বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে তিনগুণ

বুধবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
183 ভিউ
পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে তিনগুণ

কক্সবাংলা ডটকম(৫ ফেব্রুয়ারি) :: পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে এরইমধ্যে তিনগুণ হয়েছে। এরপরও নিজস্ব অর্থায়নেই নির্মিত হচ্ছে এ প্রকল্প। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় প্রক্ষেপণ করা হয়। এখন লক্ষ্য ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। প্রাথমিকভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার কোটি টাকা।

পরে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, নদীশাসনে ব্যয় বৃদ্ধি, ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় বৃদ্ধি, সড়ক সংযোগে ব্যয় বৃদ্ধি, পরামর্শকে ব্যয় বৃদ্ধি ও নদীর ভাঙ্গন ঠেকাতে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকায়। এর বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদল হবে।

মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি)পদ্মা সেতু প্রকল্প অবদান রাখবে দেড় শতাংশ।‘ফাস্ট ট্র্যাক’ হওয়ার পরও পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বৃদ্ধির মূল কারণ বিদেশি পরামর্শকদের কাজে ধীরগতি ও নদীর স্রোত বেড়ে যাওয়া বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে পদ্মা সেতু প্রকল্পের টেকনিক্যাল উপদেষ্টা ও এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন,পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মা-যমুনার সম্মিলিত প্রবাহ। প্রতি সেকেন্ডে মাওয়া পয়েন্টে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহিত হয়। এমন হিসাব মিলেছে ১০০ বছরের তথ্য থেকে। আমাজন নদীর পরেই কোনো নদী দিয়ে এত পানি প্রবাহিত হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় প্রতি ১ সেকেন্ডে ৯০ হাজার ঘন মিটার পানি। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।

চীনের ইয়াংসি নদীতে প্রতি এক কিলোমিটারে একটি সেতু হচ্ছে। সাংহাইয়ে তারা ৫০ কিলোমিটার লম্বা সেতু বানাচ্ছে। পদ্মায় সেতুর ডিজাইন করতে গিয়ে আরেকটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়েছে- এখন যে নদীর তলদেশ, আগামী ১০০ বছর পর তেমনটি কি থাকবে? হঠাৎ যদি তলদেশের মাটি উধাও হয়ে যায়? সমীক্ষায় দেখা গেছে, আগামী ১০০ বছরে নদীর তলদেশের ৬২ মিটার পর্যন্ত মাটি সরে যেতে পারে। এই ‘৬২ মিটার’ বিবেচনায় নিয়ে ডিজাইন করতে হয়েছে। আমরা নিশ্চিত নই যে, এই মাটির স্তর থাকবে কি থাকবে না।

অতএব সেতুর খুঁটি এমন গভীরতায় নিতে হবে, যাতে সেতু এবং তার ওপর দিয়ে চলা গাড়ির চাপ নিতে পারে। প্রবল ভূমিকম্প হলেও যেন সেতুটি বসে না যায়। যমুনায় ৬৫ মিটার নিচে একটি পাথরের লেয়ার পাওয়া গেছে। কিন্তু পদ্মা যে আরও অতল। এখানে ৬২ মিটার ঝুঁকিপূর্ণ। তাই পাইল ১২০ মিটার পর্যন্ত হবে। যে কোনো সেতুর জন্য এটাই এ পর্যন্ত গভীরতম পাইল।

অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী জানান, এখন পদ্মা সেতুর চূড়ান্ত ডিজাইন করা হয়েছে কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমে।

পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঝখানে ধীরগতির ব্যাপারে প্রকল্প ‍পরিচালক (পিডি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে চালু করার জন্য পদ্মা সেতু প্রকল্পে দিনভিত্তিতে কাজ হয়েছিল। বিদেশি পরামর্শকসহ কিছু কারণে কাজে ধীরগতি নেমে আসে। এখন আশা করছি, নতুন করে নির্ধারিত সময়ের (২০২০ সালের ডিসেম্বর) মধ্যেই পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত সম্ভব হবে।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, হলি আর্টিজানে হামলার কারণে বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দেড় থেকে দুই বছর সময়ক্ষেপণ হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত ব্যয় হিসেবে মূল সেতু নির্মাণে ৩ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা, নদীশাসনে ৫ হাজার ১৩ কোটি টাকা, সংযোগ সড়ক নির্মাণে ৬৩৮ কোটি টাকা, পরামর্শক বাবদ ১৭৬ কোটি টাকা, নতুন খাতে ১২৫ কোটি টাকা, জমি অধিগ্রহণে ২১২ কোটি টাকা এবং নদীর মাওয়া অংশে ভাঙন ঠেকাতে ৫০০ কোটি টাকার অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০১১ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীতে এর অনুমোদন দেয়া হয়।

গত বছরের ২১ জুন দ্বিতীয় সংশোধনীতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একনেক এর কার্যপত্রে উল্লেখ রয়েছে- ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত ১ হাজার ৪শ কোটি টাকা ব্যয়ে অতিরিক্ত ১ হাজার ১৬২ দশমিক ৬৭ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সেতু বিভাগের প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপ হচ্ছে- সেতু বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা (সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়ন) প্রাক্কলিত ব্যয়ে জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য গত ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারির একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।

ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত অগ্রাধিকার প্রকল্পটি বর্তমানে ৫টি কম্পোনেন্টের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে জাজিরা সংযোগ সড়ক, মাওয়া সংযোগ সড়ক এবং সার্ভিস এরিয়া-২ এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণ এবং নদী শাসন কাজ চলমান রয়েছে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মূল সেতুর প্রথম স্প্যান স্থাপন করা হয়। অনুমোদিত প্রকল্প দলিল অনুযায়ী ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পে ১ হাজার ৫৩০ দশমিক ৫৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখলের জন্য ১ হাজার ২৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকার সংস্থান আছে। বর্তমানে সেতু বিভাগ ১ হাজার ৪শ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে আরও ১ হাজার ১৬২ দশমিক ৬৭ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠিয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে নতুন এলাকা মুন্সীগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলার মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন হবে। এই রুটে দ্বিতীয় লাইন নির্মাণ এবং বরিশাল ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরকে এই রুটের সঙ্গে সংযুক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করলে আঞ্চলিক বৈষম্য কমবে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে এবং মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আনুমানিক দেড় (১.৫) শতাংশ বৃদ্ধিতে এই প্রকল্প অবদান রাখবে।

নদী শাসন ও জমি অধিগ্রহণের কারণে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে মোট তিন দফা খরচ বাড়িয়েছে সরকার। বর্তমানে পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত বছরের ২১ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পে আরও ৪শ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সেতু বিভাগ ১ হাজার ১৬৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের জন্য ওই ৪শ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের বদল হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রকল্পের পটভূমি সম্পর্কে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং এরইমধ্যে সেতু নির্মাণের অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়েছে। সেতুটির প্রধান উদ্দেশ্য দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী শহর ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা। দ্বিতল এই সেতুর ওপরের ডেকে চার লেন সড়কপথ এবং নিচের ডেকে ব্রড গেজ সিঙ্গেল রেলওয়ে ট্র্যাকের সংস্থান রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর, খুলনা, বেনাপোল ও মোংলা পর্যন্ত সরাসরি রেলওয়ে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে এর আগে পর্যালোচনা হয়েছিল ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। তখন এর মোট ব্যয় ছিল ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। সেসময় পদ্মা সেতু নির্মাণে দ্বিতীয় দফা ব্যায় বাড়ায় সরকার। তখন এর সংশোধিত ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। ব্যয় বাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।

বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নে ২০০৭ সালে মূল প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার কোটি টাকা। পরে দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিজেদের অর্থায়ন বাতিল ঘোষণা করে বিশ্বব্যাংক। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো অর্থ গ্রহণ করবে না। সেসময় (২০১২ সালে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, নিজস্ব অর্থায়নেই নির্মিত হবে পদ্মা সেতু। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুটি ব্যাংক হিসাবও খোলা হয়। একটি নিবাসী এবং অপরটি অনিবাসী হিসাব। পরে অবশ্য সরকারের কোষাগার থেকেই পুরো অর্থ প্রদানের মাধ্যমে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে বলে জানানো হয়।

পদ্মা সেতু নিয়ে ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে কানাডার আদালত। সর্বশেষ ২২ জানুয়ারি পদ্মা সেতু প্রকল্পের টেন্ডার সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ থেকে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেনকে দায়মুক্তি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

183 ভিউ

Posted ৩:০৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com