নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(৩০ জানুয়ারী) :: পেকুয়ায় সদর ইউনিয়নের দক্ষিন মেহেরনামায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনাসহ নানা অপরাধ তৎপরতা বেড়ে গেছে। সংঘাত ও সংঘর্ষ হয়েছে কয়েকটি পক্ষের মধ্যে। এতে করে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
সৃষ্ট ঘটনার জের ধরে মেহেরনামা এলাকায় সম্প্রতি দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। পেকুয়া থানায় গত ১৫ দিনের ব্যবধানে দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে।
মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা দেলোয়ার হোসেন(১৭)কে আসামী করা হয়। সৃষ্ট ঘটনায় দু’পক্ষের মধ্যে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলার বাদী শামশুদ্দোহা,বিএনপির রাজনীতির প্রভাবশালী নেতা। একটি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে ১ জন নারী বাদী হয়ে এ মামলায় শামশুদ্দোহাকে প্রধান আসামী করে। এ মামলায় ৯ জন আসামী।
অপরদিকে শামশুদ্দোহার ২ টি মামলায় একই পরিবারের ৪ জনসহ পৃথক ১৭ জনকে আসামী করা হয়।
আসামীদের মধ্যে সদর ইউনিয়নের আ’লীগের প্রবীন সংগঠক ও সাবেক মেম্বার ফিরোজ আহমদ, তার ছেলে ওয়ার্ড আ’লীগ নেতা আতিকুর রহমান, ছাত্রলীগ সদর ইউনিয়নের প্রভাবশালী নেতা ফিরোজ মেম্বারের নাতী দেলোয়ার হোসেন(১৭) কে আসামী করা হয়।
পাল্টাপাল্টি মামলা ও হাকাবকাসহ মুখোমুখি অবস্থানকে ঘিরে মাতামুহুরী নদীর তীর ঘেষা সদর ইউনিয়নের দক্ষিন মেহেরনামায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি দেখা দিয়েছে।
পুলিশ ১ জনকে আটক করে। তবে আটককৃত ব্যক্তি ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের কর্মী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিএনপি নেতা শামশুদ্দোহা চক্রান্তের ফাঁদে তাকে ষড়যন্ত্রমুলক ভাবে ফাঁসায় বলে দক্ষিন মেহেরনামার লোকজন নিশ্চিত করেছেন। আটককৃত ব্যক্তির নাম ইয়ার মোহাম্মদ। তিনি জেল হাজতে অন্তরীন। পৃথক ঘটনায় ১ টি মামলার বাদী ইয়ার মোহাম্মদের স্ত্রী মোর্শিদা বেগম(৩০)।
গত ২৬ জানুয়ারী পেকুয়া থানায় ১ টি সাধারন ডায়রী লিপিবদ্ধ হয়। যার নং ১০৩১। সেটি পরবর্তীতে মামলায় রুপান্তর হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সুত্র জানায়, গত ১৯ জানুয়ারী শামশুদ্দোহার নেতৃত্বে একদল উত্তেজিত লোকজন ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ারকে ধরতে ফিরোজ মেম্বারের বাড়িতে হানা দেয়।এ সময় তারা দেলোয়ারকে ব্যাপক মারধর করে। টানা হেচড়া করে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে বাঁচাতে এলাকাবাসীরা ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এ ঘটনার জের ধরে শামশুদ্দোহা পেকুয়া থানায় ১৪ জানুয়ারী ও ১৯ জানুয়ারী ৬ দিনের ব্যবধানে ২ টি মামলা দায়ের করে। যার নং ১১/১৭, ৭/১৭।
সুত্র জানায়, শামশুদ্দোহা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় এ ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়ে তার দলের মধ্যে। এ সময় ফিরোজ মেম্বার ও আতিকুর রহমান গংদের হামলা চালাতে বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির ক্যাডাররা মেহেরনামায় যায়। রাতে তারা ফিরোজ মেম্বারের বাড়ি ও ইয়ার মোহাম্মদের বাড়িতে হানা দেয়।
অস্ত্র স্বস্ত্র নিয়ে এলাকায় ভীতি ছড়ায় শামশুদ্দোহার অনুগত ভাড়াটে লোকজন। এ সময় ইয়ার মোহাম্মদের বাড়িতে রাতে আক্রমন করে তারা। ইয়ার মোহাম্মদের স্ত্রী মুর্শিদা বেগম বিষয়টি মুঠোফোনে পেকুয়া থানার পুলিশকে জানায়।
এ সময় পুলিশ কর্মকর্তা এস,আই কামরুল হাসান ওই মহিলার অপর প্রান্ত থেকে মুঠোফোন পেয়ে তেলে বেগুনে জ¦লে উঠেন। মুর্শিদা বেগম জানায়, এস,আই কামরুল আক্রমনের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তাকে উল্টো হাকাবকা ও ধমকি দেয়।
মুর্শিদা জানায়, এস,আই কামরুল সরাসরি বিএনপি নেতা শামশুদ্দোহার পক্ষে অবস্থান নেয়। তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমার স্বামীকে মামলায় জড়িয়ে জেলে পাঠায়।
আতিকুর রহমান জানায়, শামশুদ্দোহা একজন বর্বর ও নিকৃষ্ট চরিত্রের অত্যাচারী মানুষ। সে বিএনপি করে। আর আমরা করি আ’লীগ। তার অত্যাচারে এখানে আওয়ামী রাজনীতি করা অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। সে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামী। পুলিশ এ সল্ট মামলাসহ তার বিরুদ্ধে ১০/১২ টি মামলা রয়েছে। সরকার উৎখাত করতে গত কয়েক বছর আগে তার নেতৃত্বে মেহেরনামা থেকে বিএনপির ক্যাডাররা অস্ত্র স্বস্ত্র নিয়ে মিছিল নিয়ে পেকুয়া প্রশাসনিক কেন্দ্রে এসেছিল।
এ সময় পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী মামলা হয়। ফিরোজ মেম্বার জানায়, শামশুদ্দোহা অত্যাচারী বিএনপি নেতা। পুলিশ তার কথায় উঠাবসা করে।
এস,আই কামরুল আ’লীগ নিধনে ফের পেকুয়ায় এসেছে। দুটি মামলায় আসামী করা হয়েছে আমাকে এ বয়সে। দেশের জন্য অস্ত্র ধরেছিলাম। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিয়েছি। জনপ্রতিনিধিত্ব করেছি। কিন্তু আজকে বিএনপির এ সন্ত্রাসীরা আমাদেরকে আসামী করার খেলায় মেতেছে।
সদর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি এম,আজম খান জানায়, ফিরোজ মেম্বার আমার ইউনিয়ন আ’লীগের সহসভাপতি, তার ছেলে আতিক ওয়ার্ড আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তারা আ’লীগের তৃনমুলের প্রান।
আসলে ফিরোজ মেম্বারের পরিবার আ’লীগের পক্ষে অবস্থান না নিলে এখানে কারও পক্ষে আ’লীগ বলে পরিচয় দেওয়ার মত সাহস রাখে না। শামশুদ্দোহার বিএনপির আমলে জ্যান্তা মহিষ ধরে নিয়ে জবাই করে মাংস বিক্রি করেছে।
আ’লীগের রাজনীতি করে বলে সে সময় এ মহিষটি তারা বিল থেকে নিয়ে গিয়েছিল। এ বিচার চলছে বর্তমানে। আসলে প্রশাসন এ ভাবে হলে আমরা কিভাবে আ’লীগ করব।
Posted ১০:৩৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta