বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সেন্টমার্টিন দ্বীপে যে কারনে মুখোমুখি পরিবেশ ও পর্যটন

শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২
280 ভিউ
সেন্টমার্টিন দ্বীপে যে কারনে মুখোমুখি পরিবেশ ও পর্যটন

বিশেষ প্রতিবেদক :: দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ফলে সেন্ট মার্টিনের পরিবেশের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে প্রবালের পরিমাণ। কমছে গাছপালা আচ্ছাদিত অঞ্চলের পরিমাণ, নষ্ট করা হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা কেয়া বন। একদিকে যেমন পর্যটন সম্ভাবনা বিকশিত হয়েছে অন্যদিকে হচ্ছে পরিবেশের বিপর্যয়। যে প্রবালকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে স্বচ্ছ জলধারার এই দ্বীপ সেটিই এখন শূন্য হওয়ার পথে। গত চার দশকে এই দ্বীপে প্রবালের পরিমাণ কমেছে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ। অথচ শুধুমাত্র এই প্রবালের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে এই দ্বীপ। প্রবাল কমে যাওয়ায় এই দ্বীপের আয়তনও কমা শুরু হয়েছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের ধারণা, এভাবে চলতে থাকলে ২০৪৫-৫০ সালের মধ্যে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ প্রবালশূন্য হয়ে বঙ্গোপসাগরে তলিয়ে যাবে।

বিগত কয়েক বছর ধরে সেন্ট মার্টিনে হোটেল-মোটেল ও আবাসিক স্থাপনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ সামলাতে এই স্থাপনাগুলো গড়ে উঠছে। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে এবং নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। প্রবাল পাথরগুলোকে ভেঙে হোটেল নির্মাতাদের কাছে বিক্রি করছেন স্থানীয় মানুষজন। যা সেন্ট মার্টিনের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। অল্প কিছু টাকার জন্য তারা নিজেদের আবাসস্থলকে ফেলছে অসম্ভব বড় ঝুঁকিতে।

চলতি বছরে দ্বীপে পর্যটক আগমনের মূল মৌসুম শেষ হয়েছে সাড়ে তিনমাস আগে। কিন্তু এখনো দ্বীপজুড়ে পড়ে আছে বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনা। পরিবেশের ক্ষতি ও সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি এসব বর্জ্যের দুর্গন্ধে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, প্রতিবছর কয়েক লাখ পর্যটক সেন্ট মার্টিনে বেড়াতে আসেন। পর্যটকেরা বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন সৈকতে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন রেস্তোরাঁর ময়লা-আবর্জনাও সৈকতে ফেলেন অনেক ব্যবসায়ী। এতে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় সৃষ্টি হয়েছে। এসব বর্জ্য অপসারণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সেগুলো সরাসরি সাগরে যাচ্ছে। তবে কী পরিমাণ বর্জ্য সৃষ্টি হচ্ছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান কারও কাছে নেই।

দেখা যায়, সৈকতজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ম্লান করে দিয়েছে। সৈকতের জেটি, উত্তর ও পশ্চিম পয়েন্টের বালিয়াড়িতে যত দূর চোখ যায় শুধু ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে অস্বস্তি বোধ করছেন পর্যটকেরা। সৈকতের প্রায় দেড়-দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাচের বোতল, প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট, আচারের প্যাকেট, পলিথিন, ক্যান, চায়ের কাপ, স্ট্র, বিস্কুটের প্যাকেট, মাছ ধরার জালের টুকরা, নাইলনের দড়িসহ বিভিন্ন অপচনশীল বর্জ্য। এ ছাড়া ছোট-বড় শতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁর পাশাপাশি যোগ হয় গৃহস্থালির বর্জ্যও। হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোর বর্জ্য যাচ্ছে সরাসরি সাগরে। এতে সৈকত পর্যটকদের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসেন। তাঁরা অন্তত কয়েক হাজার কেজি বর্জ্য সৃষ্টি করেন। এসব ধারণের মতো ডাস্টবিন দ্বীপে নেই। মাঝেমধ্যে কিছু প্লাস্টিকের বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হলেও বেশির ভাগ বর্জ্য যত্রতত্র পড়ে থাকে এবং সাগরে ভেসে যাচ্ছে।

দ্বীপের সুরক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পাঁচজন কর্মী আছেন। তাঁদের একজন আবদুল হামিদ বলেন, এখানে কোনো কর্মকর্তা নেই। ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলতে প্রতিনিয়ত প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কিন্তু পর্যটকেরাই তো পাত্তা দেন না। পরিবেশ অধিদপ্তর একা তো দ্বীপ রক্ষা করতে পারবে না।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছৈয়দ আলম বলেন, বেড়াতে আসা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সেন্ট মার্টিন বোট মালিক সমিতির উদ্যোগে প্রতিবছর কয়েক হাজার কেজি বর্জ্য অপসারণ করা হলেও সেটি পর্যাপ্ত নয়। সৈকত পরিষ্কার রাখতে হলে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নিতে হবে।

সেন্ট মার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় স্থান সেন্ট মার্টিন। তবে এটি পরিচ্ছন্ন রাখতে পরিষদের কোনো তহবিল নেই। তারপরও আগামী পর্যটন মৌসুমের আগেই পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

মুজিবুর রহমান আরও বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দ্বীপে কিছু সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। তাঁরা পর্যটক ও স্থানীয় ব্যক্তিদের স্বার্থে কিছুই করেন না। দ্বীপ ও সৈকতের পাড়ে দোকানিরা ডাব, পানীয় ও খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করে করেন। কিন্তু সৈকতপাড়ের দোকানি ও বেড়াতে আসা পর্যটকেরা যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। এতে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ দেখা যাচ্ছে।

জীববৈচিত্র্য সুরক্ষাসহ সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটক নিয়ন্ত্রণ, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল সীমিত করাসহ ১৩টি বিষয়ে নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সর্বশেষ গত ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং টেকসই পর্যটন নীতিমালা ২০২২’ শীর্ষক নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির সর্বশেষ বৈঠক।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে দৈনিক ৯০০ পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হবে। যাঁরা দ্বীপ ভ্রমণে যাবেন, তাঁদের মাথাপিছু সরকারকে এক হাজার টাকা করে রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে। আর যাঁরা দ্বীপের হোটেলে রাতযাপন করবেন, তাঁদের গুনতে হবে দুই হাজার টাকা। আগামী পর্যটন মৌসুম অর্থাৎ নভেম্বর থেকে এই নির্দেশনা কার্যকরের কথা থাকলেও এখন কেউ সেন্ট মার্টিন যেতে পারছেন না।

এদিকে ঈদুল আজহার ছুটি কাটাতে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সৈকতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটলেও ভিন্ন চিত্র প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে।সব হোটেলই একেবারেই ফাঁকা। দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় সরকারের বিধিনিষেধ আরোপের কারণে কেউ ভ্রমণে যেতে পারছেন না। একইভাবে টেকনাফ, উখিয়াসহ জেলার বাসিন্দারাও দ্বীপে পা রাখতে পারছেন না। সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দাদের টেকনাফ সদরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে দেখাতে হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র। পর্যটক না থাকায় দ্বীপের পুরো সৈকত খালি। ফাঁকা পড়ে আছে পর্যটকদের জন্য তৈরি ১৪৪টি হোটেল, রিসোর্ট-কটেজ।

দ্বীপের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা ও রিসোর্ট মালিক জয়নাল আবেদীন বলেন, গত বছরের ঈদের ছুটিতে হাজারো পর্যটক ছিলেন সৈকতে। এখন কেউ নেই। লোকজন না থাকায় ১৪৪টির মতো হোটেল–রিসোর্ট খালি পড়ে আছে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগর উত্তাল এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি খারাপ থাকার কারণে গত ছয় দিন টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে যাত্রীবাহী কাঠের ট্রলারের চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দ্বীপের মানুষদের দ্বীপে বন্দীজীবন কাটাতে হচ্ছে। ঈদের ছুটিতে সেন্ট মার্টিনের বাইরের কেউ যেমন দ্বীপে আসতে পারেননি, তেমনি সেন্ট মার্টিনের লোকজনও টেকনাফ-কক্সবাজার যেতে পারছেন না।

বঙ্গোপসাগরের মধ্যে ভাসমান ৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপের বাসিন্দা সাড়ে ১০ হাজার। অধিকাংশের ঈদের আনন্দ নেই জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, দ্বীপের মানুষ অর্থসংকটে আছেন। বহু পরিবার মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় টেকনাফ থেকে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, তরকারিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দ্বীপে আনা যাচ্ছে না। ফলে পণ্যের সংকট ও দামের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। গত বছর দ্বীপের কোরবানি হয়েছিল শতাধিক গরু-মহিষ। এবার কোরবানি হয়েছে ৫০টির মতো।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত মানুষের চাপে সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য অনেক আগেই ধ্বংস হয়েছে। অবশিষ্ট যা আছে, তা ধরে রাখতে নীতিমালা করছে সরকার।

পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, সরকার ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল ৫২৯ হেক্টর আয়তনের সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। গত ৪ জানুয়ারি সরকার বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর ক্ষমতাবলে দ্বীপের অতিরিক্ত ১ হাজার ৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ৭০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত এলাকাকে ‘সেন্ট মার্টিন মেরিন প্রটেক্টেড এলাকা’ ঘোষণা করে।

সেন্ট মার্টিনে পর্যটকের যাতায়াত সীমিতকরণ, অনলাইনে নিবন্ধন এবং পর্যটকদের মাথাপিছু টাকা আদায়ের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে চলাচলকারী জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন কক্সবাজার (টুয়াক)।

280 ভিউ

Posted ২:৩০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com