কক্সবাংলা ডটকম(৮ সেপ্টেম্বর) :: দেশের অর্থনীতির যে বিস্তৃতি, সে অনুযায়ী প্রয়োজন না থাকা সত্তে¡ও শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১২ সালে অনুমোদন দেওয়া হয় নতুন ৯টি ব্যাংকের। এর পরও থেমে থাকেনি নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদান। ওই ৯টি ব্যাংকের পর দেওয়া হয় সীমান্ত ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লাইসেন্স।
যদিও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক অতফসিলভুক্ত থেকে তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার আরও একটি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক; লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও দুটি নতুন ব্যাংকের।
সূত্র জানায়, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে তফসিলভুক্ত করার পর দেশে ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৮টি। এর পর পুলিশ সদস্যদের জন্য কমিউনিটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার পর তফসিলিভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা হয় ৫৯টি। বাংলা ব্যাংক ও পিপলস ব্যাংক নামে আরও দুটি ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া চলমান আছে।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় পুলিশ কল্যাণ ফান্ডের মালিকানাধীন কমিউনিটি ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) দেওয়া হবে। উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে এলওআই গ্রহণ করে তা যথাযথভাবে পর্ষদে উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কমিউনিটি ব্যাংকের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ। আরও দুটি ব্যাংকের আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। সরকারের ইচ্ছায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ লাইসেন্স প্রদান করছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরও নানামুখী চাপ রয়েছে বলে জানা গেছে। এগুলোর পক্ষে সরকারের ওপর মহলে তদবির চলছে। এর মধ্যে একটি ব্যাংকের পক্ষে খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সুপারিশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি পত্র পাঠিয়েছেন।
সূত্র জানায়, বেঙ্গল গ্রুপ বাংলা ব্যাংক নামে একটি ব্যাংকের জন্য আবেদন করেছে। ব্যাংকটির লাইসেন্স দিতে অর্থমন্ত্রীরও সুপারিশ রয়েছে। এ ছাড়া অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে পিপলস ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রধান উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এমএ কাশেম। চট্টগ্রামের স›দ্বীপের এ বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলা ব্যাংক ও পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিগগিরই এ দুটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হবে। তারা লাইসেন্সপ্রাপ্তির যাবতীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে রেখেছেন। প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়ার পরপরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আশির দশকের শুরুতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়। এরশাদ সরকারের সময় ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে ৯টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে বিএনপি সরকারের আমলে ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে ৮টি, তৃতীয় পর্যায়ে গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সময়কালে ১৩টি এবং সর্বশেষ চতুর্থ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়।
পরে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) মালিকানায় সীমান্ত ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে তফসিলিভুক্ত করা হয় গত মাসে। গত মঙ্গলবার পুলিশ সদস্যদের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয় কমিউনিটি ব্যাংকের।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ছোট দেশ; সেই তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি, যা কমিয়ে আনতে হবে। এ জন্য মার্জার আইন করার কথা বলা হলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কয়েকটি ব্যাংক মার্জার করলে একটি বড় প্রতিষ্ঠান করা সম্ভব। প্রতিষ্ঠানের ইকুইটি বেশি থাকলে খরচ কম হয়। সে ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম সুদে ঋণ বিতরণ সম্ভব হবে।
এদিকে দেশে নতুন আর কোনো ব্যাংকের প্রয়োজন আছে কিনা, এ বিষয়ে গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে জরিপ চালায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)।
স¤প্রতি প্রকাশিত ওই জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ৯৫ শতাংশ ব্যাংকারই চান না নতুন কোনো ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হোক। নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে মত দিয়েছেন ৫৫ শতাংশ ব্যাংক গ্রাহক।
Posted ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta