কক্সবাংলা ডটকম(২৩ ফেব্রুয়ারি) :: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২৩ ফেব্রুয়ারি সূচকের পতনে গত দেড় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে । এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২২৩ টাকা। এর আগে জানুয়ারির ৩ তারিখে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১৯৮ কোটি টাকা। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩১১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭টির, দর কমেছে ১৫০টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫৪ টির।
শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, এসিআই বা স্কয়ার ফার্মা সবচেয়ে ভালো কোম্পানি। কিন্তু দামি এই কোম্পানিগুলোর শেয়ার এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম এখন সর্বনিম্ন মূল্যে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে এর নিচে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমার সুযোগ নেই। ফলে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী শেয়ার আর বিক্রি করতে পারছেন না।
জানা গেছে, এখন ঘুরে ফিরে কারসাজি চক্রের সদস্য হিরু, জামান, মিজান, রফিক প্রমুখ এই লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত। সাধারণ ক্রেতারা এখন বাজারের লেনদেনে নেই।
ডিএসই’র এক সদস্য জানান, বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং ডলার সংকটও শেয়ার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর টাকা আটকে গেছে। শেয়ার বিক্রি করতে না পারায় তারা এখন নতুন বিনিয়োগ করতে পারছেন না। দামি শেয়ারগুলোর দাম কমে ফ্লোর প্রাইসে চলে এসেছে। পরে আর ফ্লোর প্রাইসের ওপরে ওঠেনি। ফ্লোর প্রাইসে প্রতিদিন লাখ লাখ শেয়ার বিক্রির আদেশ আসলেও ক্রেতা নেই।
বাজারে চিত্র বলছে, অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের লেনদেন হচ্ছে না। তথ্যমতে, এই বাজারের লেনদেন একেবারেই তলানিতে নেমে এসেছে, সূচক পড়ছেই। এতে সবার মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা বাড়ছে।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছে মাত্র ২২৩কোটি টাকার শেয়ার। ২০০৭ সালেও দেশের পুঁজিবাজারে গড়ে ২০০ কোটি টাকা লেনদেন হতো। লেনদেনের হিসাব করলে বাজার ফিরে গেছে ১৬ বছর আগের অবস্থানে।
এ প্রসঙ্গে ডিএসই’র সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার বিমুখ হবেন।’
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘কমিশন ভালো কিছু করতে পারে না অথচ মার্কেটে ইন্টারফেয়ার করছে। তারা কেন ফ্লোর প্রাইস দিয়েছে? সূচক পড়ে গেলে তার জন্য কমিশন দায়ী নয়, সেটা ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের বিষয়। সূচকের পড়তির বিষয়ে কমিশনের এত দুশ্চিন্তা কেন? এখন তো বাজার অচল।’
তার কথায়, ‘ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। টার্নওভার বেড়ে যাবে। অনেকে লোকসান দিয়েও শেয়ার বেচতে রাজি আছে। অনেক কোম্পানির আয় খারাপ হয়েছে। সেগুলোর দর নিচে যাবে না? কিন্তু ফ্লোর প্রাইসের জন্য আটকে আছে। কেনার লোক নেই।’
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন,করোনা ভাইরাসসহ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব ও অব্যবস্থাপনার কারণে পুঁজিবাজারের লেনদেন গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে। এ অবস্থায় বাজারে গতি আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। পুঁজিবাজারকে নিজের গতিতে চলতে না দিয়ে কৃত্রিমভাবে ভালো রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সেই উদ্যোগ ভেস্তে গেছে।
পুঁজিবাজারে লেনদেন একেবারেই তলানিতে নেমে এসেছে, সূচক পড়ছেই। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা আটকে গেছে। সবার মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা বিরাজ করছে।এভাবে চলতে থাকলে মানুষ পুঁজিবাজার থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি জোর করে পুঁজিবাজার ভালো রাখার যেসব চেষ্টা করেছিল, তার সবগুলোই ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রধানসহ সংস্থাটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ছোট-বড় বিনিয়োগকারীদের অভিযোগের শেষ নেই। তারা বলছেন, বিএসইসির কর্তাব্যক্তিরা শুধু বড় বড় কথাই বলে গেছেন, কাজের কাজ কিছুই করেননি। সে কারণেই বিনিয়োগকারীরা এখন সব হারিয়ে পথে বসেছেন।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার লেনদেন হয়েছে মাত্র ২৫৭ কোটি টাকার শেয়ার। ২০০৭ সালে দেশের পুঁজিবাজারে গড়ে ২০০ কোটি টাকা লেনদেন হতো। লেনদেনের হিসাব করলে বাজার ফিরে গেছে ১৫ বছর আগের অবস্থানে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পুঁজিবাজারকে নিজের গতিতে চলতে না দিয়ে কৃত্রিমভাবে ভালো রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। সেটা করতে গিয়ে বাজারের কারসাজি চক্রকে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছে। আবার কোম্পানিগুলোর সুশাসনসহ বাজারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে এড়িয়ে বেশি মনোযোগ দেয়া হয়েছে পতন ঠেকানোর দিকে। কিন্তু একদিকে অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাসসহ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব, অন্যদিকে অব্যবস্থাপনার কারণে পুঁজিবাজারের লেনদেন গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে। সব মিলিয়ে দেশের পুঁজিবাজারের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা নেই বললেই চলে।
কেন ভালো শেয়ারগুলোর লেনদেন হচ্ছে না?
সাধারণত যে শেয়ারের দাম কমে বিনিয়োগকারীরা সেটি কেনে। শেয়ারের দাম বাড়লে বা লাভ হলে বিক্রি করে দেয়। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং ডলার সংকটের কারণে কয়েক মাস ধরে এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়ছে না। আবার ফ্লোর প্রাইসের কারণে দাম কমাও সম্ভব নয়।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বা এসিআই’র মতো বেশি দামের শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের আওতায় আসায় এই বিপত্তি দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশীদ লালী বলেন, ‘ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বা এসিআই বা স্কয়ার ফার্মা দামি শেয়ারগুলোর অন্যতম। ফ্লোর প্রাইসের কারণে দামি এসব শেয়ার কিনে বিপুল পরিমাণ টাকা আটকিয়ে রাখার মতো ক্রেতা নেই।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘এখন যদি কেউ দামি এই শেয়ারগুলো কেনে, আগামী এক মাসেও বিক্রি করতে পারবে না। তাহলে কেন কিনবে।’
তাহলে ফ্লোর প্রাইস কেন তুলে দেওয়া হচ্ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন বাজার ডাউন। ফলে ফ্লোর প্রাইস তুলে নিলে ফোর্স সেল বাড়বে। সেটা আরেকটা বিপদের কারণ। এ কারণে ফ্লোর প্রাইস তোলা সম্ভব হচ্ছে না।’
এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ফোর্স সেল সামাল দেওয়ার জন্যই ফ্লোর প্রাইস রাখা হয়েছে। অর্থাৎ শেয়ার বাজারের স্বাস্থ্য ভালো হলে তবেই ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে। ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হতাশ বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। ফ্লোর প্রাইস নিশ্চয়তা দেয়, শেয়ার দর এর নিচে আর নামবে না। এটি দৃশ্যত বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। ফলে সূচকও একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে যায়।
যদিও শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে একদিকে শেয়ার বাজারের স্বাভাবিকতা নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে কারসজি চক্র এর সুবিধা নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে কারসাজিচক্রের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শক্ত কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
কারসাজি ঠেকাতে পারেনি কমিশন
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সমালোচনা করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন। অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেনের কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যে প্রত্যাশা নিয়ে বর্তমান কমিশন গঠন হয়েছিল, তার কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিশন কোনটা মেইনটেইন করেছে? মার্কেট তো আস্থার জায়গা। একটি জায়গায় বিশ্বাস নিয়ে আসতে পেরেছে? সুশাসন নিয়ে এসেছে? আইনের শাসন বাস্তবায়ন করতে পেরেছে? কাউকে সাজা দিয়েছে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ই দেখা যাচ্ছে অনেক কারসাজি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে। তাদের কারসাজির কারণে সেসব শেয়ারের দাম বাড়ছে। আর অন্য শেয়ারের দাম কমছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ পুরো বাজার।’
তিনি বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠান থেকে যখন একটা শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হয়, তখন সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। চাকরি চলে যাওয়াটা তো সমাধান না। যে শেয়ারটা ডাম্পিং হয়েছে সেটা তো ওই প্রতিষ্ঠানের ফান্ডকে ব্লক করে দিয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারী যারা এই শেয়ারটা কিনেছিলেন তারাও ব্লক হয়ে গেছেন।
‘এভাবে যদি বিভিন্ন শেয়ার ও ফান্ড ব্লক হয়ে যায়, সেটা তো আর লিকুইড হয়ে বাজারে আসে না। এতে করে একদিকে যেমন ফান্ড আসছে না, অন্যদিকে গুটিকয়েক শেয়ার নিয়েই কারসাজি চলছে। কিছু শেয়ার অতিমূল্যায়িত হচ্ছে।
‘তারপরও তেমন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। এতে ৩৫ টাকার শেয়ার হয়ে যায় ৩০০ টাকা, ৮০ টাকার শেয়ার হয়ে যাচ্ছে ১ হাজার টাকা। সবকিছু মিলিয়ে বাজারে যে তারল্যটা থাকার কথা তা থাকে না। তাই বাজারে এই নেতিবাচক প্রভাব।’
কোম্পানির সুশাসন, হিসাব ব্যবস্থা ঠিক হয়নি
করপোরেট গভর্ন্যান্স বাস্তবায়নের কথা বললেও তার প্রতিফলন দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেন মিনহাজ মান্নান ইমন। প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আইপিওর কোনো পরিবর্তন হয়েছে? ব্যালান্স শিটে পরিবর্তন হয়েছে? কোম্পানির মালিকদের চরিত্র সংশোধন হয়েছে? অপরাধের সাজা হয়েছে?’
সুশাসন প্রতিষ্ঠার আশা দিয়েও রাখতে পারেনি
শিবলী কমিশনের আশার বুলিতে কিছু সময়ের জন্য বাজার চাঙ্গা হলেও পরবর্তী সময়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর কারণ উল্লেখ করে মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের অধীনে যে কারণে বাজার বেড়েছিল, সেগুলো কী কী ছিল? কতগুলো আশার বেলুন তৈরি করেছিলেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করবেন।’
বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি
ডিএসই’র সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন আরও বলেন, ‘তারা কীভাবে বললেন যে ২২ হাজার কোটি টাকা বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। কোথায় সেটা? স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড পৃথিবীর কোথায় আছে? ডিভিডেন্ড পে করিনি, সেই টাকাটা নিয়ে যাবেন। সেটা কোথায় দেবেন? এভাবে চলতে থাকলে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারবিমুখ হবেন।
ব্রোকারেজ হাউস ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ সাদিক বলেন, ‘সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দেশের পুঁজিবাজারের ওপর কোনো বিশ্বাস নেই। অনেক দিন ধরে ফ্লোর প্রাইসে শেয়ারটা পড়ে আছে। মানুষ বিক্রি করতে পারছে না, কিনতেও পারছে না। যা কিছু লেনদেন হচ্ছে সেটা হচ্ছে ব্লক মার্কেটে। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ আর পুঁজিবাজারের নাম নেবে না।’
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফিন্যান্সের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘মানুষজন বিপদে পড়ে গেছে। পুঁজিবাজার আছে, কিন্তু মানুষ শেয়ার বিক্রি করতে পারছে না।’
সূচকের পতন ঠেকানোর চেষ্টা কাজ করেনি
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঠেকা দিয়ে সূচকের পতন ঠেকানোর প্রচেষ্টা রয়েছে বর্তমান কমিশনের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘কমিশন যদি ভালো কিছু না-ও করতে পারে, তাহলে মার্কেটে ইন্টারফেয়ার করে কেন? তারা কেন ফ্লোর প্রাইস দিয়েছে? সূচক পড়ে গেলে তার জন্য কমিশন দায়ী নয়, সেটা ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের ব্যাপার। সূচকের পড়তির ব্যাপারে কমিশনের এত দুশ্চিন্তা কেন? এখন তো বাজার অচল।’
বড় সমস্যা ফ্লোর প্রাইস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক শাব্বির আহমদ বলেন, ‘বড় একটি প্রভাব পড়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে। ইউরোপ থেকে আমেরিকা সব জায়গায় মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে এসেছে। মানুষ বিনিয়োগ না করে টাকা নিজের কাছে রেখে দিচ্ছে।’
আইডিএলসি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুদ্দীন বলেন, ‘বাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এখনকার ফ্লোর প্রাইস। এমনিতে তো একটি অর্থনৈতিক সমস্যা আছেই, সেটা তো সারা বিশ্বেই আছে। অন্যান্য দেশে যেটা হয়েছে বাজার কমে গেছে। বায়ার চলে এসেছে।
‘আমাদের দেশে অর্থনৈতিক সমস্যার রিফ্লেকশন বাজারে ঠিকমতো আসেনি। বাজার মনে করছে শেয়ারের দাম আরেকটু কমবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। তারা মনে করছেন, সামনে ডলারের দাম আরও বাড়বে। পাশাপাশি ফ্লোর প্রাইস থাকায় তারা বাজার থেকে সরে যাচ্ছেন।’
ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার পরামর্শ
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। টার্নওভার বেড়ে যাবে। অনেকে লোকসান দিয়েও শেয়ার বেচতে রাজি আছে। ‘অনেক কোম্পানির আয় খারাপ হয়েছে। সেগুলোর দর নিচে যাবে না? কিন্তু ফ্লোর প্রাইসের জন্য আটকে আছে। কেনার লোক নেই।’
যা বললেন বিএসইসি চেয়ারম্যান
বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন,আমরা বিষয়গুলোর ওপর নজর রাখছি।’ তার ধারণা এখন ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দিলে অনেক ফোর্সড সেল হয়ে যাবে। ফোর্সড সেল কোনোভাবে বন্ধ করার রাস্তা খুঁজছেন বলেও জানান তিনি।
‘এই সপ্তাহটা যাক, আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা বিষয়গুলোর ওপর নজর রাখছি। এখন ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দিলে অনেক ফোর্সড সেল হয়ে যাবে। ফোর্সড সেলটা কোনোভাবে বন্ধ করার বুদ্ধি যদি পেতাম তাহলে ভালো হতো।
‘চিন্তাভাবনা করছি, এই সপ্তাহটা সময় দেই। আসলে আমরা তো সব দেখতে পারব না। আমরা হয়তো পিই রেশিও দেখতে পারি। ডিভিডেন্ড পে-আউট রেশিও দেখতে পারি। কিন্তু লেনদেন নিয়ন্ত্রণ কীভাবে করতে পারব? সবাই আমাদের দিকে আঙুল তোলে।’
Posted ১২:০১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta