নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(৭ নভেম্বর) :: পেকুয়ায় সংবাদ ব্রিফিং করল নিহত মানিক(১৫) এর পরিবার। মঙ্গলবার ৭ নভেম্বর বিকেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে মিলিত হয়েছেন নিহত মানিকের পরিবার। এ সময় পেকুয়ায় গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে লিখিত প্রেস ব্রিফিং করেন নিহত মানিকের বড় ভাই বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ পেকুয়া উপজেলা শাখার প্রচার সম্পাদক ও মানিক হত্যাকান্ডে মামলার বাদী মোহাম্মদ হারুন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেছেন, বাদি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ধানক্ষেত থেকে ভিকটিম মানিকের মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে। লাশ মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। বেওয়ারিশ লাশ উল্লেখ করে সেটি সংরক্ষনের জন্য আনজুমান মফিদুল ইসলামকে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু দ্রুত সময়ে লাশটি মাটি চাপা দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রিক মিডিয়া সহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে লাশের ছবি পোস্ট করা হয়।
ওই ছবি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে লাশটি আমার ভাই মানিকের। পেকুয়া থানায় সেটি নিশ্চিত করেছি। তড়িঘড়ি করে মফিদুল ইসলাম থেকে লাশটি মাটি চাপা দেয়া হয়। এটি খুনীদের দুরন্ত কৌশল। আমার ভাই মানিককে নির্মম ও নিষ্টুরভাবে খুন করা হয়েছে। আমার বড় ভাই যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ সেকান্দর দুই বছর কারান্তরীন।
গত ২ বছর ধরে একটি প্রভাবশালী চক্র আমাদের সর্বনাশ করার চেষ্টায় লিপ্ত। এর জের ধরে একটি জঘন্য মিথ্যা মামলায় ভাই কারাবরন করছে। আমি ও আমার অপর ভাইদেরও প্রান নাশ ঘটানোর কৌশল ছিল খুনীদের। এ ভাবে আমার ভাই মানিক ঘাতকদের হাতে নিষ্টুরভাবে খুন হয়েছে। আমার পুরো পরিবার মুক্তিযোদ্ধের স্বপক্ষের রাজনীতিক দলের অনুগত। সবাই নিবেদিত প্রান।
একটি কতিপয় চক্র আমাদের গতি ও চলাফেরা স্তব্দ করার প্রয়াস করছিল। তারা আমাদের পরিবারের উপর লেগে রয়েছে। মানিককে কৌশলে ডেকে এনে খুন করা হয়েছে। খুনীদের লবিং ও দৌড়ঝাপ অত্যন্ত শক্তিশালী।
তারা সংঘবদ্ধ ও সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তি। মানিক খুন হওয়া পরবর্তীতে লাশ উদ্ধারের এ ঘটনা গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করছে খুনীরা। ওই ঘটনায় আমরা বাদীপক্ষ যাতে করে কোন ধরনের আইনী সহায়তা না পেতে পারি তারা নেপথ্যে থেকে সেটিতে কাজ করছে। আমরা মামলা করেছি। একজন নিষ্পাপ ও নিরপরাধ ভাইকে খুন করা হয়েছে। আইনী সহায়তার জন্য মামলা করেছি। লাশ উদ্ধার ও পরিবারের নিকট হস্তান্তরের জন্য আদালতে আশ্রয় নিয়েছি। বাদীপক্ষকে আইনী সহায়তা ও লাশ উত্তোলন পূর্বক হস্তান্তর করতে আদালত আদেশ দিয়েছে।
সম্পূরক এজাহার হিসেবে নিয়মিত মামলায় অন্তর্ভূক্ত করতে আদেশ দেন। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের আদেশ এখনও কার্যকর করেননি। চিহিৃত খুনীরা বর্তমানেও বীরদর্পে ঘোরাঘুরি করছে। তারা অধরা। প্রশাসন তাদের পক্ষে কাজ করছে। এমনি মুহুর্তে আমরা মনে করছি আমার ভাই মানিকের হত্যাকান্ডের এ ঘটনা প্রশাসন ও আসামী মিলে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। তারা দুর্দান্ত খুনী। মানিক নিহত হওয়ার পর আমার মা, বাবা বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। পরিবারে হৃদয় বিদারক দৃশ্য তৈরী হয়েছে। এ মর্মান্তিক ও নিষ্টুর ঘটনার জন্য পুরো এলাকায় স্তব্দ তৈরী হয়েছে। মা, বোন, বাবা, ভাই সবাই বাকরুদ্ধ।
বিলাপ ও আহাজারী পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে থেমে দিয়েছে। হৃদয় বিদারক দৃশ্যে উজানটিয়ার আকাশ বাতাস ভারী হয়েছে। অথচ খুনীরা আরো অধিক ক্ষিপ্ত ও হিংস্র হচ্ছে। তারা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হাকাবকা করা হচ্ছে। আমরা ন্যায় বিচার চাই। আমার ভাইয়ের খুনীদের অবিলম্বে গ্রেফতার দাবী করছি। লাশ উত্তোলন পূর্বক আমাদের নিকট হস্তান্তরের জোরালো দাবী করছি। খুনীরা অধরা থাকলে আমাদের পরিনামও ভাইয়ের মত হতে পারে এ শংকায় প্রতিটি সদস্য।
বিকেলে উজানটিয়া ইউনিয়নের ঠান্ডারপাড়া এলাকায় এ সংবাদ ব্রিফিং হয়েছে। নিহত মানিকের হত্যাকান্ডের বিচার ও আসামীদের গ্রেফতার দাবীতে এ সংবাদ ব্রিফিং হয়েছে। এ ছাড়া লাশ উত্তোলন করে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করতে লাশটি পরিবারের নিকট হস্তান্তরের দাবীও উঠেছে সংবাদ ব্রিফিং থেকে। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মামলার বাদী মানিকের ভাই মোহাম্মদ হারুন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মানিকের পিতা মোক্তার আহমদ, মা জিগারা বেগম, বড় ভাই সেলিম ও আমজাদ। ভাবী শাহেদা বেগম, কামরুন্নাহার, বোন রেহেনা বেগম, শাহারু বেগম, মনোয়ারা বেগম।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ওই এলাকার গৃহবধূ কাজল, কামরুন্নাহার, কাজল, রেনু আরা বেগম, ফরিদা বেগম, ময়ুরা বেগম, জন্নাতুল ফেরদৌস, লায়লা বেগম, মুন্নি আক্তার ও জন্নাতুল ফেরদৌস।
এছাড়া সংবাদ ব্রিফিংয়ে ঠান্ডারপাড়া, সুতাচুরা, পেকুয়ারচর সহ আশপাশের বিপুল মহিলা সমবেত হয়েছেন।
Posted ৭:১১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ নভেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta