নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(৩ এপ্রিল) :: পেকুয়ায় গোপনে কমিটি গঠন নিয়ে টইটং ইউনিয়নের বটতলী শফিকিয়া মাদ্রাসায় অচলাবস্থা তৈরী হয়েছে। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে এ মাদ্রাসায়। এতে করে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শংকা দেখা দেয়।
পরিচালনা কমিটিকে অবিহিত না করে গোপনে শিক্ষক প্রতিনিধি নিয়োগের পায়তারা চুড়ান্ত করে অধ্যক্ষ। এ নিয়ে বিরোধের মুল কারন। এ দিকে ওই ঘটনায় টালমাটাল হয়েছে মাদ্রাসা প্রাঙ্গনসহ টইটং ইউনিয়নের উত্তরের পাহাড়ী জনপদ বটতলীতে।
অধ্যক্ষের এহেন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হয়েছে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকসহ সচেতন মহল। প্রকাশ্যে ও ¯œায়ু বিরোধের জের ধরে বটতলী শফিকিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষাঙ্গনে এর নীতিবাচক প্রভাব তৈরী হয়েছে। সম্প্রতি বিরোধ আরও প্রকট আকার ধারন করে।
অভিভাবক ও সচেতন মহল এ উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্য অধ্যক্ষ ছাবের আহমদকে দায়ী করেছেন। অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবীসহ গোপনে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন বাতিলসহ এ সৃষ্ট গোলযোগ পরিস্থিতি অবসানে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকৃষ্ট করা হয়েছে।
এ দিকে শফিকিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। পরিচালনা কমিটি এ অভিযোগ দেয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে এর দায়িত্বভার ন্যস্ত করে। সম্প্রতি শফিকিয়া মাদ্রাসায় পরিচালনা কমিটি ও অধ্যক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
শিক্ষক প্রতিনিধি মনোনীত নিয়ে বিরোধের মুল সুত্রপাত। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিকে অবহিত না করে অধ্যক্ষ অনেকটা নিরব ও নিস্ক্রিয়তার মাঝে দু’জন শিক্ষক প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়। এ নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরী হয়। গত বুধবার ৪ এপ্রিল অভিভাবকগন মাদ্রাসার গোলযোগ পরিস্থিতি নিরসনের উদ্যোগ নেয়।
ওই দিন দুপুরে অর্ধশতাধিক অভিভাবক মাদ্রাসায় জড়ো হয়। তারা স্বচ্ছ ও গনতান্ত্রিক উপায়ে শিক্ষক প্রতিনিধি নিয়োগের জন্য অনুরোধ জানায় অধ্যক্ষকে। এ সম্পর্কিত বিষয়ে মাদ্রাসার অফিস কক্ষে বৈঠক হয়। বৈঠকে কমিটি নিয়ে আলোচনা চলছিল। এ সময় অধ্যক্ষ ছাবের আহমদ অভিভাবকদের উপস্থিতিতে বিরক্তিভাব প্রকাশ করে।
এক পর্যায়ে তিনি তেলে বেগুনে জ¦লে উঠে। বৈঠকে এক প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে প্রশ্ন উত্তাপনকারী একজন অভিভাবককে উদ্দেশ্য করে বকাঝকা করে। এ সময় তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বলেন আমাকে কেউ কিছু করতে পারবেন না। আমি কারও এ সব তোয়াক্কা করিনা। বটতলীর লোকজন প্রতিবাদ করলে আমার কি আসে যায়।
এমন কান্ড জ্ঞানহীন অধ্যক্ষের এ বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন ও দেমাগ আচরনে অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা হতাশ ও হতভম্ব হন। এ সময় এ আচরনে তারা প্রতিবাদী হন। বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করা হয়েছে। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
মুহুর্তের মধ্যে অভিভাবকগন ব্যাপকহারে মাদ্রাসায় জড়ো হয়। শ্রেনীকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হয়। শিক্ষকরা দ্রুত ছুটে যান অধ্যক্ষের কক্ষে। এ সময় প্রকাশ্যে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর আচরনে অভিভাবকরা প্রতিবাদী হয়েছেন এ পরিস্থিতি দেখতে পান তারা। শিক্ষকরা উত্তেজনা প্রশমিত করে। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষের পক্ষে তারা ক্ষমা চান।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য আবদু রহিম জানায়, ছাবের আহমদ গোপনে কমিটি গঠনের কাজে হাত দিয়েছে। আমরা সরকারের অনুসৃত নীতিমালার পক্ষে। ১৯৮০ সালে এ মাদ্রাসা প্রতিষ্টিত হয়। প্রতিষ্টালগ্নে মাদ্রাসার প্রতিষ্টাতা মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম। তার এ অর্জন বিলুপ্তির অবসান ঘটাতে চাই এ অধ্যক্ষ। তাকে বাদ দিয়ে এ স্থলে আরেকজনকে সম্পৃক্ত করার কাজ চলছে। আমরা এ সবের বিরোধী।
অভিভাবক জানায়, ছাবের আহমদ একজন অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি। মাদ্রাসায় তার ভ্রান্ত নীতির বহি:প্রকাশ ঘটেছে। কোন কোন শিক্ষক দিনের পর দিন অনুপস্থিত থেকে থাকেন। ১২ টা ও ১টার দিকে ক্লাসে আসে অনেক শিক্ষক। এরা অধ্যক্ষকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে।
সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করতে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের দেশ ও রাজনৈতিক দল আ’লীগ নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে ব্যস্ত। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যাপকহারে টাকা পয়সা নেয়া হয়। সরকারের দোষ দিয়ে এ সব টাকা নানা অজুহাতে হাতিয়ে নেয়। মাদ্রাসায় কোন ধরনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতাও নেই। সরকারের বিনামুল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরনেও টাকা হাতিয়ে নেয়।
ইউপি সদস্য আবুল কাশেম জানায়, সে দিন আমিও ছিলাম। একজন দায়িত্বশীল মানুষ এমন আচরন করবে সেটি বিশ^াস ছিল না। আসলে তার মধ্যে নৈতিকতা ও ভদ্রতা থাকার প্রশ্ন অবান্তর। এ ধরনের প্রধানের কাছ থেকে জাতি কি আশা করতে পারে। অভিভাবক আবুল কালাম, জসিম উদ্দিন, আবু মিকার জানায়, সে একজন অসভ্য লোক। আমরা বেতন দিই।
জানার অধিকার অবশ্যই আমাদের আছে। কিভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করল। জ্ঞান ও ভদ্রতা কি তার মাঝে নেই। আসলে অসভ্য ও দুর্নীতিবাজরা এ ধরনের আচরন করতে পারে। আমরা তার পদক্ষেপ চাই। ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্টান বড়। আমরা চাইনা একজন বিতর্কিত মানুষের দ্বারা আলোর দর্পন শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষা ব্যবস্থায় অধ:পতন ঘটুক। এ সবের তদন্তের প্রয়োজন।
জানতে চাইলে বটতলি শফিকিয় মাদ্রাসার সুপার ছাবের আহমদ জানায়, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। আমরা কমিটি গঠন করিনি। তবে নীতিমালায় টিআর নিয়োগে অধ্যক্ষের ক্ষমতা আছে। আমরা পিকনিক আয়োজন করেছিলাম। শিক্ষকরা এ আয়োজন করেছিল। আমি একটু রাগী মানুষ। তাই বড় গলায় কথা বলেছি। এ সবের জন্য আপনাদের কাছ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি।
Posted ৮:৩১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৮ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta