কক্সবংলা ডটকম(৮ জানুয়ারি) :: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রকাশ হওয়া ২৬৯ আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ, ৯টিতে জাতীয় পার্টি ও ৫৩টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছে।
সারা দেশ থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে একযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। নওগাঁ-২ আসনে একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ওই আসনে নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছে।
সহিংসতা, নাশকতা, কারচুপি, ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগের মধ্য দিয়ে এদিন বিকাল ৪টায় শেষ হয় ভোট গ্রহণ। তবে অনেক আসনে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের খবরও পাওয়া গেছে।
এদিকে রবিবার ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে দাবি করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনে ‘৪০ শতাংশের মতো’ ভোট পড়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে কিছুটা চ্যালেঞ্জ থাকে। সরকারের যে উইল ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের, সেদিক থেকে সরকারের তরফ থেকে আন্তরিকতা ছিল, সহযোগিতা ছিল। সেই সহযোগিতা পেয়েছি বলেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। তবে আমি বলছি না নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
উল্লেখ্য, নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপিসহ ১৬টি দল নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে রয়েছে। বেশকিছু জায়গায় ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ভোট ঠেকাতে হরতাল ডেকেছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো। বাস-ট্রেনে আগুনে ঘটেছে মানুষের প্রাণহানি।
এসব দলের ভোট বর্জনের মধ্যেই দেশের ২৯৯টি আসনে নির্বাচন শেষ হয়েছে। দেশের ৪২ হাজার ২৪টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। মোট ১৯৬৯ প্রার্থীর মধ্যে ৪৩৭ জন লড়ছেন স্বতন্ত্র হয়ে। দলীয় প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৫৩২ জন।
ভোট গ্রহণের বিষয়ে ইসি সচিব জাহাংগীর গণমাধ্যমকে জানান, বেলা ৩টা পর্যন্ত সাতটি কেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। তবে কোন কোন কেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে তা তিনি জানাননি।
তিনি জানান, এই সময়ের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ভোট পড়েছে ২৫%, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৭%, খুলনা বিভাগে ৩২%, সিলেট বিভাগে ২২%, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৯%, রাজশাহী বিভাগে ২৬%, রংপুর বিভাগে ২৬% এবং বরিশাল বিভাগে ৩১% ভোট পড়েছে।
এবার ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ’র মাধ্যমে আসনভিত্তিক ভোটের তথ্য জানাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন ভবনে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল থেকে সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এদিকে বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে টানা চতুর্থ বার এবং পঞ্চম বার দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার পর তিনি আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। দলকে নতুন ভাবে সুসংগঠিত করেন। নেতৃত্বের ক্যারিশমা দেখিয়ে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২১ বছর পর তিনি আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনেন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলে শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বিজয়ী হলে ১২ জানুয়ারি তৃতীয়বার, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০১৯ সালে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পঞ্চম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন নজির স্থাপন করতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। এর আগে বাংলাদেশে যারা সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের কেউই একটানা ৪ বার এবং পাঁচবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পাননি। এ ছাড়াও ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে বোন শেখ রেহানা, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিককে নিয়ে রাজধানীর সিটি কলেজ ভোটকেন্দ্রে পৌঁছান। অতপর তিনি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ সময় অন্য সাধারণ ভোটারের মতো শেখ হাসিনারও আঙ্গুলে অমোচনীয় কালি দিয়ে মার্ক করে দেওয়া হয়। অতপর ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের ‘বিশ্বাসী বন্ধু’। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে বাংলাদেশের মানুষকে ‘আশ্রয়’ দেওয়ার জন্যও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। ভারত আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের সমর্থন জুগিয়েছিল। ১৯৭৫ সালে যখন তিনি তার বাবা বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান, মা সহ তার পরিবারের অনেকেই হারিয়েছিলেন, তখন তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে সেই সময়ে তাদেরকে পুরো সাহায্য করেছিল ভারত। তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে ভারতীয় সেনা। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে প্রাণ দেন অনেক ভারতীয় জওয়ান। এর পরে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনি দীর্ঘদিন ভারতে কাটিয়েছেন। তিনি সে সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করেন।
আন্তর্জাতিক চাপ এবং দেশের নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির মুখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা ছিল কার্যত চ্যালেঞ্জ। শেখ হাসিনা সেই চ্যালেঞ্চ দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। বিশেষ করে ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের’ লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞার চাপ, গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং শ্রমিক অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘শ্রমনীতি’ ঘোষণার পর ‘বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার’ ভয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়ার অংশগ্রহণমূলক বিশ্ব মডেলের নির্বাচনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ, কানাডাসহ অনেক দেশের প্রভাবশালী এমপি ও নেতাদের বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেয়ার প্রস্তাবনা মোকাবিলা শেখ হাসিনা করেছেন দৃঢ়তার সঙ্গে। বিশ্ব রাজনীতির গ্রুপিং লবিং এবং ভূ রাজনৈতিক শক্তির মহড়ায় তিনি ভারত, রাশিয়া ও চীনের সমর্থন নিয়েছেন নেতৃত্বের যোগ্যতার মাধ্যমেই। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ পৃথিবীর প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থাগুলো চাপ থাকলেও ইতোমধ্যেই নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ওআইসি, রাশিয়া, ফিলিস্তিন ও গাম্বিয়ার পর্যবেক্ষকরা।
রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে বিদেশী পর্যবেক্ষকরা সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ দেখে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা ভালো নির্বাচনী প্রক্রিয়া দেখেছি। ভোটার এবং প্রার্থীর এজেন্টদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, আমরা সন্তুষ্ট। পর্যবেক্ষক হিসেবে সহিংসতা কোনো চিহ্ন আমাদের চোখে পড়েনি। আমি অবাক হয়েছি, দোকান-পাট বন্ধ কেন! সড়কে কোনো মানুষ দেখা যায়নি। শহর ছিল শান্ত। কম ভোটার উপস্থিতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে পর্যবেক্ষকরা বলেন, ১৫ বা ১৬ শতাংশ ভোট পড়লে সেটা নির্বাচন আয়োজকদের জন্য বার্তা।
Posted ২:০৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৮ জানুয়ারি ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta