কক্সবংলা ডটকম(১৭ জানুয়ারি) :: সংসদ নির্বাচন শেষ করে নতুন সরকারের পথচলা শুরু হয়ে গেলেও বিদেশিরা নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তাদের সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে এখনো উদ্বেগ কাটেনি আওয়ামী লীগের। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব দাবি করেন, পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র এখনো সুদৃষ্টিতে নেয়নি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে।
ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলার মতো বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে দেশটি এমন আশঙ্কা এখনো দূর হয়নি নতুন সরকারের। পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের ভালো অবস্থানকে দুর্বল করতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা থাকতে পারে এ আশঙ্কাও সরকারের ভেতরে রয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নতুন সরকার গঠনের পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সেই আশঙ্কার ইঙ্গিতও রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের চাপকে পাশ কাটিয়ে চললেও সরকারের দায়িত্বভার নিয়ে দেশটিকে এড়িয়ে চলার নীতিতে থাকতে চান না তারা। শক্তিধর এ দেশটির সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।
এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী দুজনকে সরিয়ে নতুন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়ে নতুন মন্ত্রিসভায় রাজনৈতিক নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, দেশের পররাষ্ট্রনীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এটাই অনুসরণ করবে সরকার। তিনি বলেন, ‘আশা করি সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে।’
নাম প্রকাশ না করে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘নতুন সরকার নতুন পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করবে। আশা করি, নির্বাচনের আগের অবস্থান থেকে সরে আসবে দেশটি।’ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা বিদেশিদেরও প্রত্যাশা ছিল। তাই নির্বাচন ঘিরে নানা প্রশ্ন তুলে সরকারের সঙ্গে কোনো দেশেরই সম্পর্কের অবনতি ঘটবে না।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেন, সম্পর্কোন্নয়নে নতুন ছকে চলার পরিকল্পনা সাজালেও এরই মধ্যে নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফাঁকফোকর খুঁজে বের করার উদ্যোগ সরকারকে কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলেছে। তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সুদৃষ্টি পেতে এখন প্রয়োজনে ‘তোষণ’ নীতিতে যাওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে নতুন সরকারকে। কারণ, ৫ বছর নির্বিঘে্ন দেশ পরিচালনা করতে চায় আওয়ামী লীগ।
এই নেতারা দাবি করেন, ভোটের হার নিয়ে বিদেশি বিশেষজ্ঞ দলের নানা তৎপরতা মূলত শেখ হাসিনার নতুন সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য ইস্যু সৃষ্টির চক্রান্ত। ভোট ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে দেশটি ভুলত্রুটি খুঁজে সরকারকে অস্থির করে তুলতে নতুন চেষ্টায় নেমেছে। তাই ভোটের হার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। ভোটের হার নিয়ে বিদেশি শক্তি নতুন খেলায় যুক্ত হচ্ছে বলেও তারা মনে করেন।
গত সোমবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তাদের কাছে ভোটের হার জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিশেষজ্ঞ দল, যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই)।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এ বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। তাদের দাবি, সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যবেক্ষক মহল নির্বাচন ও পরিবেশ নিয়ে খুবই ইতিবাচক মনোভাব ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। কিন্তু দেশের একটি বিশেষ মহল ভোটের হার নিয়ে উসকানোর চেষ্টা করছে। একটি ইস্যু সামনে আনতে চায় তারা। এটা নিয়ে নতুন সরকারকে বিব্রত করা, বিদেশের সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলাই মূল লক্ষ্য দেশি-বিদেশি এই চক্রের।
ক্ষমতাসীন দলের মধ্যমসারির একাধিক নেতা বলেন, ইইউর বিশেষজ্ঞ দলের জানতে চাওয়াকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না তারা। যুক্তরাষ্ট্রের আইআরআই ও এনডিআই ইস্যু বানানোর চেষ্টা করছে বলেই ধরে নিয়েছেন তারা।
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা উদ্বেগের কথা জানালেও স্বস্তি প্রকাশ করছেন এই বলে, দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। ফলে ইস্যু বানানোর চক্রান্তেও ব্যর্থ হবে সরকারের দেশি-বিদেশি প্রতিপক্ষ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছেন। চক্রান্তের আশঙ্কা করে ভোট শেষের চার দিনের মাথায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ এবং এক দিন পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠন করা হয় বলে আলোচনা আছে।
তবে তড়িঘড়ি করে সরকার গঠনের বিষয়টি নাকচ করে গত ১৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকার গঠন করলে কী করবেন, বিরোধী দলে গেলে কী করবেন সেসব আগেই ঠিক করা ছিল। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সময় নষ্ট করতে চান না।
ইইউর বিশেষজ্ঞ দল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, আইআরআই ও এনডিআইয়ের প্রতিনিধিরাও ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে ভোটকেন্দ্রিক যেসব প্রশ্ন করেছেন, তাতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ভিন্ন চক্রান্ত রয়েছে বিদেশিদের। তিনি বলেন, ‘ইসির সঙ্গে তাদের বৈঠকের বিষয়ে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে মূলত বিশেষজ্ঞ দলের উদ্দেশ্য হলো ইস্যুর সৃষ্টি করা।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ইইউর ‘টেকনিক্যাল’ দল, আইআরআই ও এনডিআইয়ের প্রতিনিধিরা প্রায় ৪২ শতাংশ ভোটের হার দেখানো নিয়ে মূলত তাদের জানা ও বোঝার চেষ্টা করছেন বারবার। সহিংসতামুক্ত ভোট করার পর অনেকটাই আশ্চর্য হয়ে গেছে সরকারের দেশি-বিদেশি প্রতিপক্ষ। ভোট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফলতাকে যেকোনো মূল্যে প্রশ্নবিদ্ধ করাই হলো তাদের মূল আগ্রহ।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। পরদিন ইসি জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ৮০ শতাংশ। ভোটের দিন ও পরের দিনের দেখানো ভোটের হার যেভাবে ঘোষণা করা হয়, তাতে সন্দেহ ও প্রশ্ন দেখা দেয়।
ভোটের দিনদুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সারা দেশে দুপুর ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত গড়ে সাড়ে ১৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে দ্বিতীয় দফা ব্রিফিংয়ে সচিব জানান, বেলা ৩টা পর্যন্ত ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল ৫টার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোটের হার ৪০ শতাংশ। সিইসি বলেন, তবে এটা নিশ্চিত নয়, এটার কিছুটা ব্যত্যয় হতে পারে। ২৬ শতাংশ থেকে এক লাফে ৪০ শতাংশে চলে যাওয়া সন্দেহ ও প্রশ্ন ওঠে।
Posted ৩:৪০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta