কক্সবাংলা ডটকম(২২ ডিসেম্বর) :: দেশে নিজস্ব উৎপাদনের পাশাপাশি প্রতি বছরই বিভিন্ন খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয় বাংলাদেশকে। সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকট ও টাকার বিপরীতে মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বিদেশী খাদ্যপণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে।
এর প্রভাব পড়েছে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ, রসুন, আলু, বেগুন ও ইলিশেও। এক বছরের ব্যবধানে এ পাঁচ পণ্যের দাম বেড়েছে দুই-তিন গুণ।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে দেশে উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আলু, ইলিশ ও বেগুন। এর মধ্যে পেঁয়াজ ও রসুনের একটি অংশ কেবল আমদানি করতে হয়। বাকি দুই পণ্যের প্রায় পুরোটাই দেশে উৎপাদন হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদনের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকা, বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে এসব পণ্যের দাম অতিরিক্ত হারে বেড়েছে।
রাজধানীর মিরপুর, কারওয়ান বাজার, টাউন হল বাজার ও নিউমার্কেট বনলতা কাঁচাবাজারে গতকাল প্রতি কেজি নতুন ও পুরনো দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০-১৬০ টাকায়।
দেশী রসুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২৪০-২৮০ টাকা, নতুন ও পুরনো আলু প্রতি কেজি ৫৫-৭০ এবং বেগুন ৬০-৮০ টাকা। আর প্রতি কেজি ইলিশের দাম ছিল মানভেদে ৮০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
যদিও গত বছরের এ সময়ে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০-৫০ টাকা, দেশী রসুন ৮০-১০০, নতুন ও পুরনো আলু ২০-৩০, বেগুন ২০-৫০ এবং প্রতি কেজি ইলিশ ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
সে হিসেবে এক বছরে দেশী পেঁয়াজের দাম ২০০, দেশী রসুন ১৮৮, আলু ১৫০, বেগুন ১০০ ও ইলিশ মাছের দাম বেড়েছে ৮৮ শতাংশ।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয় ৩৩ টাকা। আর প্রতি কেজি রসুন ৫১, আলু ১২ ও বেগুন উৎপাদনে খরচ হয় ১০ টাকার মতো।
এর পরও অতিরিক্ত দামে বিক্রি হওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলেন, উৎপাদন মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে খুব অল্প দামেই পেঁয়াজ ও আলু কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে এ পণ্যগুলোর দাম কয়েক গুণ বেশি থাকলেও এর সামান্য অংশই পান কৃষক।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এমএ সাত্তার মন্ডল বলেন, ‘কৃষিপণ্যের ভালো দাম না পেলে কৃষক টিকবে না। তাই দাম বাড়লে কৃষক কোনো না কোনোভাবে লাভবান হন। কৃষক এক ফসলে লাভ করতে পারলে অন্য ফসলে লোকসান দিয়ে হলেও কৃষিকাজ করেন।’
বাজার ব্যবস্থাপনায় অনেক ত্রুটি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক মধ্যস্বত্বভোগী রয়েছে যারা সুযোগ নেয়। আবার দেশে বেশির ভাগ কৃষকই ছোট। ফলে তাদের পক্ষে বাজারে বিক্রি সম্ভব নয়। এ কারণে মধ্যস্বত্বভোগীও বাজারের একটি অংশ।
আরেকটি সমস্য রয়েছে পরিসংখ্যানের দুর্বলতা। এ কারণে কোনো কোনো পণ্য কখন আমদানি বা রফতানি করতে হবে তার ধারণা সরকার নিতে পারে না। ভালো তথ্য না থাকলে তা সম্ভব না।’
চলতি বছর সবচেয়ে বেশি অস্থিতিশীল হওয়া পণ্যগুলোর একটি পেঁয়াজ। দেশে এর চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ অর্থবছরে ৩৪ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এর পাশাপাশি চলতি বছরের ৫ জুন থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরো ৭ লাখ ৫ হাজার ৪৩৭ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আবার দেশে আলুর চাহিদা রয়েছে ৭০-৭৫ লাখ টন। আর ২০-২৫ শতাংশ উৎপাদন পরবর্তী সময়ে নষ্ট হয়। সে হিসেবে মোট চাহিদা দাঁড়ায় ৯০ লাখ টনের মতো।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ অর্থবছরে ১ কোটি ৪ লাখ টনের বেশি আলু উৎপাদন হয়। তবুও আলুর বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়লে এ বছর আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।
বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার জন্য উৎপাদনের পরিসংখ্যানকেও দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৮ ডিসেম্বর এফবিসিসিআই আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে এমন ভুল তথ্যের কারণেই হয়তো ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে।
প্রথম থেকেই সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে, ১ কোটি ১২ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। তখনই আমাদের সংগঠন থেকে জানানো হয় যে আলুর উৎপাদন এ বছর কম হয়েছে। তাই সিচুয়েশন খারাপ হতে পারে বলে বারবার বলা হয়েছে আমাদের পক্ষ থেকে।’
ইশতিয়াক আহমেদ আরো বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব ছিল যৌথ জরিপ করার। কারণ কিছু হলে আমাদেরকেই দোষারোপ করা হয়। এছাড়া সরকারিভাবে আলুর মজুদ রাখার প্রস্তাবও দিয়েছি।’
পরিসংখ্যান ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফার কারণে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ছে বলে মনে করেন কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষিতার কারণে ব্যবসার মাধ্যমে অতিমুনাফার দিকে অনেকে ঝুঁকছেন। এ কারণে অস্থিরতা বাড়ছে। আলু ও পেঁয়াজের ক্ষেত্রে অভিযানে এমনটাও দেখা গেছে যে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরাই বাজার অস্থিতিশীলতার সঙ্গে জড়িত। তাই বাজারে মনিটরিং না বাড়ালে বাজার স্থিতিশীল রাখা যাবে না।’
Posted ১১:৪৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta