শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা প্রকট

বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
290 ভিউ
প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা প্রকট

কক্সবাংলা ডটকম(১৯ ফেব্রুয়ারী) :: প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না বিদ্যমান বিধিমালা। গুটিকয়েক কর্মকর্তার হাতে বন্দি হয়ে পড়েছে পুরো প্রশাসন। এতে ভেঙে পড়ছে প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড। এমন পদোন্নতি দেওয়ায় ব্যাচের অধিকতর জুনিয়র কর্মকর্তারা এখন নীতিনির্ধারক পর্যায়ে। অন্যদিকে, মেধা ও যোগ্যতা থাকার পরও দলনিরপেক্ষ হওয়ায় অনেক কর্মকর্তা পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে প্রশাসনের নিম্নস্তরেই কাজ করে যাচ্ছেন।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আর আন্তঃক্যাডার বৈষম্যে প্রশাসনে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। পারস্পরিক সন্দেহ, আস্থাহীনতা ও ক্ষমতার দাপটের চক্রে রয়েছেন প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য ক্যাডারের সদস্যরা। এ ছাড়াও পদোন্নতি, পদায়ন ও স্বেচ্ছাচারমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিক কাজে প্রায়ই বিব্রত হচ্ছেন অনেক কর্মকর্তা।

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে সব ক্যাডারে প্রথম গ্রেডের পদ সৃষ্টি, সুপারনিউমারারি পদোন্নতি ও পদসোপান তৈরির নির্দেশনা গত ছয় বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। বরং এ সময়ের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সুপারনিউমারারি পদোন্নতি ও প্রেষণে নিয়োগ বেড়েছে। তারা সুদমুক্ত গাড়ি ও বিদেশে প্রশিক্ষণেও বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন। আর বরাবরের মতোই বঞ্চিত হচ্ছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এতে তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছেই।

এই বৈষম্য নিরসনে সম্প্রতি সুদমুক্ত গাড়ি সেবা ও সুপারনিউমারারি পদোন্নতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছেন বিসিএস কৃষি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন বিসিএস মৎস্য, পশুসম্পদ, ডাক ও টেলিকমিউনিকেশন এবং তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

রিটকারী কর্মকর্তা বিসিএস কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কবির আহমেদ বলেন, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে অনেকবার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। বরং বৈষম্য আরও বেড়েছে। ফলে শুধু একটি ক্যাডারের জন্য গাড়িসেবা ও সুপারনিউমারারি পদোন্নতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছি।

তিনি আরও বলেন, বিসিএস পরীক্ষা হয় একই নিয়মে। পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় একই দিনে। নিয়োগপত্রও দেওয়া হয় একই রকমের। এর পরও সব ক্যাডারে সমান সুবিধা নেই। বৈষম্যের কারণ উল্লেখ করে কবির আহমেদ বলেন, সব ক্যাডার কর্মকর্তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর সঙ্গে শুধু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা জড়িত। তারা নিজের সুবিধা প্রাধান্য দিয়েই সব কাজ করেন। রিটের পক্ষের আইনজীবী মামুন অর রশিদ বলেন, মামলাটি চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। আশা করছি, চূড়ান্ত রায়ে রিটকারীরা ন্যায়বিচার পাবেন।

জানা গেছে, প্রশাসন ক্যাডারের বিরুদ্ধে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অভিযোগের শেষ নেই। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন ক্যাডার সব ক্যাডারের ওপর খবরদারি করছে। পদে পদে বিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। পদোন্নতি থেকে শুরু করে পদায়ন- প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাকে জনপ্রশাসনের রাজনীতিকীকরণ বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। উপসচিব থেকে ওপরের পদগুলো নির্দিষ্ট কোনো ক্যাডারের পদ নয়।

কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা এসব পদে সহসা পদোন্নতি পেয়ে প্রাইজ পোস্টিং নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে পদায়ন হচ্ছেন। সরকারের উচ্চস্তরের পদগুলো এখন প্রশাসন ক্যাডারের পদ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। অথচ অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন না।

এদিকে, প্রেষণে নিয়োগ পাওয়ার সুবাদে ২৫ ক্যাডারের শীর্ষ পদগুলো বেশিরভাগ রয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণে। একই সঙ্গে দুই পদের দায়িত্ব পালন করছেন তারা। ফলে সাধারণ ক্যাডারের শীর্ষস্থানীয় পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা পদায়নকে মেনে নিতে পারছেন না নিজস্ব ক্যাডার কর্মকর্তারা। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে আন্তঃক্যাডার বিরোধ ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব।

এ বিষয়ে ২৫ ক্যাডারের বঞ্চিত কর্মকর্তারা অভিযোগ করে জানান, অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা সুপারনিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত পদ) পদোন্নতি না পেলেও প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী সচিব পদের প্রায় সব কর্মকর্তাকে সুপারনিউমারারির সুযোগে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। এরপর প্রশাসনের বেশিরভাগ কর্মকর্তা পরিবহন পুলের গাড়িও নিচ্ছেন, আবার সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে গাড়িও কিনছেন। অথচ ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা কোনো ধরনের গাড়িসেবা পাচ্ছেন না। ফলে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও তারা কাজ করছেন পায়ে হেঁটে বা বাসে চড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তঃক্যাডারে বৈষম্য নিরসনের জন্য সব ক্যাডারে প্রথম গ্রেডের পদ সৃষ্টি, সুপারনিউমারারি পদোন্নতি ও পদসোপান তৈরির নির্দেশনা দিয়েছিলেন ২০১৩ সালে। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

তারা জানান, উপসচিব পদটি সরকারের পদ। এ পদে পদোন্নতি পাওয়া সবার সমান অধিকার। কিন্তু এ পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ ভাগ ও বাকি ২৫ ভাগে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এর ফলে উপসচিবের সর্বশেষ পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ১১ বছরের জুনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে পদোন্নতি পেয়েছেন অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা। আর সরকার বৈদেশিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের দক্ষ করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে প্রশাসনের জন্যই ৭০ ভাগ, অন্যান্য ক্যাডারের জন্য মাত্র ৩০ ভাগ।

এতে দেশের প্রয়োজনে যাদের দক্ষ করা দরকার, তারাই প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন না। অথচ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের উদ্দেশ্য হলো সব সেক্টরকে এগিয়ে নেওয়া। আর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ের কৃষি, মৎস্য ও স্বাস্থ্যসহ অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের ওপর প্রতিনিয়তই খবরদারি করছেন। সম্প্রতি ইকোনমিক ক্যাডার প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত হওয়ায় দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও যাচ্ছে তাদের নিয়ন্ত্রণে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সওব্য অনুবিভাগ) উম্মুল হাছনা বলেন, বিভিন্ন ক্যাডারের পদ সৃজনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে সকল ক্যাডারে প্রথম গ্রেডের পদ সৃষ্টি, সুপারনিউমারারি পদোন্নতি ও পদসোপান তৈরির বিষয়ে আমাকে বলে লাভ নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রী বা সচিব চাইলে এ কাজগুলো শেষ হতে পারে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম বলেন, বহুদিন ধরে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা অন্য সব ক্যাডারের চেয়ে বেশি সুবিধা নিচ্ছেন। একটি স্বাধীন দেশে এমনটি হওয়া উচিত নয়। দেশের প্রয়োজনেই ক্যাডারগুলোকে আলাদা করা হয়েছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সবার সমান ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিরা তাদের স্বার্থে প্রশাসন ক্যাডারকে আলাদা করেছিল। কিন্তু এখন তো স্বাধীন দেশ, তাই স্বাধীনভাবেই চিন্তা করা উচিত। এ জন্য পুরাতন নীতিমালা পরিবর্তন করে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এটা করতে না পারলে দীর্ঘমেয়াদি ভালো ফল পাওয়া যাবে না।

এ বিষয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদটি শিক্ষা ক্যাডারের সিডিউলভুক্ত পদ। এখানে অন্য ক্যাডার পদায়নের সুযোগ নেই। এরপরও দীর্ঘদিন ধরে পদটি প্রশাসন ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণে। একইভাবে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পদটিও তারা দখলে নিয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পদটি প্রথম গ্রেডে করা হয়নি। দ্বিতীয় গ্রেডের ১৫টি ও তৃতীয় গ্রেডের ৪২৯টি পদ সৃজনের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও চূড়ান্ত করছে না জনপ্রশাসন। এতে মর্যাদা ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

একইভাবে বিসিএস খাদ্য, সমবায়, মৎস্য, পরিসংখ্যানসহ অন্যান্য ক্যাডারের শীর্ষ পদগুলোতেও কর্মরত রয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। অথচ ২৫ ক্যাডারের পদ সৃজনের বেশিরভাগ প্রস্তাব ফেলে রেখেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি দীর্ঘদিন ধরে সব ধরনের প্রেষণ নিয়োগ বাতিল ও কৃত্য পেশাভিত্তিক প্রশাসন গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আসছেন।

বিসিএস সমন্বয় কমিটির প্রচার সম্পাদক স ম গোলাম কিবরিয়া বলেন, ২০১৩ সালে সব ক্যাডারে প্রথম গ্রেডের পদ সৃষ্টি ও সুপারনিউমারারি পদোন্নতি চালুর নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেই নির্দেশনাও আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সুপারনিউমারারি পদোন্নতির সঙ্গে প্রেষণেও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

আন্তঃক্যাডারের বৈষম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, তিনি জনপ্রশাসনে সবেমাত্র দায়িত্ব নিয়েছেন। এসব বিষয়ে কথা বলার সময় এখনও তার আসেনি। তারপরও কোনো ক্যাডারের কর্মকর্তারা বঞ্চিত দাবি করলে বিবেচনা করে দেখা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. আকবর আলি খান বলেন, প্রশাসনে সব ক্যাডারের গুরুত্ব সমান হওয়া উচিত। কোনো ক্যাডারকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই। পদোন্নতিতে যোগ্য ও মেধাবীদের বিবেচনায় আনা উচিত। সবকিছু নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা ঠিক নয়। যোগ্যদের যোগ্য জায়গায় পদায়ন করতে হবে। নইলে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা ও স্থবিরতা দেখা দেবে।

290 ভিউ

Posted ৩:২৪ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com