সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

প্রেরণার উৎস কাজী নজরুল ইসলাম

সোমবার, ২৭ আগস্ট ২০১৮
536 ভিউ
প্রেরণার উৎস কাজী নজরুল ইসলাম

কক্সবাংলা ডটকম(২৭ আগস্ট) :: তার লেখনিতে দ্রোহ, প্রেম, সাম্য, মানবতা ও শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির বার্তা প্রকাশ পেয়েছে প্রবলভাবে। এ কারণেই তিনি বিদ্রোহী। তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই তো তিনি কবিতার ছত্রে ছত্রে বলেছেন, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আয়নায়।’ পৃথিবীতে এমন ক’জন আছেন যিনি প্রেমের টানে রক্তের সর্ম্পক অস্বীকার করে পথে বেরিয়ে পড়তে পারেন। তিনি হলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। নজরুলের সাহিত্যকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তার গান। তার লেখা নজরুলগীতি, যা নজরুলসঙ্গীত বলে পরিচিত। শত শত জনপ্রিয় গানের রচয়িতা ও সুরস্রষ্টা তিনি। তার রচিত ‘চল্ চল্ চল্/ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ বাংলাদেশের রণসঙ্গীত।

আজ ১২ ভাদ্র,২৭ আগস্ট জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস। ৪২ বছর আগে এই দিনে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল) ৭৭ বছর বয়সে এই মহৎপ্রাণ কবির জীবনাবসান ঘটে। বাংলা সাহিত্যে তার অবদান অসামান্য। অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী ও সাম্যের এই কবি আছেন কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে। জীবদ্দশায় তিনি সর্বদা হিন্দু-মুসলমান মিলনের গান গেয়েছেন। বিদ্রোহী কবির মর্যাদা পেলেও তিনি ছিলেন মূলত প্রেমের কবি।

কাজী নজরুল ইসলামই এ দেশের সমাজচেতনা ও রাজনৈতিক জগতের সর্বোত্তম কবি, যিনি গণমানুষের সঙ্গে সাহিত্যের যোগসূত্র স্থাপন করেছেন। নজরুলের আবির্ভাবে যেন বাংলা সাহিত্যের একটা নতুন দিক খুলে গেল। তিনি ছিলেন কর্মে ও চিন্তায় স্বাধীন; দাসত্বের বন্ধনমুক্তি ও প্রাচীন সংস্কারের শৃঙ্খল ভঙ্গ করার সংগ্রামে উচ্চকণ্ঠ। তার সৃজনশীল কর্মে এসব প্রকাশ পেয়েছে পরতে পরতে। তার কাব্যের বাণী, গানের কথা কিংবা ক্ষুরধার লেখনী বুলেটের চেয়ে শক্তিশালী ছিল।

দারিদ্র্যকে সঙ্গী করে ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। বাবা কাজী ফকির আহমদ ও মা জায়েদা খাতুন। তার ডাক নাম দুখু মিয়া। ১৯০৮ সালে বাবার মৃত্যু হলে নজরুল পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য হাজি পালোয়ানের মাজারের সেবক এবং মসজিদে মোয়াজ্জিনের কাজ করেন। তিনি গ্রামের মক্তব থেকে নিম্ন প্রাথমিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। শৈশবের এ শিক্ষা ও শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে নজরুল অল্পবয়সেই ইসলাম ধর্মের মৌলিক আচার-অনুষ্ঠান, যেমন পবিত্র কোরআন পাঠ, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। তবে দারিদ্র্যের কারণে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশিদূর এগোয়নি। কিন্তু প্রতিভাবান নজরুল নিজের চেষ্টায় প্রচুর পড়াশোনা করে সমৃদ্ধ করেছেন তার মনন ও চিন্তার জগৎ। ছোটবেলায় রুটির দোকানে কাজ করা, লেটোর দলে যোগদান, যৌবনে যুদ্ধযাত্রা, সাংবাদিকতা, রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতা- সব মিলিয়ে বিচিত্র জীবন ছিল তার।

বাংলা সাহিত্যে নজরুল এসেছেন অন্যায়-অসাম্যের বিরুদ্ধে চরম বিদ্রোহ নিয়ে। মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্যজীবনে তিনি বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতকে সমৃদ্ধ করেছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন পর্যন্ত বিপুল প্রেরণা জুগিয়েছে তার গান, রচনাবলি ও কবিতা। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি ‘বিদ্রোহী কবি’ এবং আধুনিক বাংলা গানের জগতে ‘বুলবুল’ নামে খ্যাত। রবীন্দ্রনাথের অনুকরণমুক্ত কবিতা রচনায় তার অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যতিক্রমধর্মী কবিতার জন্যই ‘ত্রিশোত্তর আধুনিক কবিতা’র সৃষ্টি সহজতর হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

নজরুল তার সাহিত্যকর্ম এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে অবিভক্ত বাংলায় পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, মৌলবাদ এবং দেশি-বিদেশি শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন। এ কারণে ব্রিটিশ সরকার তার বেশ কয়েকটি গ্রন্থ ও পত্রিকা নিষিদ্ধ করে। কারাদণ্ডেও দণ্ডিত করা হয় তাকে। তারপরেও তিনি দমে যাননি। বরং উৎসাহ  পেয়েছেন। রাজবন্দীর জবানবন্দী এবং প্রায় চল্লিশ দিন একটানা অনশন করে ইংরেজ সরকারের জেল-জুলুমের প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এ জন্য তাকে গ্রন্থ উৎসর্গ করে শ্রদ্ধা জানান নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

জন্মস্থান ভারতের বর্ধমান হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তার। কৈশোরের একটা পর্যায় কেটেছে ময়মনসিংহের ত্রিশালের দরিরামপুরে। কুমিল্লায় কবির শ্বশুরবাড়ি। এ ছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে কেটেছে তার আনন্দ-বেদনার অনেক দিন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছে সমান প্রিয় তিনি। অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে তিনি লিখে গেছেন অবিরাম। বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে তার অজস্র কবিতা, বাংলা গানের জগৎকে গীত সুধারসে ভরিয়ে দিয়েছে তার গানের কলি, তাতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা ও স্বাদ। গান ও কবিতার মাধ্যমে তিনি অবহেলিত-বঞ্চিত মানুষের পাশে যেমন দাঁড়িয়েছেন, তেমনি বিরল শিল্প সুষমায় ভরিয়ে তুলেছেন বাঙালির সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে। প্রজন্মপরম্পরায় এই কবির জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা এখনও আকাশচুম্বী।

নজরুল যখন আলীপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি তখন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তার বসন্ত গীতিনাট্য তাকে উৎসর্গ করেন। এ ঘটনায় উল্লসিত হয়ে কাজী নজরুল জেলখানায় বসে লেখেন তার অনুপম কবিতা ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’। সমকালীন অনেক রবীন্দ্রভক্ত ও অনুরাগী কবি-সাহিত্যিক এই বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননি। কেউ কেউ অভিযোগ করলে রবীন্দ্রনাথ তাদের নজরুল-কাব্যপাঠের পরামর্শ দেন এবং বলেন, ‘…যুগের মনকে যা প্রতিফলিত করে, তা শুধু কাব্য নয়, মহাকাব্য।’

দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও তিনি কখনো আপোস করেননি। মাথা নত করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি, অর্থ-বিত্ত ও বৈভবের কাছে। ‘চির উন্নত মম শির’ বলে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯২৪ সালের ২৫ এপ্রিল কলকাতায় নজরুল ও প্রমীলার বিবাহ হয়। প্রমীলা ছিলেন ব্রাহ্মসমাজভুক্ত। তার মা গিরিবালা দেবী ছাড়া পরিবারের অন্যরা এ বিবাহ সমর্থন করেননি। নজরুলও আত্মীয়-স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। হুগলির মহীয়সী নারী মাসুমা রহমান বিবাহপর্বে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। নজরুল হুগলিতে সংসার পাতেন।

বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। কবিতার পাশাপাশি বাংলা গানের ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা গজলের প্রবর্তক বলা হয় তাকে। তিনিই প্রথম বাংলা গজল রচনা করেন।

অসাম্প্রদায়িক ও শোষনমুক্ত দেশ ও সমাজ গড়ার মানসে সাহিত্যে বিভিন্ন শাখায় লেখালেখি করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। এ সব ক্ষেত্রে তিনি সংগ্রামী ও পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।

নজরুলের গান ও কবিতা সংকলন বিষের বাঁশী এবং ভাঙ্গার গান প্রকাশিত হওয়ার পরপরই দুটি গ্রন্থই সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয়। নজরুলের গানের প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয় হিজ মাস্টার্স ভয়েস (এইচ.এম.ভি) কোম্পানি থেকে। যদিও ১৯২৮ সালের আগে নজরুল গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট হননি। শিল্পী হরেন্দ্রনাথ দত্তের কণ্ঠে ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেলেছ জুয়া’ ও ‘যাক পুড়ে যাক বিধির বিধান সত্য হোক’ গান দুটি রেকর্ড করা হয়।

তিনি বাংলা গজল গানের স্রষ্টা। গণসঙ্গীত ও গজলে যৌবনের দুটি বিশিষ্ট দিক সংগ্রাম ও প্রেমের পরিচর্যাই ছিল মুখ্য। নজরুল গজল আঙ্গিক সংযোজনের মাধ্যমে বাংলা গানের প্রচলিত ধারায় বৈচিত্র্য আনেন। তার বেশিরভাগ গজলের বাণীই উৎকৃষ্ট কবিতা এবং তার সুর রাগভিত্তিক। আঙ্গিকের দিক থেকে সেগুলো উর্দু গজলের মতো তালযুক্ত ও তালছাড়া গীত। নজরুলের বাংলা গজল গানের জনপ্রিয়তা সমকালীন বাংলা গানের ইতিহাসে ছিল তুলনাহীন।

শৈশবে পিতৃহারা হন নজরুল। তারপর বহু বাধার প্রাচীর পাড়ি দিতে হয়েছিল তাকে। অতঃপর একদিন মহাযুদ্ধের ডাক। যোগ দিলেন বাঙালি পল্টনে। যুদ্ধ থেকে ফিরলেন হাবিলদার কবি। সকলকে চমকে দিয়ে বাংলার সাহিত্য আকাশে দোর্দণ্ড প্রতাপে আত্মপ্রকাশ। কবিরূপে নজরুলের এ অভ্যুদয় ধূমকেতুর সঙ্গেই তুলনীয় কেবল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নজরুলকে ‘বসন্ত’ নাটক উৎসর্গ করতে গিয়ে যথার্থ লিখেছেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয় রে ধূমকেতু/আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু। দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’

ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, গান, প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখা এবং সাংবাদিকতা করলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই খ্যাতিমান। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন যুগ সৃষ্টি করেন। ইসলামী সঙ্গীত তথা বাংলা গজল রচনারও পথিকৃৎ তিনি। নজরুল প্রায় তিন হাজার গান রচনা এবং সুর করেছেন। নজরুল তার গান ও কবিতায় ব্যতিক্রমী এমন সব বিষয় ও শব্দ ব্যবহার করেন, যা আগে কখনও ব্যবহার করা হয়নি। গান ও কবিতায় তিনি সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক যন্ত্রণাকে ধারণ করে অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তবে মানবসভ্যতার কয়েকটি মৌলিক সমস্যাও ছিল তার গান ও কবিতার উপজীব্য।

নজরুলের সৃজনশীল মৌলিক সঙ্গীত প্রতিভার প্রথম স্ফুরণ ১৯২৬-২৭ সালে কৃষ্ণনগরে। অথচ নজরুলের কৃষ্ণনগর জীবন ছিল অভাব-অনটন, রোগ-শোক ও দুঃখ-দারিদ্র্যক্লিষ্ট। তখনও পর্যন্ত নজরুল কোনো প্রচার মাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হননি। তবে  দিলীপকুমার রায় ও সাহানা দেবীর মতো বড় মাপের শিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ নজরুলের গানকে বিভিন্ন আসরে ও অনুষ্ঠানে পরিবেশন করে জনপ্রিয় করে তোলেন।

বিদ্রোহী কবিতার জন্য নজরুল সবচেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ব্রিটিশরাজের আসন টলে উঠেছে তার দ্রোহী কবিতায়। ১৯২২ সালে তার বিখ্যাত কবিতা-সংকলন অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। প্রথম গদ্য রচনা ‌বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী ১৯১৯ সালের মে মাসে সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯২২ সালে নজরুলের একটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়, যার নাম ‘ব্যথার দান’। এছাড়া একই বছর প্রবন্ধ-সংকলন ‘যুগবাণী’ও প্রকাশিত হয়। নজরুলের প্রেম ও প্রকৃতির কবিতার প্রথম সংকলন দোলন-চাঁপা প্রকাশিত হয় ১৯২৩ সালের অক্টোবরে। এতে সংকলিত দীর্ঘ কবিতা ‘পূজারিণী’-তে নজরুলের রোমান্টিক প্রেম-চেতনার বহুমাত্রিক স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে।

কবি নজরুল ধ্যানে-জ্ঞানে, নিঃশ্বাসে-বিশ্বাসে, চিন্তাচেতনায় ছিলেন পুরোদস্তুর অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী। কবিতায়, গানে, গদ্যে সর্বত্র তার এই উদার দৃষ্টিভঙ্গি উৎকীর্ণ। শোষিত বঞ্চিত মানুষকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন সাম্য ও ন্যায়ের বন্ধনে এক হয়ে শোষণ, বঞ্চনা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হতে। তাই কবি গেয়েছেন- ‘গাহি সাম্যের গান/মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান্’।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনেন। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কবির অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ সমাবর্তনে কবিকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে নজরুলকে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান এবং ২১ ফেব্রুয়ারি ‘একুশে পদকে’ ভূষিত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের উত্তর পার্শ্বে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে।

ব্যক্তিত্বের অনমনীয় দৃঢ়তায় কাজী নজরুল ইসলাম যেমন সাম্রাজ্যবাদ ও অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন ঠিক তেমনি সমকালীন সমাজের হিন্দু ও মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নিজের জীবন ও সাহিত্য দিয়ে বিদ্রোহ করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তার মতো অসাম্প্রদায়িক মানুষ পাওয়া সমাজে বিরল। আবার সাহিত্যে ও সঙ্গীতে প্রগতির কণ্ঠে তিনি স্বসম্প্রদায়ের মুসলমানদের জাগিয়ে দিয়ে গেছেন। নজরুলের জীবন এক বিদ্রোহ, এক বিস্ময়। ধরাবাঁধা জীবন ও সাহিত্যধারার বিপরীতে তিনি প্রাণের উদ্দাম আবেগে সামনে এগিয়ে চলেছেন, একই সঙ্গে দিয়ে গেছেন সামনে চলার দিশা।

536 ভিউ

Posted ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৭ আগস্ট ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com