নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(১৮জুলাই) :: পেকুয়ায় সোনালী গণপাঠশালা বিদ্যালয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ওই বিদ্যালয়ের জন্য সরকার একটি নতুন ভবন বরাদ্ধ দেয়। শিক্ষা কার্যক্রম বেগবান করতে ওই নতুন ভবন নির্মাণকাজ শীঘ্রই আরম্ভ করা হচ্ছে।
তবে নতুন ভবন নির্মাণে স্থান চুড়ান্ত ও জায়গা বাছাইকরন নিয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছিল। এতে করে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের দক্ষিন ও পূর্ব অংশে অবস্থিত মটকা ভাঙ্গা সোনালী গণপাঠশালা স্কুলে দ্বন্ধ দেখা দিয়েছে। বিদ্যালয়ের এরিয়া থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে বরাদ্ধকৃত ওই ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চুড়ান্তকরন করা হয়েছে। এ নিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে বনিবনা তৈরী হয়েছে।
অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী স্কুল ভবন স্থানান্তরের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তারা এ ধরনের সিদ্ধান্তকে হটকারী বলে আখ্যায়িত করছিলেন। সোনালী গণপাঠশালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সম্প্রতি অচলাবস্থা দেখা দেয়। সরকার এ প্রতিষ্টানটি জাতীয়করনের আওতায় নেয়।
সারাদেশে ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরন হয়েছে। সোনালী গণপাঠশালা বিদ্যালয় এর আওতায় সরকারীকরন হয়। ভবন নির্মাণ নিয়ে বর্তমানে চরম অচলাবস্থাসহ দ্বন্ধ প্রকট আকার ধারন করে।
এর সুত্র ধরে গত ২ মাসের ব্যবধানে এ বিদ্যালয়ে অধপতন দেখা দেয় শিক্ষা কার্যক্রমে। প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অনৈক্য স্পষ্টতর হয়ে যায়। এ সময় এ স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রমে ধস নামে।
বিশেষ করে, অনেক ছাত্র ওই স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অভিভাবক সন্তানদের এ স্কুল থেকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করায়। সম্প্রতি স্কুলের রেকর্ডপত্র গায়েব হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, গণপাঠশালা স্কুল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় আছে। দরজা জানালা প্রায় বিনষ্ট হয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ কিছু শিক্ষক এ বিদ্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও রেকর্ডগুলি গায়েব করে। মটকাভাঙ্গার গ্রামবাসীরা জানায়, ২০০০ সালের দিকে সোনালী গণপাঠশালা বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
১৯৯৭ সালের দিকে সোনালী বাজারের দক্ষিন দিকে কাটাফাড়ি উজানটিয়া করিমদাদ মিয়া জেটিঘাট সড়কের পাশে একটি কেল্লা তৈরী করা হয়। সাইক্লোন এলাকায় এ সব কেল্লা তৈরী হয়েছিল। যা মুজিব কিল্লা হিসেবে খ্যাত। ২০০০ সালের পরবর্তী সময়ে গণস্বাস্থ্য নামে এনজিও সংস্থা বিদ্যালয়ের জন্য ভবন তৈরী করে দেয়। সেটিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছিল।
জানা গেছে, মটকাভাঙ্গা গ্রামের নুরুজ্জামার ছেলে মোজাফ্ফর আহমদ ও মনির আহমদ দু’ভাই মিলে ৬২ শতক জমি এ প্রতিষ্টানের জন্য দান করে। ২০০০ সালে তারা জমি রেজিষ্ট্রি দেয়। বিদ্যালয়ে প্রায় ৩শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। পড়ালেখার মান ছিল সুদুর প্রসারী।
সুত্র জানায়,বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থী হ্রাস পেয়েছে। বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০ জন। গেল পিএসসিতে ১৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাশের হার শতভাগ। এমপিওভূক্ত শিক্ষক ৫ জন। এরই মধ্যে রেহেনা বেগম নামের শিক্ষক পিটিআইতে আছে। ফেরদৌসী ইয়াসমিন এ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্বাছ উদ্দিন। দাতা গোষ্টী থেকে তিনি ২০০০ সাল থেকে এ বিদ্যালয়ের সভাপতি। চলতি বছরে এসএমসি নির্বাচন হয়েছে। আব্বাছ উদ্দিন ফের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ইউপি সদস্য নুরুল আজিম জানায়, স্কুলে যে অবস্থা চলছে মনে হচ্ছে পড়ালেখার জন্য চরম শত্রুতামী।
জায়গা দিয়েছে বলে এ স্কুলটি হয়েছে। ভবন নিয়ে টানাটানি হবে কেন। একটি প্রতিষ্টানে নতুন করে কেন অন্যরা জমি দান করবে। এটি অবশ্যই চক্রান্ত। আমরা চাই এ স্কুলের মাধ্যমে এ এলাকায় শিক্ষার পরিবেশ উন্নত হউক। যারা সংঘর্ষে জড়াচ্ছে তারা শিক্ষার জন্য করছে না। রাজনীতি করার চেষ্টা চলছে।
আব্বাছ যুবলীগ করে। আর যিনি নতুন দাতা হতে চায় তারা করে বিএনপি। আমরা কিছুতেই এ স্কুল স্থানান্তরিত হতে দেব না। ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী তাফসি, হানিফ, ফরহাদ, সুমন, রাকিব, ২য় শ্রেনীর হৃদয়, সোহেল, শামীমা মোস্তফা, শারমিন সিদ্দিকা, ১ম শ্রেনীর সাহি ও তামজিদসহ এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ম্যাডাম আমাদেরকে এ স্কুলে না আসতে বারন করছে।
শাহ আলম মেম্বারের বাড়ির নিকট আরেকটি ঘর তৈরী করছে। সেখানে যেতে বলা হচ্ছে। গত কয়েকদিন থেকে ক্লাসে আসলে বকাবকি করছে। স্কুল থেকে আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জন্নাত বেগম, মুর্শিদা বেগম, সাহারা বেগম, সলিম উল্লাহ, দিলোয়ারা বেগম, আবদুল করিম ও আবদু শুক্কুরসহ অভিভাবক জানায়, আমরা কিছুতেই এখান থেকে ভবন সরিয়ে নিতে দিব না।
শাহ আলম মেম্বার বিএনপির নেতা। উপজেলা চেয়ারম্যান, শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষিকাকে নিয়ে অচলাবস্থা তৈরী করছে। যেখানে ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া করছে এ জায়গাটি বর্তমান স্কুল এরিয়া থেকে ১ কিলোমিটার দুরে।
তা ছাড়া নিচু এলাকায় স্কুল হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থারও দুষ্কর হবে। মাটি পরীক্ষা হয়েছে স্কুল এরিয়ায়। এটি শিক্ষা ব্যবস্থাকে অচল করার চক্রান্ত। এস,এম,সির সভাপতি আব্বাছ উদ্দিন জানায়, শাহ আলম মেম্বার স্কুল স্থানান্তর করার গভীর চক্রান্ত করছে।
বাপ দাদা জমি দিয়েছে। তারা কিভাবে গোপনে এ কাজ করল সেটি দুরন্ত শঠামি। রেহেনা বেগম, ফেরদৌসী ইয়াসমিন কাজল এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তারা স্কুল ভবন গুটিয়ে নিতে গোপনে কাজ করছিল।
সমস্ত রেকর্ডপত্র, ফাইল, নথি ও প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র গায়েব করে ফেলেছে। গত ২ দিন আগে রাতে আসবাবপত্র পাচার করে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা উপকরন এর বরাদ্ধের টাকা, শ্লিপের টাকা ও স্কুল সংষ্কারের বিপুল অর্থ তারা আত্মসাৎ করে।
সরকার সোনালী গণপাঠশালার জন্য এ সব বরাদ্ধ দেয়। কোন উন্নয়ন করা হয়নি। তদন্তের প্রয়োজন আছে। এলজিইডি পেকুয়ার উপসহকারী প্রকৌশলী হারু কুমার জানায়, সমীক্ষা হয়েছে। মাটি পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে। তবে ভবনটির কর্তৃপক্ষ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আমরা নির্মাণ কাজের তদারিক করব।
পেকুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সালামত উল্লাহ জানায়, ভবনটি নতুন স্থানে নির্মিত হবে। এ অর্থ বছরে এর নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। ৫২ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। কাগজপত্র পর্যালোচনা হয়েছে। পূর্বের স্থানে দলিল ছিল না কারও। স্কুলের জন্য অবশ্যই দাতার প্রয়োজন। আব্বাছ উদ্দিন গং শিক্ষা বিস্তারে অবশ্যই প্রশংসনীয়। এরপরও চেষ্টা চলছে। এদের মধ্য সমঝোতার জন্য।
Posted ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta