বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

পরিবহণ শ্রমিকদের ধর্মঘটে প্রকাশ্যেই লাঞ্ছিত : নেপথ্যে কারা

সোমবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৮
260 ভিউ
পরিবহণ শ্রমিকদের ধর্মঘটে প্রকাশ্যেই লাঞ্ছিত : নেপথ্যে কারা

কক্সবাংলা ডটকম(২৮ অক্টোবর) :: পরিবহণ শ্রমিকদের কর্মবিরতি এবার বিতর্কের মোড় নিল৷ আন্দোলনকারীরা মহিলাদের শরীরে হাত দিয়েছেন, কেউ আবার জোর করে ছাত্রীদের মুখে, পোশাকে রঙ মাখিয়েছেন৷ এমন ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে পাল্টা বিক্ষোভ৷ বাংলাদেশের সোশ্যাল সাইটে উপচে পড়ছে ক্ষোভ৷ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সেই খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে৷

ঘটানস্থল নারায়ণগঞ্জ৷ এখানে পরিবহণ শ্রমিকদের ডাকা কর্মবিরতির মধ্যে পড়ে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে নারায়ণগঞ্জে একটি কলেজের পড়ুয়াদের৷ স্থানীয় সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার সময় একটি বাসে হামলার পর ছাত্রী ও বাস চালকের মুখে ও কাপড়ে কালি লাগিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার কিছু ছবি এখন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি শেয়ার করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন অধিকাংশ ফেসবুক ব্যবহারকারী। এর নিন্দা জানিয়ে দায়ীদের শাস্তি দাবি করেছেন তারা।

সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে রবিবার থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন৷ এটি কার্যত ধর্মঘটের রূপ নিয়েছে৷ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা এই কর্মসূচিতে দুর্ভোগে বাংলাদেশের জনগণ৷আন্দোলনকারীদের দাবি, আইনের কিছু বিধান সংশোধন না করলে বৃহত্তর ধর্মঘট করা হবে৷ যদিও সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে৷

 নেপথ্যে কারা

সম্প্রতি ঢাকায় একটি পথ দুর্ঘটনায় দুই পড়ুয়ার মৃত্যুর পর সারা বাংলাদেশে চলেছিল নিরাপদ সড়ক আন্দোলন৷ এর জেরে স্তব্ধ হয়েছিল পরিবহণ ব্যবস্থা৷ সেই আন্দোলনের ধাক্কায় নতুন আইন আনে সরকার৷ তাতে বলা হয়েছে, গাড়ি চালকের অসতর্কতায় দুর্ঘটনা হলে ক্ষতিপূরণবাবদ ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা হবে৷ থাকছে চরম শাস্তির বিধান৷ এসবেরই বিরুদ্ধে চলছে দু দিনের টানা পরিবহণ কর্মবিরতি৷

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দফা দাবিতে দেশজুড়ে শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট চলছে। এই ধর্মঘটে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি নানা অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। সরকারের শেষ মুহূর্তে এমন ধর্মঘট পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সরকারের কেউ কেউ বিশৃঙ্খলাসহ সহিংসতা ঘটালে কঠোর হাতে দমনের ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তবে এর নেপথ্যে সরকার ও সরকারবিরোধীদের শ্রমিক নেতারা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও ধর্মঘট আহ্বানকারী সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেড়ারেশন বলছে, তাদের এই দাবি ন্যায়সংগত। তারা কোনও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান না। সরকারবিরোধী কোনও শক্তিরও হাত নেই এতে।

তবে সরকারপন্থী বেশ কয়েকটি সংগঠনের অভিযোগ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেড়ারেশনের অধিকাংশ নেতাই বিএনপি আর জামায়াতের। এদের সঙ্গে সরকারের একজন মন্ত্রীসহ কিছু স্বার্থন্বেষী লোকও জড়িত। তারা দেশকে অচল করতে এবং সরকারের উন্নয়ন কাজকে বাধা দিতে সরকারের শেষ মুহূর্তে সংসদ নির্বাচনের আগে এমন কর্মবিরতি আহ্বান করে সরকার ও জনগণকে জিম্মি করে ফায়দা লুটতে চায়। যদিও এই সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সরকারের নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি এর কার্যকরী সভাপতি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকনের অভিযোগ, ‘অতীতে শ্রম আইন পরিপন্থী ধর্মঘট ডেকে যারা সরকারকে জিম্মি করতে চেয়েছিল, সেই একই চক্র আজকে পরিবহন খাতে কর্মবিরতি ডেকেছে। এই চক্রটিতে কারা আছে, কাদের নির্দেশে কর্মবিরতি চলছে তা সবাই জানে। পরিবহন শ্রমিকদের এই সংগঠনের বেশিরভাগ নেতাই বিএনপিপন্থী। তাই সংগঠনটি সরকারকে অচল করতে এমন কাজ করছে। এই সংগঠন শ্রম আইন, নীতি কিছুই মানে না। তাছাড়া আন্দোলনের নামে সাধারণ যাত্রী ও প্রাইভেটকার চালকদের মুখে পোড়া মবিল মেখে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এটা ফেডারেশনের নেতাদের ইন্ধনেই ঘটেছে। তারা একজন ক্ষমতাধর মন্ত্রীর ওপর ভর দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান, তিনি সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রী। সহসভাপতি-১ আব্দুর রহিম বক্স দুদু, তিনি জাতীয়বাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক এবং খুলনা মহানগর শ্রমিক দলের সেক্রেটারি। সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা। যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী। ফেড়ারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করম আলী দোহার বিএনপির সভাপতি ছিলেন। কার্যকরী কমিটির সদস্য- ইসমাইল হোসেন ফলিক জামায়াত সমর্থিত বলে জানা গেছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সাংগঠনিক সম্পাদক মুখলেসুর রহমান এক সময় ফ্রিডম পার্টির সদস্য ছিলেন। ফেড়ারেশনের সহ-সভাপতি আব্দুল ওদুদ নয়ন সিপিডির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সহ-সভাপতি আব্বাস উদ্দিন সাভার বিএনপির সভাপতি বলে জানা গেছে।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেড়ারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘আমি ও শাজাহান খান দীর্ঘ ৪০-৪৪ বছর ধরে এই শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। অনেকেই অভিযোগ করতেই পারে। শাজাহান খানকেও বিএনপি বানিয়ে দিতে পারে। কেউ বললে তো করার কিছু নেই। আমরা শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করছি। শ্রমিকের ন্যায়সংগত দাবির পক্ষে আছি এবং থাকবো। আমাদের কর্মবিরতি শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য,  যে বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে আমাদের ৮ দফার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে।’

তবে এই আন্দোলনের সঙ্গে ফেড়ারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান সম্পৃক্ত আছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিনি কার্যকরী সভাপতি হিসেবে সংগঠনের সিদ্ধান্তগুলো জানেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তার একার বিরোধিতায় তো আর হবে না। এখানে সংগঠনের অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন এবং সরকারেরও প্রতিনিধিত্ব করছেন।’

সরকারপন্থী বিভিন্ন সংগঠন ফেডারেশনের অধিকাংশ নেতাকে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী বলছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘যারা এই অভিযোগ করছেন তারা বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবের সময় কোথায় ছিলেন? আমরা তো রাস্তায় ছিলাম। এখন বিষয়টা হচ্ছে সংগঠন একটা খুলে একটা সংবাদ সম্মেলন করে অনেক অভিযোগ করা যায়। কিন্তু রাস্তায় তাদের দেখা যায় না। এরাই রিকশা এবং ভ্যানগাড়ির লাইসেন্স বিক্রি করে চলে।’

এদিকে, রবিবার সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মো. ইনসুর আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘আগামী নির্বাচন উপলক্ষে যখন দেশে উৎসবমুখর নির্বাচনি প্রচারণা চলছে, ঠিক তখনই বিএনপি-জামায়াতের মদদপুষ্ট সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কর্মবিরতির নামে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনি পরিবেশ অশান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। গতকাল (২৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিবহন শ্রমিক সমাবেশের নামে যারা বক্তব্য রেখেছেন, তারা অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ওই মিটিংয়ে ফেডারেশনের সভাপতি ওয়াজ উদ্দিন খানের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি উপস্থিত হননি।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত এই তথাকথিত নেতারা পরিবহন শ্রমিকদের ব্যবহার করে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। পরিবহন শ্রমিকদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কখনও কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করে নাই। যার ফলে কিছুদিন আগে বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ফেডারেশনের তথাকথিত নেতাদের পরিত্যাগ করে নিজেরাই আন্দোলন সূচনা করেছিল এবং সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারা-উপধারা শিথিল করার আশ্বাস দেন। যেখানে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের তথাকথিত নেতারা সংযুক্ত ছিল না। যার ফলে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য আজ থেকে ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতির নামে ধর্মঘট ডেকে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার পাঁয়তারা করছে।

এর আগেই প্রায় একই দাবিতে গত ৮ অক্টোবর ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতে পণ্যপরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করে বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। কিন্তু তখন ওই ধর্মঘটে ফেডারেশনের নেতাদের সমর্থন ছিল না।

260 ভিউ

Posted ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com