কক্সবাংলা ডটকম(২২ মার্চ) :: আরব্য রজনীর রূপকথাই বটে। এক মৌসুম আগেও ক্লাব ফুটবলের নাড়ি-নক্ষত্রের খবর রাখা লোকজন ছাড়া খুব বেশি মানুষ জানতই না তার কথা। কিন্তু রূপকথার সেই আশ্চর্য গল্পের মতো যেন বদলে গেল সবকিছু। মৌসুমের মাঝপথেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল তার জয়জয়কার। অখ্যাত এক আরব হয়ে গেলেন উদীয়মান ফুটবল জাদুকর। বলছি, লিভারপুলের মোহাম্মদ সালাহর কথা। মৌসুমজুড়ে যার দুরন্ত পারফরম্যান্স হুমকিতে ফেলে দিয়েছে মেসি-রোনালদোর সাজানো রাজত্বকে।
বেশ কয়েক বছর ফুটবলের রাজত্বকে দুভাগে ভাগ করে নিয়েছিলেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সাফল্য ও স্বীকৃতির মতো বেশ ভারী ভারী শব্দকে রীতিমতো ক্লিশে বানিয়ে দিয়েছিলেন এ দুজন। পালা করেই সব অর্জন নিজেদের নামে করে নিয়েছেন তারা। মাঝে মধ্যে দু-একটি দমকা বাতাসের মতো হাওয়া দিয়ে গেলেও টলাতে পারেনি ‘এমআর’-এর সিংহাসন। সেই ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। এ মৌসুমেও যথারীতি উড়ছেন এ দুজন। কিন্তু তাদের সাম্রাজ্যকে এবার বেশ ভালোই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন সালাহ।
মিসরকে বিশ্বকাপে পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি লিভারপুলের হয়ে খেলেছেন ছবির মতো সুন্দর ফুটবল। গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। ইয়ুর্গেন ক্লোপের দলের সবচেয়ে বড় ব্রহ্মাস্ত্র। গোল্ডেন শু তো বটেই, এমনকি বর্তমানে ব্যালন ডি’অর জয়ের সম্ভাব্য নামগুলোর মধ্যে বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে তার নাম।
এ মৌসুমে দুরন্ত খেলা সালাহ এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে ৩০ ম্যাচে করেছেন ২৮ গোল। তার পয়েন্ট ৫৬, যা তাকে এগিয়ে রেখেছে অন্যদের থেকে।
তবে সালাহ যতই আলো ছড়াক, এখনো নিজেদের ধারাবাহিকতা নিয়ে ফুটবল মঞ্চের সবচেয়ে বড় দুই তারকার একজন লিওনেল মেসি। মেসির জাদুকরী ফুটবলের আলোকচ্ছটা দেখা গেছে চলতি মৌসুমেও। ম্যাচের পর ম্যাচ বার্সার জয়ে সামনে থেকে দিয়েছেন নেতৃত্ব। তবে মেসির এ মৌসুমটা সবাই মনে রাখবে জাদুকরি এক ম্যাচের জন্য।
একুয়েডরের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে মেসির হ্যাটট্রিকে বিশ্বকাপের ভাগ্য খোলে আর্জেন্টিনার। মেসি এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২৮ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ২৫টি। গোল্ডেন বুটের দৌড়ে সালাহর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন বাঁ পায়ের এ জাদুকর। পাশাপাশি বার্সার লা লিগার শিরোপা জেতাটা প্রায় নিশ্চিত।
সামনে আছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার হাতছানিও। তবে এ বছর মেসির চোখ থাকবে মূলত বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটির দিকে। গতবার হাতছোঁয়া দূরত্ব থেকে ফিরেছেন, এবার আর নিরাশ হতে চান না তিনি। আর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ মানে সব স্বীকৃতি লুটিয়ে পড়বে মেসির পায়ে।
রোনালদোর মৌসুমটা শুরু হয়েছিল যাচ্ছেতাইভাবে। শুরুতেই নিষেধাজ্ঞায় পড়ে ছিটকে যান লা লিগার ম্যাচগুলো থেকে। তার অনুপস্থিতিতে খেই হারায় রিয়ালও। ফিরে এসেও ঠিক ছন্দ ফিরে পেলেন না ‘সিআর সেভেন’। যদিও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ছিলেন ধারাবাহিক। তবে সময় যতই গড়িয়েছে, স্বরূপে ফিরতে শুরু করেন পর্তুগিজ তারকা।
আর মৌসুমের শেষ ভাগে এসে রোনালদো যেন সপ্তম স্বর্গে। প্রথম ১৯ ম্যাচে ৪ চার গোল করা রোনালদো পরের ৯ ম্যাচে করলেন ১৮ গোল। সর্বশেষ ম্যাচেও তার কাছ থেকে এসেছে ৪ গোল। অবশ্য গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছেন তিনি। ২২ গোল করা রোনালদোর পয়েন্ট ৪২। বর্তমানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় সবার উপরে আছেন রোনালদো।
এছাড়া চলতি বছরের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতাও ফিফা বর্ষসেরা এ তারকা। লা লিগার শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার পথে থাকলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঠিকই ফেভারিট তার দল রিয়াল। নকআউট পর্বে পিএসজির মতো দলকে হারিয়েছে তারা। আর মেসির মতো রোনালদোর লক্ষ্যও এখন বিশ্বকাপ শিরোপা।
এ তিনজন ছাড়াও আরো কয়েকজন খেলোয়াড় মাতাচ্ছেন ফুটবল দুনিয়া। সবার আগে আছে নেইমারের নাম। চোটে ছিটকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নেইমারও ছিলেন সেরা হওয়ার দৌড়ে। কিন্তু অপয়া এক চোটে নেইমারকে এখন অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বিশ্বকাপের। এছাড়া ম্যানচেস্টার সিটির দুরন্ত যাত্রায় দারুণ পারফর্ম করেছেন সার্জিও আগুয়েরো।
লিগ শিরোপা নিশ্চিত, চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও ভাগ্যের শিকে ছিঁড়লে স্বীকৃতির কপাল খুলতে পারে আগুয়েরোর। এছাড়া অন্যদের মধ্যে হ্যারি কেন ও মাউরো ইকার্দিরা দলীয় সাফল্যের কারণে পিছিয়ে পড়লেও ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে টেক্কা দিচ্ছেন বাকিদের।
সিএনএন, বিবিসি, গোল ডটকম