আব্দুল হামিদ,নাইক্ষ্যংছড়ি(৯ নভেম্বর) :: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের (আইসিডিপি) মাধ্যমে ইউনিসেফ শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা ও পুষ্টি কার্যক্রমে সহায়তা করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সরকার ও ইউনিসেফের যৌথ অর্থায়নে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি ১৭৯ টি পাড়া কেন্দ্রে স্বাস্থ্য সেবা ও পুষ্টি কার্যক্রম চলছে।
সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের (আইসিডিপি) বান্দরবান জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্লু প্রু জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ববধানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ৩ পার্বত্য জেলায় পাড়া কেন্দ্রের মাধ্যমে নারী ও শিশুদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রকল্পের পাড়া কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর পুষ্টি, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ও নিরাপদ পানির ব্যবহার, শিশু ও নারীর অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাছাড়া পাড়া কেন্দ্রের আওতাভুক্ত কিশোর ও মহিলাদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ানো বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৭৯টি পাড়া কেন্দ্রে ৩-৫ বছর বয়সি ২৪৬৬ জন এবং ৫-৬ বছর বয়সি ১১৪৯ জন সহ সর্বমোট ৩৬১৫ জন শিশু শিক্ষা গ্রহণ করছে।
উত্তর হলুদ্যাশিয়া পাড়া কেন্দ্রের সভাপতি অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাফর আলম জানান, পাড়া কেন্দ্রের সচেতনতা কার্যক্রমের দরুন এলাকায় স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। খাবার গ্রহণের আগে হাত ধোয়ার অভ্যাস সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ও নিরাপদ পানি ব্যবহারের গুরুত্ব পাড়াবাসী বুঝতে পেরেছে।
পাড়া কেন্দ্রের পাড়াকর্মী সেলিনা আক্তার বেবি জানান, পাড়ায় নিয়মিত উঠান বৈঠকের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে এবং শিশুদের পুষ্টিহীনতা দূর করার লক্ষে পাড়াকেন্দ্রের আঙ্গিনায় শাক-সবজি বাগান চাষাবাদের পর শিশুদের পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়।
ইউনিসেফের ৩ পার্বত্য জেলার প্রোগ্রাম অফিসার মংঞোই জানিয়েছেন, আইসিডিপি প্রকল্পে ইউনিসেফ অর্থ সহায়তা প্রদান করছে। প্রকল্পের নিজস্ব কার্যক্রমের পাশাপাশি পাড়া কর্মীগণ মা ও শিশুদের জন্য ভিটামিন, পুষ্টি, ইপিআই সহ গৃহীত জাতীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে।
এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় দিবসে পাড়া কর্মী ও শিশুরা খেলাধুলা সহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে থাকে। মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ছোট ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত আইসিডিপি পাড়া কেন্দ্রে কোমলতি শিশুদের পাঠদানের মাধ্যমে স্কুলমুখী করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে আইসিডিপি পাড়া কেন্দ্র। উক্ত কেন্দ্রের কর্মীদের আরো সম্মানী ভাতা বৃদ্ধির জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। যাহাতে করে কর্মীরা কোমলতি শিশুদের পাঠদানে উৎসাহিত হয়।
উপজেলার প্রকল্প ব্যবস্থাপক এ.কে.এম রেজাউল হক জানান, সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন উপজেলায় অবস্থিত পাড়াকেন্দ্রগুলি যথাযথ পরিদর্শণ, পাড়াকর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, মাসিক ক্লাস্টার প্রোগ্রাম, স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম, কমিউনিটি মুবিলাইজেশন কর্মশালা ও জাতীয় প্রোগ্রামের অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিশুদের মেধাবিকাশে কাজ করে যাচ্ছি।
পাশাপাশি আমার আওতাধীন পাড়াকর্মী ও সিনিয়র কর্মীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে সঠিকভাবে কেন্দ্র পরিচালনা করে আসছে। আগামীতে দূর্গম পাহাড়ের অবস্থিত জনসাধারণের মাঝেও নতুন করে পাড়াকেন্দ্র নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলে জানান।
সিভিল সার্জনের পক্ষে বান্দরবান সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডাঃ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ইউনিসেফের সহযোগিতায় গরীব গর্ভবতী মা ও নবজাতক শিশুদের স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান করা হয়। গরীব রোগিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য যাতায়াত ভাড়া ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় এন.জেড একতা মহিলা সমিতি লামা বাস্তবায়নে শিশুদের ভিটামিন সমৃদ্ধ বিস্কুট প্রদান করা থাকেন।
এ বিষয়ে এন.জেড একতা মহিলা সমিতির নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানান, উপজেলায় সর্বমোট ১৭৯টি পাড়া কেন্দ্রে মধ্যে ১৭৩টি কেন্দ্রে ৫০ গ্রাম ওজনের ভিটামিন সমৃদ্ধ বিস্কুট খাওয়ানো হয়। আগামীতে বাকী কেন্দ্র গুলোকেও ভিটামিন সমৃদ্ধ বিস্কুট প্রোগ্রামের আওতায় আনা হবে। তাই ভিটামিন সমৃদ্ধ বিস্কুটের যথাযথ সংরক্ষণ ও নিয়মিত শিশুদের খাওয়ানো পরামর্শ দেন।
Posted ২:৪১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ নভেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta