কক্সবাংলা সম্পাদকীয়(১৪ সেপ্টেম্বর) :: প্রবল বর্ষণে শুক্রবার মধ্যরাতে কক্সবাজার সদর উপজেলা ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাহাড়ধসের ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নে পাহাড়ধসে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়।
দেখা যায়, প্রতি বছর বর্ষার সময় কক্সবাজার ও আশপাশের জেলাগুলোতে পাহাড়ধসে মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটছে।
অতি বর্ষণে পাহাড়ধসে প্রাণহানি রোধে পাহাড়ের ঢালের ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনতে স্থানীয় প্রশাসনের নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানা যায়।
তারপরও একের পর এক মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে চলেছে। যা দুঃখজনক।
জানা গেছে, টানা ১২ ঘণ্টার ভারী বর্ষণে কক্সবাজার শহরের ৯০ শতাংশ এলাকা ডুবেছে। এমন ভারী বর্ষণ গত ৫০ বছরে দেখেননি কেউ।
ভারী বর্ষণের কারণে শহরের অভ্যন্তরে ১২টির বেশি পাহাড়ে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে পাহাড়ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এ প্রসঙ্গে স্মরণ করতে হয় ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বাটালি হিল ও বিভিন্ন স্থানে পাহাড়, দেয়াল ও ভূমিধসে ১২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা।
এত ব্যাপক আকারে না হলেও পাহাড়ধস এবং এতে হতাহতের ঘটনা কিন্তু প্রতি বছরই ঘটছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে- এর প্রতিকারে কী করতে পেরেছি আমরা?
গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, কক্সবাজার শহরের প্রায় ৭০০ একরে ছোট-বড় ১২টি পাহাড়ে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বর্তমানে ২০ হাজারের বেশি বাড়িঘর রয়েছে এবং অবৈধ এসব ঘরে কমপক্ষে আড়াই লাখ মানুষ বাস করছে।
বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশে প্রশাসনের জোরালো তৎপরতা দেখা গেলেও কক্সবাজার এসব এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
ফলে একের পর এক মর্মান্তিক প্রাণনাশের ঘটনা দেখতে হচ্ছে আমাদের।
পাহাড়ধস ও প্রাণহানির প্রতিটি ঘটনার পর তদন্ত কমিটি হয়, তারা বিভিন্ন সুপারিশ করে কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের তেমন গরজ থাকে না।
আরেকটি লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, পাহাড়ধসে প্রাণহানি-ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রশাসনের কিছু তৎপরতা দেখা গেলেও পাহাড়ধস ঠেকানোর ব্যাপারে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই।
শুধু প্রাকৃতিক কারণেই পাহাড়ধসে পড়ছে, তা কিন্তু নয়। নিয়ন্ত্রণহীন পাহাড় কাটা, পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণসহ আরো কিছু অপরিণামদর্শী মনুষ্য তৎপরতার পরিণামে ধসে পড়ছে পাহাড়।
অতি বর্ষণে প্রাণহানি ছাড়াও পরিবেশ-প্রকৃতিতে এর ভয়ংকর বিরূপ প্রভাব নিয়ে কারো কোনো চিন্তা আছে বলে মনে হচ্ছে না। পাহাড় কেটে চলছে প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রির রমরমা বাণিজ্য।
দীর্ঘকাল ধরে পাহাড় কাটা, স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা গাছপালা উজাড়ের ফলে পাহাড়ের অবশিষ্ট মাটি আলগা হয়ে যায়।
ফলে বৃষ্টি হলে পাহাড়ের গা বেয়ে তীব্র বেগে নেমে আসা ঢল আলগা মাটি ধুয়ে নিয়ে নিচে নামতে থাকে। পাহাড় হয়ে পড়ে দুর্বল, জীর্ণশীর্ণ। ঘটে পাহাড়ধস।
মারা যায় পাহাড়ের ঢালে বস্তিতে বাস করা নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষ।
শুধু বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের ঢালের বসতি উচ্ছেদের ব্যবস্থা করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, পাহাড়ধস ঠেকানোরও উদ্যোগ নিতে হবে।
পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনে সরকারের শীর্ষ মহলকেই এগিয়ে আসতে হবে।
Posted ১২:৫০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta