় ২৬ শতাংশ চিকিৎসকের অদক্ষতার কথা জানান। নার্সের অদক্ষতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন ১২ শতাংশ।

অপর্যাপ্ত হসপিটাল ব্যবস্থাপনা, রোগীর নিরাপত্তা, উচ্চব্যয়, ভুল চিকিৎসা, নিম্নমানের ওষুধ ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতার কথাও অনেকে বলেন। তবে তাদের সংখ্যাটা নগণ্য।

এ আস্থাহীনতা ক্রমেই বাড়ছে বলে মনে করেন গবেষক অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুব আলি।  তিনি বলেন, ২০১২ সালের পর গত বছরও একই ধরনের একটি গবেষণা আমরা করেছি। সেখানে আমরা দেখেছি, চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতি আস্থাহীনতা আগের চেয়ে বেড়েছে।

দেশে বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের কোনো ধরনের জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না। প্রশিক্ষিত নার্সেরও অভাব রয়েছে।

বিদেশের মতো আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থায় নার্সদের ভালো চোখে দেখা হয় না। আবার নার্সরাও রোগীদের বিষয়ে সময়সচেতন নন। সে কারণে বাংলাদেশী রোগীরা এখন ভারতের বেঙ্গালুরু ও চেন্নাই এবং থাইল্যান্ডে বেশি যাচ্ছেন।

এছাড়া আমাদের দেশে আরেকটি বড় সমস্যা, হাসপাতালগুলোয় বায়োটেকনোলজিস্ট ও ফিজিওথেরাপিস্টের অভাব রয়েছে। বাইরের হাসপাতালগুলোয় এ সমস্যা নেই।

চিকিৎসকদের আস্থায় নিতে না পেরে চোখের চিকিৎসার জন্য সম্প্রতি ভারতে যেতে হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শাহেদ মাহমুদকে। চোখের সমস্যায় প্রথমে দেশের শীর্ষ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখান তিনি। চিকিৎসা নিতে গিয়ে পরামর্শ পান একেক চিকিৎসকের কাছ থেকে একেক রকম। পাশাপাশি চোখের কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের জন্য বড় অংকের চিকিৎসা ব্যয়ের কথাও জানান চিকিৎসকরা।

পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না করেই রোগীকে বারবার আসতে বাধ্য করা হয়। সব মিলিয়ে চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা হারিয়ে শেষমেশ দেশের বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শাহেদ মাহমুদ। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভারতের হায়দরাবাদে এলভি প্রসাদ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নেন তিনি।

সেখানে চোখের চিকিৎসা শেষে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। ভারতে চিকিৎসা নেয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশটিতে চিকিৎসকের সেবার মান তুলনামূলক অনেক ভালো। ব্যয়ও এখানকার চেয়ে কম।

দেশে আস্থা হারিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান নাজমা বেগমও। ২০১১ সালে রাজধানীর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করার পর তার গর্ভাশয়ে টিউমার ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে অস্ত্রোপচার করে তার গর্ভাশয় ফেলে দেয়া হয়। এর বছর চারেক পর আবার অসুস্থ হলে তিনি আর ওই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার ভরসা পাননি। মেডিকেল ভিসায় পাড়ি দেন কলকাতায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন চিকিৎসকের লক্ষ্য হওয়া উচিত রোগীর সন্তুষ্টি অর্জন। শুধু রোগমুক্তি নয়, চিকিৎসকের আচার-ব্যবহার-নৈতিকতাও এর সঙ্গে জড়িত। চিকিৎসক একটু ভালো কথা বললে, সহমর্মী হলে রোগীরা ভালো অনুভব করেন। এটা রোগীর মানসিক শক্তিও বাড়িয়ে দেয়। তবে চিকিৎসকের সবচেয়ে বড় যেটা থাকতে হয়, তা হলো দক্ষতা।

চিকিৎসকদের প্রতি রোগীদের আস্থাহীনতার বিষয়টি মানছেন হেলথ অ্যান্ড হোপ হসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরীও।  তিনি বলেন, এটি ঠিক যে, আমাদের চিকিৎসকদের একটি অংশ জনসাধারণের আস্থাহীনতার শিকার। এ আস্থাহীনতা রোগীদের চিকিৎসার জন্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার জন্য দায়ী।

তবে কম-বেশি মেডিকেল ট্যুরিজম সব দেশেই আছে। কিন্তু যেসব দেশে সামাজিকভাবে সুশাসনের অভাব রয়েছে ও মেডিকেল প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে প্রফেশনালিজম গড়ে ওঠেনি, সেসব দেশ থেকেই মেডিকেল ট্যুরিজম বেশি হয়।

এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ থেকে ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোয় বিপুলসংখ্যক রোগী চলে যান। কিন্তু একটি বিষয় লক্ষণীয়, দেশে প্রতিদিন যে-সংখ্যক রোগী চিকিৎসকের কাছে আসেন, তার একটি অতিক্ষুদ্র ভগ্নাংশ বিদেশে যান। এ হার আরো কমিয়ে আনতে হলে চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রত্যেককে তাদের দায়িত্বের জায়গায় সচেতন হতে হবে।

মেডিকেল ট্যুরিজমের বাজার সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করেছে ভারতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিও (এফআইসিসিআই)। ২০১৫ সালের তথ্যের ভিত্তিতে তারা দেখিয়েছে, প্রতি বছর তিন লাখের বেশি বাংলাদেশী চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাড়ি দিচ্ছেন। এদের বেশির ভাগেরই গন্তব্য ভারত।

পাশাপাশি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায়ও যাচ্ছেন অনেকে। মালয়েশিয়ায় প্রতি বছর চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশীর সংখ্যা ২৫-৩০ হাজার। এরা যাচ্ছেন মূলত ক্যান্সার, চোখ, দাঁত, কিডনি প্রতিস্থাপন, হূদরোগ ও কসমেটিক সার্জারির জন্য।

ভারতে যাওয়া বাংলাদেশীর সংখ্যা দুই লাখের কাছাকাছি। দেশটির ডিরেক্টরেট জেনারেল অব কমার্শিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরেই চিকিৎসার জন্য ভারতে পাড়ি জমান ১ লাখ ৬৫ হাজার বাংলাদেশী। মেডিকেল ট্যুরিজম থেকে ভারতের আয়েরও প্রায় অর্ধেক জোগান দিচ্ছেন বাংলাদেশীরা।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশী রোগীরা ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ব্যয় করেছেন ৩৪ কোটি ৩৫ লাখ ডলার।

রোগীদের এ বিদেশমুখিতার সঙ্গে আর্থিক সঙ্গতি ও মানসিকতাকে বড় করে দেখছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম নাসির উদ্দিন।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের চিকিৎসা বব্যস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। আমাদের চিকিৎসকেরা অনেক মেধাসম্পন্ন। চিকিৎসাসেবায় এখন অনেক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের গবেষণা ও দেশ-বিদেশের চিকিৎসকদের সঙ্গে জ্ঞানের আদান-প্রদান হচ্ছে। বিদেশে যাওয়ার পেছনে আর্থিক সক্ষমতা ও মানসিকতা বেশি কাজ করছে। আর এটা থাকবে। ভালো কিছুর জন্য উন্নত দেশের রোগীরাও চিকিৎসার জন্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে যান।

480 ভিউ

Posted ২:১১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২২ মে ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com