বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ শ্রী যোগেশচন্দ্র ঘোষের যেভাবে মৃত্যু হয়

বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯
1587 ভিউ
সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ শ্রী যোগেশচন্দ্র ঘোষের যেভাবে মৃত্যু হয়

কক্সবাংলা ডটকম(৪ ডিসেম্বর) :: বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বুকের পাঁজর ক্ষতবিক্ষত করার পর বুলেটের গুলিতে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ শ্রী যোগেশচন্দ্র ঘোষের…..শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর বহু দেশে “সাধনা ঔষধালয়” নামটি এখনো জনপ্রিয়। নামমাত্র খরচে সাধারণ মানুষের রোগমুক্তি ঘটাতে ১৯১৪ সালে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী গেন্ডারিয়ায় ৭১ দীননাথ সেন রোডে বিশাল এলাকা নিয়ে অধ্যক্ষ শ্রী যোগেশ চন্দ্র ঘোষ গড়ে তোলেন ‘সাধনা ঔষধালয়’। ভারতবর্ষে আয়ুর্বেদের ইতিহাস ৫ হাজার বছরের পুরনো হলেও এ শাস্ত্রের প্রথম লিখিত বই ‘চরক সংহিতা’।

বইটির রচয়িতা চরকের জন্ম ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। আজ থেকে হাজার বছর আগে যখন পশ্চিমা বিশ্বে “হাসপাতাল” সম্পর্কে ধারণা ছিল না, তখন এই “চরক সংহিতা” বইতে আয়ুর্বেদের বেশ কয়েকটি আরোগ্যশালার তথ্য পাওয়া যায়। এতে বুঝা যায়, আয়ুর্বেদ সাধারণ মানুষের চিকিৎসা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত তথা সমাদৃত ছিল। এরপর হাজার হাজার বছর পার হওয়ার পর আয়ুর্বেদ চিকিৎসার জনপ্রিয়তা যখন নিম্নগামী, তখন এই চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সর্বসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে কাজ শুরু করেছিলেন শ্রী যোগেশ চন্দ্র ঘোষ। শিক্ষাবিদ ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রবিশারদ, সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী যোগেশ চন্দ্র ঘোষ ১৮৮৭ সালে শরীয়তপুর জেলার গোঁসাইরহাট উপজেলার ধীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ১৯০২ সালে ঢাকা জুবিলী স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, ১৯০৪ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে এফএ, ১৯০৬ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ কোচবিহার থেকে বিএ এবং ১৯০৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে এমএ পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে পড়ার সময়ে সেখানে শিক্ষক হিসেবে পান প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়কে। প্রফুল্লচন্দ্র রায়ই তাঁকে দেশজ সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের জ্ঞানকে কাজে লাগানোর জন্য ব্যাপক উৎসাহিত করেন।

১৯০৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করার পর উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ইংল্যান্ড চলে যান। দেশে ফিরেই যোগেশচন্দ্র ঘোষ যোগ দেন ভাগলপুর কলেজে। সেখানে একটানা চার বছর রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক হিসেবে গৌরবের সঙ্গে কাজ করেন। পরে চলে আসেন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে। প্রায় ৪০ বছর তিনি জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতা করেন। সেখানে তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে বাংলাদেশের বহু হিন্দু পরিবার ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পদ ফেলে দেশ ত্যাগ করে ভারত চলে যায়, কিন্তু যোগেশচন্দ্র ঘোষ তা করেননি। তিনি দেশের মায়ায় বাঁধা পড়ে এখানেই থেকে যান। বারবার তাঁর জীবনে নানা দুঃসময় এসেছে, তবু কেউ তাঁকে নিজ দেশ ত্যাগে বাধ্য করতে পারেনি।

১৯৬৪ সালে যখন সাম্প্রদায়িক হামলার শহর হিসেবে ঢাকার কুখ্যাতি ছড়িয়েছে, তখনও দেশে থেকে নির্দ্বিধায় সব সঙ্কট মোকাবিলা করেছেন তিনি। ২৫ শে মার্চ ১৯৭১। পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার অনেকেই এরই মধ্যে ঢাকা শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পুরো এলাকায় বাড়ি আর কারখানা মিলিয়ে চৌহদ্দিতে কেবল যোগেশচন্দ্র ঘোষ থেকে গেলেন। বিরাট এলাকাজুড়ে তাঁর একমাত্র সাধনাস্থল “সাধনা ঔষধালয়” কারখানা। এখানেই তিনি কাটিয়েছেন জীবনের অধিকাংশ সময়, করেছেন গবেষণা। এখানকার একেকটা ইটে আছে তাঁর মমতার ছোঁয়া! নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র সাথী ছিলো কারখানার শ্রমিকরা। সব শ্রমিকরা যখন কাজ সেরে ফিরে যেত তখন কেবল থাকতেন সুরুজ মিয়া এবং রামপাল নামে কারখানার দুই বিশ্বস্ত দারোয়ান। তাঁরা দীর্ঘ ১৭ বছর যোগেশচন্দ্রের সঙ্গে কাটিয়েছে। ২৫ শে মার্চের পর সবাই যখন একে একে চলে গেল, গেলেন না কেবল এই ২ জন !

২৫ শে মার্চের পরের ঘটনা। ৩ এপ্রিল গভীর রাত। একটি মিলিটারী জীপ এসে থামলো। ৫/৬ জন পাকিস্তানী সৈনিক জীপ থেকে নামলো। একে একে গেটের তালা ভেঙ্গে ফেললো তারা। কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লো। পাহারাদার সুরুজ মিয়াও পাক সেনাদের দিকে তাক করে তার নিজের বন্দুক দিয়ে গুলি ছোড়া শুরু করলেন। শুরু হলো সংঘবদ্ধ পাক সেনা বনাম সুরুজ মিয়ার অসম যুদ্ধ। সামান্য অস্ত্র, সামান্যতম অস্ত্রচালনায় পারদর্শী একজন সাধারণ বাঙ্গালী সুরুজ মিয়া পাহারাদারের কাছে হার মানলো পাকিস্তানী সৈন্যরা। রাতের আধারে পাক সেনারা একপ্রকার পালিয়ে গেল সাধনা ঔষধালয়ের গেইট থেকে। সুরুজ মিয়া শ্রী যোগেশ চন্দ্র ঘোষকে বলেছিলেন সেখান থেকে পালিয়ে যেতে। যোগেশ বাবুর এক কথা, “মরতে হয় দেশের মাটিতে মরব। আমার সন্তানসম এই সব ছেড়ে আমি কোথায় যাবো???

পরের দিন পাকিস্তানী আর্মি আবারও ফিরে আসলো, বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র এবং লোকবল নিয়ে। পাক সেনারা নীচে সবাইকে লাইন করে দাঁড় করালো। পরে যোগেশচন্দ্র ঘোষকে উপরে নিয়ে গেল, পাকিস্তানী সেনারা তাঁকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরে, বুলেটের গুলিতে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে ।

তাদের উল্লাসধ্বনি নীচে পর্যন্ত ভেসে আসছিল, নীচের লোকজন যারা লাইনে দাঁড়িয়েছিল তারা সুযোগ বুঝে পালিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিল। নয়তো যোগেশ বাবুর সাথে কারখানার সকলেই মারা পড়তেন। জানা যায়, পাকিস্তানি আর্মিরা শুধু তাঁকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, লুটে নিয়ে গিয়েছিল যোগেশ চন্দ্র ঘোষের অর্জিত অনেক অর্থ-সম্পদ। সেদিন ছিল ৪ এপ্রিল। তখন যোগেশচন্দ্র ঘোষের বয়স ছিল ৮৪ বছর।

”ও ভাই, খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি আমার দেশের মাটি”— নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও দেশের মাটিকে আঁকড়ে রাখা এই মানুষটিকে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।।

1587 ভিউ

Posted ৩:০৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com