বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের খোঁজে বিএনপি

সোমবার, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮
242 ভিউ
নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের খোঁজে বিএনপি

কক্সবাংলা ডটকম(১৫ জানুয়ারি) :: কেমন হবে নির্বাচনকালীন সরকার—গত শুক্রবার প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের পর থেকেই এ আলোচনা এখন দেশজুড়ে। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে এ ধরনের সরকারের বিষয়টি স্পষ্ট করেননি।

কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন এবং সে সময় গঠিত একটি ছোট আকারের মন্ত্রিসভা রুটিন ওয়ার্ক করবে। প্রধানমন্ত্রীই সরকারপ্রধান থাকবেন। নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেই গঠিত হবে নির্বাচনকালীন সরকার। সংসদে প্রতিনিধিত্ব না থাকায় সাংবিধানিকভাবে সে সরকারে থাকার কোনো সুযোগ নেই বিএনপির।

এ নিয়ে কি ভাবছে বিএনপি—গত দুদিন ধরেই নানা আলোচনায় এসেছে বিষয়টি। সরব নির্বাচনী রাজনীতিও। কারণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় সে নির্বাচন নিয়ে বেশ বিতর্কে পড়তে হয়েছে সরকারকে।

সুতরাং, এবার বিএনপি কি সংবিধান মেনে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেবে; নাকি নির্বাচনকালীন সরকারের নতুন কোনো রূপরেখা দেবে- সংগত কারণেই এমন প্রশ্ন চলে আসছে সামনে। তা ছাড়া নির্বাচনকালীন সরকারের সময় গঠন হওয়া মন্ত্রিসভায় কোন প্রক্রিয়ায় ও কোন কোন পদ চাইতে পারে দলটি- সে নিয়েও নানা হিসেব-নিকেশ চলছে।

বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কিছুতেই নির্বাচন নয়- এমন দাবিতে অনড় থাকা দলটি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নিতে বা প্রস্তাব দিতে পারে- এমন ভাবনা রাজনীতিতে গুরুত্ব পাচ্ছে।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে কিছু বলা হয়নি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সমালোচনা করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে। রূপরেখা সময়মতো জানানো হবে বলেও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি। সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার বলে কিছু নেই-এমন কারণ দেখিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনার জন্য দলের পক্ষ থেকে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কি ভাবছে- তা জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আবার সংবিধানেও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণেও নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি স্পষ্ট করেননি।

সুতরাং, এ নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যদি আন্তরিকভাবে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে নতুন কিছু ভেবে থাকেন, তার উচিত হবে এ নিয়ে সবার সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া।

বিএনপির এই নেতা এমনও মনে করেন, একটি আন্তরিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে ২০১৮-এর নির্বাচন সম্পর্কে অর্থবহ সমাধানে আসা সম্ভব। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কেমন হতে পারে, তা নিয়ে আমাদের দলের একটি চিন্তাভাবনা আছে। সংলাপে আলোচনা হবে। সেখানেই বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের নিশ্চয়তা খুঁজছি। সে সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব।

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংবিধানে সরাসরি কিছু বলা নেই। তবে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা কমিয়ে নতুন-পুরনো মিলিয়ে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠন করে আওয়ামী লীগ। এই সরকারে জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও জাতীয় পার্টিকে (জেপি) রাখা হয়েছিল। অন্য দল থেকে তিনজনকে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়, যারা নির্বাচিত ছিলেন না। সে সময় গঠিত নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় ২১ জন মন্ত্রী ও সাতজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ পাঁচটি মন্ত্রণালয় ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বিএনপি অংশ নেয়নি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের জন্য খালেদা জিয়াকে গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যাননি।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বিএনপি সংসদে নেই। সুতরাং, সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হলে সেখানে বিএনপিকে রাখা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে সংবিধান মেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে টেকনোক্রেট বা উপনির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি থেকে মন্ত্রিসভায় সদস্য নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে সবকিছুই নির্ভর করবে প্রধানমন্ত্রীর ওপর।

এক্ষেত্রে বিএনপির ভাবনা কি- জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নে এখন পর্যন্ত ছাড় দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষেই দল। হয়তো শেষ পর্যন্ত টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রিসভার কয়েকটি পদ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকার প্রশ্নে কোনো আপোস নয়। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর জায়গায়ও দলের কিছু প্রস্তাব থাকবে।

দলীয় সূত্রগুলো আরো জানায়, সংবিধানের আলোকেই নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক’ সরকারের প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভাবছে দল। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রেখেই নির্বাচনে অংশ নিতে হলে সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমাতে হবে। বিশেষ করে তিনি কোনো নির্বাহী আদেশ দিতে পারবেন না। দায়িত্বে থেকেও যেতে পারেন ছুটিতে। তাছাড়া নির্বাচনকালীন তিন মাস সময়কালে সব মন্ত্রী শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবেন।

প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপনসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এছাড়া সংবিধানের মধ্য থেকেই সংসদ ভেঙে দিয়ে তিন মাসের জন্য হতে পারে ছোট পরিসরের মন্ত্রিসভা। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে না রাখার প্রস্তাবও থাকবে বলে জানা গেছে।

‘তবে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাব নিয়েই বেশি ভাবছে দল’- জানিয়ে দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, নির্বাচনকালে শেখ হাসিনার ক্ষমতা কোনোভাবে খর্ব করা গেলে তার প্রভাব পড়বে মাঠ প্রশাসনে। কার্যত প্রশাসনের জন্য নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের প্রেক্ষিত তৈরি হবে। দলের জন্য নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিও সহজ হবে। এজন্য ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছুটিতে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। এর আগে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ ছুটিতে গিয়েছিলেন।

নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাবে তাই প্রধানন্ত্রীর ছুটির বিষয়টি আনতে চাইছেন বিএনপির নীতি নির্ধারকরা। তবে দলের নেতারা এও বিশ্বাস করেন, সংবিধানে থাক বা না থাক, ছুটি নেওয়াটা সম্পূর্ণই নির্ভর করবে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। কারণ, সংবিধানে কোনোভাবেই প্রধানমন্ত্রীর ছুটি নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা রাখা হয়নি।

নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় অংশগ্রহণ নিয়ে কি ভাবছে বিএনপি-জানতে চাইলে দলের নেতারা যুক্তি দেখান, সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের উল্লিখিত ২ দফায় প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগ এবং ৩ দফায় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের কথা বলা আছে। সে কারণে আগামী নির্বাচনের আগে সংবিধানের আওতায় একটি অন্তর্বর্তীকালীন বা সর্বদলীয় সরকার হতে পারে। আগের সংসদে বিএনপি ছিল, এবারে নেই। কিন্তু সরকার চাইলে টেকনোক্র্যাট বা উপনির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী করে এনেও নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে।

এ ব্যাপারে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। তিনি সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচনের কথা বলেছেন। বিষটি সংবিধানেও স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা কেমন হবে, কারা থাকবেন, মন্ত্রিসভার কাজ কী হবে এটি স্পষ্ট নয়। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলেছেন, হয়তো উনার কাছে এর ব্যাখ্যা আছে।

অথবা এ বিষয়ে জনগণের মতামত বা প্রতিক্রিয়া জানার জন্যও হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে এটি বলা হচ্ছে। জনগণের আলোচনার মধ্য থেকে হয়তো সরকার কোনো আইডিয়া নিতে পারে। তবে আমাদের পরামর্শ হলো, আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সুন্দর নির্বাচন চাই। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে করা যায় তা আলোচনা করে বের করতে হবে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ আলোচনা হতে পারে।

242 ভিউ

Posted ১১:১২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com