বিশেষ প্রতিবেদক,পেকুয়া(২০ আগস্ট) :: পেকুয়ায় এবার স্বামী-স্ত্রীকে আটকিয়ে জমি রেজিস্ট্রি নিল সেই ভয়ানক চক্র। শরীরে ইনজেকশন পুশ করে। প্রায় ১১ ঘন্টা অচেতন রাখা হয়েছে। এ সময় চেতনা নাশক পুশ করে স্বামীকে তারা। এক পর্যায়ে ওই চক্র স্বামীকে জিম্মী করে ৪০ শতক জমি কবলা নেয়।
এ সময় একটি বাড়িতে কমিশন গঠিত হয়েছে। সেখানে সাব রেজিষ্ট্রার ও এই অফিসের প্রধান সহকারীসহ তাদের অনুগতদের উপস্থিত করানো হয়। এক পর্যায়ে তারা ভয়ানক ওই মাস্তান চক্রসহ সবাই মিলে স্বামীর কাছ থেকে ওই জমি কবলা নেয়। এমনকি একই জিম্মী দশায় ওই ব্যক্তি প্রায় ৪ দিন আটক ছিল। একটি কক্ষে তাকে জিম্মী করে।
এ সময় ওই মাস্তানচক্র তাকে ৫ লক্ষ টাকা এনে দিতে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন ও মানসিক নিপীড়ন চালায়। প্রায় ৪ দিন পর কৌশলে স্বামী-স্ত্রীকে একত্রিত করে তারা। মুক্তি দেওয়ার কথা বলে পেকুয়া থেকে এ ব্যক্তিকে চকরিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার স্ত্রীকে যেতে বলা হয়েছিল।
কথা মতে, ওই ব্যক্তির স্ত্রী সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। গতিবিধি সন্তোষজনক হয়নি। তারা সে দিক থেকে ফিরে আসে পেকুয়ায়। এরপর ওই মাস্তানচক্র জিম্মী দশা হতভাগা ব্যক্তির মুঠোফোনে স্ত্রীর সাথে কথা বলিয়ে দেয়। স্ত্রী স্বামীকে উদ্ধার করতে ভয়ানক এ বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিল। তারা এ নারীকেও পৃথক কক্ষে আটকিয়ে রাখে। চলে প্রচন্ড নির্যাতন। অমানবিক বর্বরতা চলছিল এ নারীর উপর।
স্বামীর আর্তচিৎকার স্ত্রীকে শুনাচ্ছিল। এমনকি স্ত্রীর বিভৎস নির্যাতন ও ভয়ানক অত্যাচারের এ দৃশ্য স্বামীকে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ দিয়েছিল। এমন পাতানো ফাঁদ ও নির্যাতনের ভয়ানক কৌশলে অবশেষে হার মানতে বাধ্য হয় এ দম্পতি। তারা জিম্মী দশা থেকে মুক্তি পেতে ওই চক্রের দাবীতে সায় দেয়। এ সময় স্বামী-স্ত্রীকে চোখ বেঁধে তারা বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে এ ২ জনকে পেকুয়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক শাখায় নিয়ে যায়। ওই শাখায় এ ব্যক্তির নামে একাউন্ট আছে। খালি চেক বহিতে স্বাক্ষর নেয় তারা। ওই শাখার এক নারী কর্মকর্তা হিসাব বহিতে টাকার অংক লিখে দেয়। সুত্র জানায়, প্রায় ৫ লক্ষ টাকা তারা ওই ব্যাংক থেকে এ ব্যক্তির টাকা হাতিয়ে নেয়।
এ ভাবে পেকুয়ায় ওই ভয়ানক চক্র জমি ও ৫লক্ষ টাকা লুফে নেয়। প্রায় ৪ দিন আটকিয়ে রাখা হয়েছিল। অমানবিক নির্যাতনের পর ওই ব্যক্তি জিম্মী দশা থেকে মুক্তি পায়। ফের চেতনা নাশক পুশ করে তাকে রাস্তার ধারে ফেলে যায় তারা। অজ্ঞান অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে পেকুয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু স্বামী ও স্ত্রীকে পৃথক স্থানে ছেড়ে দেয়। যাতে করে তারা কোন ধরনের মুখ না খোলেন সে দিকে দৃষ্টি ছিল ওই চক্রের।
তারা এ পরিস্থিতিতে স্বার্থকও হয়েছে। যেহেতু জমি ও ৫ লক্ষ টাকা সহ ওই ব্যক্তির স্থাবর অস্থাবর মোট ৭০ লক্ষ টাকা নগদে জমিরমুল্যসহ হাতিয়ে নেয়। পেকুয়ায় এ ভয়ানক জিম্মী দশার খবর ছড়িয়ে পড়ছিল। এ সময় এ চাঞ্চল্যকর খবরে আঁতকে উঠছিল অনেকের লোম।
এ খবর জানাজানি হলে মানুষ আতংকিত হয়। দেখা দেয় ভয়ানক পরিস্থিতি। সাহসে কেউ মুখ খোলেনি। তবে নিরব ঘৃনা ও প্রতিবাদ প্রকাশ করছিল। সম্প্রতি পেকুয়া উপজেলায় এ ভয়ানক জিম্মী দশা সহ জমি রেজিস্ট্রি ও ব্যাংক চেকে স্বাক্ষর আদায়ের জঘন্যতম ঘটনা ঘটে। সদর ইউনিয়নের কলেজ গেইট চৌমুহনী নিকটতম স্থানে আন্নরআলী মাতববরপাড়ায় এ জিম্মী কান্ড হয়েছে।
গত মাসের ১৫ জুলাই চাঞ্চল্যকর এ জিম্মী দশা হয়েছে। জিম্মী দশা থাকা ব্যক্তির নাম নজরুল ইসলাম(২৫)। তিনি সদর ইউনিয়নের শেখেরকিল্লাঘোনার মৃত বশরত আলীর পুত্র। তারা সর্বস্ব হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে। এ জিম্মী চক্রের বিরুদ্ধে এ পরিবার আইনী পদক্ষেপ নিতে এখন তৎপর। এর সুত্র ধরে হয়রানি ও সর্বশান্ত হওয়া পরিবারটি বিচার দাবী করছিল।
তারা সরকার ও রাষ্ট্র থেকে আইনী সহায়তা চাই। বিচার ব্যবস্থার দ্বারস্থ হয়েছে। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন এর র্যাব-৭ সাথে কমান্ডারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কক্সবাজার পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনিক দপ্তরে এ জঘন্যতম অপরাধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ দেয়। অনেকদিন তারা নিচ্ছুপ ছিল। ভয়ে ও জীবন নাশের শংকায় তারা মুখ খোলেনি। তবে অনেকদিন পর প্রতিবাদ জাগরিত হয়।
গত মাসের ২৮ জুলাই র্যাব-৭সহ বিভিন্ন অধিদপ্তরে অভিযোগ দেয়। এমনকি এ বিষয়ে আদালতে মামলা ঠুকিয়ে দিয়েছে হয়রানির স্বীকার হতভাগা নজরুল। এ জিম্মী দশায় প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে পেকুয়ার আলোচিত সেই জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ গরু জাহাঙ্গীরকে। তাছাড়া তার ভাই আজমগীর প্রকাশ মাস্তান আজম ও ছোট ভাই ওসমান ছরওয়ার বাপ্পীসহ ১৪ জনকে এ জিম্মী দশার অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এ দিকে পেকুয়ায় সেই জাহাঙ্গীরের পরিবারের চাঁদাবাজি ও জিম্মী দশায় মানুষের জানমালের চরম অবনতি হয়েছে। তার ভাই আজমগীর প্রকাশ মাস্তান আজম রাজনীতির লেবাস পরে পেকুয়ায় মাস্তানদের শক্তিশালী বলয় তৈরী করে। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে এ পরিবারের হাতে শত শত মানুষ নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। মানুষ চাঁদা না দিলে চৌমুহনীর আশপাশসহ বেশ কিছু স্থানে স্থাপনা ও বাড়িঘর তৈরী করতে বাধা গ্রস্ত হচ্ছে। ডিসি সড়কে এমন কোন বাড়ি ঘর নেই যে সব থেকে তারা চাঁদা নেয়নি।
আজমের চাঁদা পেকুয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিবারটি এক সময় নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাওয়ার মত পরিস্থিতি ছিল। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে এ পরিবারের প্রত্যেক সদস্য কোটিপতি। এখন আলিশান কয়েকটি দালান ও বাড়ি এ পরিবারে। জমি ও ব্যাংক ব্যালেন্স কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক জাহাঙ্গীরের পরিবার।
সর্বশান্ত হওয়া নজরুল ইসলাম জানায়, আমি ৪ দিন জিম্মী দশায় ছিলাম।চৌমুহনী থেকে নুর মোহাম্মদ নামের ব্যক্তি জাহাঙ্গীর মেম্বার ডেকেছেন বলে কথা দিয়ে নিয়ে যায়। আজমের ভাড়া বাসায় আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জাহাঙ্গীর মেম্বারসহ কয়েক জন ছিল। আমার কাছ থেকে প্রথমে মোবাইল নিয়ে ফেলে। এরপর একটি রুমে আটকিয়েছে। গরু জাহাঙ্গীর ধমক দেয়।
গালাগালি শুরু করে। ব্যাপক নির্যাতন আরম্ভ করে। আমাকে রাতে অজ্ঞান করা হয়। সব ছিল পরিকল্পিত। আমাকে নি:স্ব করে দিয়েছে। এখন বেঁচে থাকার মত পথ রইল না আর। আমার স্ত্রীকেও তারা কৌশলে নিয়ে এসে আটকিয়ে রাখে। অমানসিক নির্যাতন চালায় তাকেও।
এ ঘটনায় আদালতে একটি নালিশী মামলা দায়ের করা হয়েছে।
Posted ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta