কক্সবাংলা ডটকম(২৭ মে) :: করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ প্রতিষ্ঠান ফাইজার উদ্ভাবিত টিকাকে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, ফাইজার উদ্ভাবিত টিকাকে জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিতে ২৪ মে আবেদন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় । এর পরিপ্রেক্ষিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তথ্য যাচাইবাচাই করে অনুমোদন দেয়।
অনুমোদনের পর দেশে এই টিকা প্রয়োগে আর কোনো বাধা থাকল না।
ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশে টিকাটির লোকাল লিগ্যাল অর্গানাইজেশন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
ফাইজারের ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরুরি ব্যবহার তালিকায় স্থান পেয়েছে।
অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফাইজারের টিকাটি ১২ বছর এবং তার বেশি বয়সী ব্যক্তির জন্য ব্যবহারযোগ্য। দেশে এটি সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সের ব্যক্তিদের দেয়া হবে।
টিকাটি দুই ডোজের। প্রথম ডোজের তিন থেকে চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে। এর সংরক্ষণ তাপমাত্রা মাইনাস ৯০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি। তবে টিকাটি পাঁচ দিন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এবং ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দুই ঘণ্টা ভালো থাকবে।
আগামী ২ জুনের মধ্যে ফাইজারের টিকার অন্তত এক লাখ ছয় হাজার ডোজ দেশে আসবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ন্যায্যতার ভিত্তিতে বিশ্বের সব দেশে করোনার টিকা নিশ্চিতের প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এ টিকা দেয়া হচ্ছে।
কোভ্যাক্সের মাধ্যমে প্রত্যেক দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা করার কথা। কোভ্যাক্স থেকে প্রথম পর্যায়ে এক কোটি ২৭ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু বিশ্বজুড়ে টিকা সংকট দেখা দেয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
৮ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছিল, চলতি মাসের শেষের দিকেই দেশে ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা পৌঁছাতে পারে। দেশে আসা মাত্র এই টিকা প্রয়োগ শুরু হবে।
চীন থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন
চীন থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়ে হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আক্তার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, চীন থেকে আমদানি করা প্রতি ডোজের দাম পড়বে ১০ মার্কিন ডলার বা ৮৫০ টাকা (১ ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। তিনি আরও জানান, জুন, জুলাই ও আগস্টের শেষ দিকে ৫০ লাখ ডোজ করে তিন দফায় এ টিকা আসবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আরও জানান, সরকার চীনের চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ বা সিনোফার্ম থেকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য এ দেড় কোটি টিকা কিনছে। বাণিজ্যিক চুক্তির আওতায় প্রথম চালানে সিনোফার্মের ৫০ লাখ টিকা জুনে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে।
গত ১৩ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে আমরা এক কোটি টিকা কেনার ব্যবস্থা করেছি। খুব শিগগিরই দেশে টিকা আসতে শুরু করবে।’ এর ধারাবাহিকতায় চীনের সিনোফার্ম থেকে টিকা কেনার বিষয়টি গত ১৯ মে অনুষ্ঠিত অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সরকারের ক্রয় প্রস্তাবটি অনুমোদন দেওয়া হলো।
এদিকে রাশিয়া থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের লক্ষ্যে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বৃহস্পতিবার নিজ দফতরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া থেকে টিকা সংগ্রহে কাজ চলছে। আজ মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সব ঠিক থাকলে আগস্টের মধ্যে দুই কোটির বেশি ডোজ ভ্যাকসিন সংগ্রহে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।