কক্সবাংলা ডটকম(১৯ আগস্ট) :: দেশের ভাবমর্যাদা ফিরিয়ে আনাসহ পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে রাষ্ট্র পরিচালনায় বহু সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে। প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা সাবেক এ ক্রিকেটারের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশার চাপ অনেক বেশি।
সাধারণ পাকিস্তানিদের সেই আকাশচুম্বি প্রত্যাশা পূরণ করা অনেকটা অসম্ভবই বটে। এমন বিশ্লেষণ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম নিখুঁত খেলোয়াড় ও জাতীয়তাবাদী ইমরান খানের পাকিস্তানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
সেই জনপ্রিয়তাকে ধরেই গত মাসের নির্বাচনের প্রচারে তিনি দুর্নীতির মূলোৎপাটন ও দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা করে ক্ষমতায় এসেছেন তিনি। দেশে ও দেশের বাইরে, সব মিলিয়ে একটি অস্থিতিশীল জাতির নেতৃত্ব এখন তার হাতে।
ইসলামাবাদকে এখন ব্যাপক অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদকে কেন্দ্র করে ঐতিহাসিক মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রতিবেশি আফগানিস্তান ও পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ দেশ ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না পাকিস্তানের।
দেশটির সংসদে বিরোধীরা ইমরানের বিরুদ্ধে বড় জোট ঘোষণা করতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই তাকে প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর পুতুল হিসেবে আখ্যায়িত করা শুরু হয়েছে। কিন্তু সেনাবাহিনীর গোপন সহযোগিতার সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ইমরান খান।
পররাষ্ট্র নীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ইতিহাস রয়েছে পাক সেনাবাহিনীর।
বিজয় ভাষণে ইমরান ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসারও প্রস্তাব দিয়েছেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিনি পারস্পরিক লাভের ভিত্তিতে সম্পর্ক নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইমরান খান ক্ষমতার পাঁচ বছর পূর্ণ করতে পারবেন কিনা তা নির্ভর করছে ক্ষমতাশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর। যদি পররাষ্ট্রনীতিতে তার আদর্শ সেনাবাহিনীর থেকে ভিন্ন হয়, তবে তাকে তার পূর্বসূরি বেসামরিক সরকারের ভাগ্য বরণ করতে হবে।
রাজনৈতিক ভাষ্যকার আমার আহমাদ খান বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে মতভিন্নতা দেখা দিলে তাকেও আগের সরকারগুলোর ভাগ্য বেছে নিতে হবে।
যেহেতু সামন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন, সেহেতু অন্যান্য দলগুলোর ওপর তাকে নির্ভর করতে হচ্ছে। কাজেই তার সামনে ঝুঁকি আগের সরকারগুলোর তুলনায় আরও বেশি।
দেশটিতে ইমরান খানের সরকারের ওপর এখন লাগামহীন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে তার তরুণ সমর্থকদের মধ্যে আকাশচুম্বি প্রত্যাশা জন্ম দিয়েছেন তিনি। তাদের বিশ্বাস, ইমরান খান পাকিস্তানকে দুর্নীতিমুক্ত ও একটি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।
পাকিস্তান ডেইলি টাইমসের সম্পাদক রাজা আহমাদ রুমি বলেন, ইমরানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে তার সমর্থকদের মধ্যে তৈরি হওয়া আকাশচুম্বি প্রত্যাশা পূরণ করা। কিন্তু তিনি তাদেরকে চাঁদ হাতে পাইয়ের দেয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। যা প্রায় অসম্ভব।
নির্বাচনের সময় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন চল্লিশ বছর বয়সের শেখ ফারাজ।
তিনি বলেন, আমি আমার মেয়েকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করেছি। আগে সে একটি বেসরকারি স্কুলে পড়ত। কারণ আমি বিশ্বাস করি, ইমরান খান পাকিস্তানকে বদলে দিতে যাচ্ছেন।
গত কয়েক দশক ধরে পাকিস্তান শাসন করছে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল। এ দুটি দলের বংশানুক্রমিক রাজনৈতিক প্রভাব থেকে দেশকে মুক্ত করায় সাধারণ মানুষও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
রাস্তান পাশে পতাকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন ৩৮ বছর বয়সী শাহ সুলতান। তিনি বলেন, ইমরান খানের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। আমরা নিম্ন শ্রেনির মানুষ। আগের রাজনীতিবীদদের প্রতি হতাশা থেকেই আমি ইমরান খানকে ভোট দিয়েছি। কারণ তারা আমদের জন্য কিছুই করতে পারেনি।
Posted ৭:২০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৯ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta