কক্সবংলা ডটকম(১৯ মার্চ) :: দেশের বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনের এলাকা পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়ার পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের ব্যাপক কমেছে। এক সপ্তাহ ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা মণের পেঁয়াজ বুধবার বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়।
পবিত্র মাসে বেশি দামে বিক্রির আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন। সেই পেঁয়াজ এখন বাজারে। পাশাপাশি নতুন পেঁয়াজও এসেছে বাজারে। তাতে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এই দরপতন ঘটেছে বলে মনে করেন স্থানীয় কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
এদিকে রমজানের প্রথম সপ্তাহে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার পর রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে কিছু পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে সব পণ্য এখনও সরকার নির্ধারিত দামে পৌঁছায়নি।
বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ, শসা, বেগুন, ডিম এবং ব্রয়লার মুরগির দাম কমছে। দ্রুত কমছে পেঁয়াজ ও ব্রয়লার মুরগির ডিমের দাম।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে দ্রুত কমছে দেশি পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ এখন ৭০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ভ্যানের দোকান ও পাইকারি বাজার থেকে কিনলে ৬৫ টাকায়ও মিলছে। যদিও রোজার শুরুতে পণ্যটির দাম ছিল ৯০ টাকা বা তারও বেশি।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর গত ১৫ মার্চ প্রতি কেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।
পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট তৈরি হয়। এ সময় বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ার কারণে দেশের আগাম মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের ওপর চাপ তৈরি হয়। দামও বেড়ে ওঠে ১২০ টাকায়।
তবে মার্চ থেকে মূল পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় বাজারে সরবাহও বেড়েছে, কমেছে দাম। পেঁয়াজ উৎপাদনকারী প্রধান অঞ্চলগুলোর অন্যতম পাবনায় এক সপ্তাহ আগে পণ্যটির দাম প্রতি মণ তিন হাজার টাকা থেকে কমে বর্তমানে ১,৫০০–১,৭০০ টাকায় নেমে এসেছে।
বাজারের পাইকারি বিক্রেতা আল-আমিন বলেন, ‘মৌসুমি পেঁয়াজের ফলন এবং বাজারে সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমছে।’
বেগুন, শসা, ডিম এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেশি চাহিদার কারণে রমজানে সাধারণত বেড়ে যায়। এ বছরও বেগুন ও শসার দাম প্রাথমিকভাবে প্রতি কেজি ৮০–১২০ টাকায পর্যন্ত উঠেছিল। এগুলো এখন যথাক্রমে ৪০–৭০ টাকা এবং ৫০–৬০ টাকায় নেমে এসেছে।
অনেক বেশি বেড়ে যাওয়া লেবুর দামও কিছুটা কমেছে।
যদিও কিছু পণ্য সরকার নির্ধারিত দামের কাছাকাছি নেমেছে, অনেকগুলোর দাম এখনো চড়া। যেমন বেগুনের দাম এখনও প্রতি কেজি নির্ধারিত ৪৯.৭৫ টাকা থেকে বেশি।
ডিমের দাম অবশ্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ১০.৪৯ টাকার নিচে নেমে গেছে। বর্তমানে এক ডজন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। ডিম সহজে সংরক্ষণ করা যায় না এবং রমজানে চাহিদা কম থাকাকে ব্যবসায়ীরা কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির দামও কিছুটা কমেছে, প্রতি কেজি ২২০–২৩০ টাকা থেকে ২১০–২১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সরকার এ মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ ১৭৫ টাকা।
বাজার মনিটরিং, ২৯টি পণ্যের সরকারি মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং রমজানের প্রারম্ভিক উচ্চ চাহিদা হ্রাসকে দাম কমার কারণ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও টিসিবির মূল্য তালিকা যথেষ্ট যাচাই-বাছাই ও বিবেচনা ছাড়া তৈরি করা হয়েছে দাবি করে সরকারের মূল্য নির্ধারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।
মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত না হলে ব্যবসা বন্ধের হুমকি দেন তিনি।
চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের বড় দরপতন
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের বড় দরপতন হয়েছে।
দুই দিন আগেও ৮০/৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।
চট্টগ্রামের বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি থাকায় চট্টগ্রামের বাজারে পেঁয়াজের দরপতন হয়েছে।
ভারতীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজেরও ব্যাপক সরবরাহ রয়েছে চট্টগ্রামের বাজারে।
চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন বাজারের ভোগ্যপণ্যের বিক্রেতা আবু সিদ্দিক রাইজিংবিডিকে বলেন, মূলত গত রোববার থেকেই চট্টগ্রামে পেঁয়াজের বাজার কমতির দিকে।
গত সপ্তাহে আমরা যে পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, গত রোববার সেই পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। আজ মঙ্গলবার একই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।
নগরীর বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আড়তে যে পরিমাণ পেঁয়াজের মজুত আছে সে অনুপাতে বিক্রি নেই। অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কম দামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
নগরীতে ভ্যানে করে পেঁয়াজ বিক্রেতা আবদুল সবুর বলেন, এখন ভ্যান থেকে ৫০/৫৫ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে পারছেন ক্রেতারা। পাইকারি বাজার থেকে এসব পেঁয়াজ আমরা ৪০/৪৫ টাকা কেজিতে কিনে এনেছি। পেঁয়াজের মূল্য আরও কমতে পারে বলে ধারণা এই বিক্রেতার।
Posted ৯:৫১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta