বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

পাহাড়েই জন্মস্থান পাহাড়েই শ্মশান

বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট ২০১৮
285 ভিউ
পাহাড়েই জন্মস্থান পাহাড়েই শ্মশান

কক্সবাংলা ডটকম(২৯ আগস্ট) :: ছেঁড়া একটি জামা পরে এদিক-ওদিক হাঁটছেন দুর্গাচরণ ত্রিপুরা। চারপাশে পাহাড়ঘেরা সোনাই ত্রিপুরাপাড়ার বাসিন্দা তিনি। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এত অভাবের মাঝে কীভাবে বেঁচে আছেন আপনারা?’

প্রশ্নটি মাটিতে পড়তে দিলেন না দুর্গাচরণ- ‘পাহাড় যতদিন আছে, ততদিন বেঁচে থাকব আমরা। পাহাড় আমাদের জন্মস্থান, পাহাড়েই আমাদের শ্মশান।’ কথাটা বলে একটু থামেন। তার পর পাড়ার দক্ষিণে পাহাড়ের দিকে আঙুল তুললেন-‘ওই পাহাড়ে আছে আমাদের খাবার পানির উৎস। নলকূপ নষ্ট থাকায় পাহাড়ে থাকা ছড়ার পানিই বাঁচিয়ে রেখেছে আমাদের। এ পাহাড়ে জুম চাষ করি।

এখানকার কাঠ বেচে সপ্তাহে দু’দিন বাজার করি, সাত দিন খাই।’ উত্তরের পাহাড়ের দিকে ইঙ্গিত করেন তিনি এবার- ‘আধা কিলোমিটার দূরে থাকা ওই পাহাড়েই দাহ হয় আমাদের। আমরা সমতলে থাকি। আমাদের পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি ছিল এখানেই। কিন্তু নিজ জায়গাতেই আমরা এখন পরবাসী। সমতলে দাহ করার মতো জায়গাও নেই আমাদের।’

গত সোমবার। ২৮ বছর বয়সী দুর্গাচরণের পাশে ছিলেন ত্রিপুরাপাড়ার সর্দার তাকিধন চাকমা। ৫৫ বছর বয়সী তাকিধনের চোখে ছানি পড়েছে। দেখতে পান না ভালো করে। ১০ হাজার টাকার অভাবে ১০ বছর ধরে চোখের এ ছানি বহন করে চলেছেন তিনি। বর্তমান তার কাছে ঝাপসা হলেও অতীত এখনও প্রখর- ‘২০০ থেকে ৩০০ বছর ধরে আমরা বসবাস করছি এ পাহাড়ের ভাঁজে। আরএস খতিয়ানমূলে নতুন চন্দ্র, ক্ষিরত চন্দ্র, চণ্ডীচরণ নামের কয়েকজনই ছিল এ জায়গার মালিক।

কিন্তু স্বাধীনতার পর আস্তে আস্তে পাল্টে গেছে মালিকানা। স্থানীয় প্রভাবশালীরা কেউ শক্তিতে, কেউ ছলে নামমাত্র মূল্যে পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে আমাদের ভিটে। ত্রিপুরাপাড়ায় ৫২টি ঘরে আছে ৫৫টি পরিবার। কিন্তু ১০ জনেরও নেই নিজস্ব ভিটেমাটি। স্থানীয় সাবেক মেম্বার নুরুল আলম মানিকের দয়ার ওপর বেঁচে আছি আমরা। এখানে যে ১৬০ গণ্ডা জায়গা আছে, তার অর্ধেকেরই মালিক নুরুল আলম মানিক।’

এলাকায় নুরুল আলম মানিকের ব্যাপক প্রভাব। বাবা হাজি মফজল মিয়া সওদাগরের নামে এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও আছে। তিনি বর্তমানে এলাকায় না থাকায় কথা বলা হয়নি তার সঙ্গে। ত্রিপুরাপাড়ার কারও কাছে নেই তার মোবাইল নম্বরও। মাঝেমাঝে এলাকাতে দেখা যায় তাকে। তখন অভয় দিয়ে নাকি তিনি বলেন, ‘আমার জায়গায় তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। যতদিন ইচ্ছে ততদিন থাকো।’

মানিকের কথাই এখন আইন মানে ত্রিপুরাপাড়ার ৩৭০ জন বাসিন্দা। কারণ মালিকানা নিয়ে তার সঙ্গে তর্ক করার মতো কোনো দলিলই যে নেই ত্রিপুরাবাসীর হাতে।

এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ির বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও উন্নয়ন কর্মী মথুরালাল ত্রিপুরা বলেন, ‘শত শত বছর ধরে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে বসবাস করে আসছে ত্রিপুরারা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত ভূমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়াতে হয়নি তাদের। কিন্তু যুদ্ধের ডামাডোলে ত্রিপুরারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন থেকে ভূমির মালিকানাও হাতছাড়া হতে থাকে তাদের। কেউ শক্তি দিয়ে জায়গার দখল নেয়, কেউবা নামমাত্র মূল্যে কিনে নেয় ভূমি। বাংলাদেশে পৌনে দুই লাখ ত্রিপুরা বাসিন্দা থাকলেও এদের বেশিরভাগই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে খাগড়াছড়িতে। এখানে প্রায় ৮৬ হাজার ত্রিপুরা ধর্মাবলম্বী রয়েছে।’

শুধু ভূমি নয়, আয়ের জন্যও এখন প্রভাবশালীদের মুখাপেক্ষী ত্রিপুরাপাড়ার বাসিন্দারা। সোনাইপাড়া ত্রিপুরাপল্লীর চারপাশে যেসব ভূমি আছে তার বেশিরভাগেরই মালিক এখন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাদের জমিতে বর্গা চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করে ত্রিপুরারা। ৩৫ বছর বয়সী লক্ষ্মী কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জমিতে কাজ করে ২৫০ টাকা মজুরি পাই। মেয়েরা পায় আরও ৫০ টাকা কম। অথচ আমাদের এ এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে আরও কম সময় কাজ করে প্রত্যেক শ্রমিক দিনে মজুরি পায় ৫০০ টাকা।’

৫০ বছর বয়সী ধর্মচরণ ত্রিপুরা বলেন, ‘পাহাড়েও শোষণ করা হচ্ছে আমাদের। সরকারি বন বিভাগের কাজ করলে পুরো দিনে মজুরি দেয় মাত্র ২০০ টাকা। মেয়েদের দেয় ১৫০ টাকা। অথচ অন্য জায়গায় এটি দ্বিগুণ।’

আয় নিয়ে এমন বৈষম্য তৈরি হওয়ার প্রভাব পড়েছে ত্রিপুরাদের জীবনমানে। ভালো কোনো পোশাক পরতে পারে না তারা। সন্তানকে পাঠাতে পারে না স্কুলে। অসুখ হলেও চিকিৎসা নেওয়ার সাহস দেখায় না তারা। নিশি কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘বাজারের জন্য খুব বেশি টাকা থাকে না আমাদের। আশপাশের শাক-পাতা দিয়েই চলছে জীবন। মাঝেমধ্যে যাই কাটিরহাট বাজারে।’

ত্রিপুরাপাড়ার জীবনমান উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাদের কাছে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। রাস্তাঘাটও সংস্কার করা হবে। ‘

285 ভিউ

Posted ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com