কক্সবাংলা ডটকম(২৫ আগস্ট) :: শাহরুখ বলিউডের বাদশাহ, ডন অব বলিউড কিংবা রোমান্স সম্রাট হিসেবে খ্যাত। প্রতিভা, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব আর রসবোধ দিয়ে শাহরুখ কোটি দর্শকের মন জয় করেছেন। নিজের সেরা সময়টায় তিনি ছিলেন বলিউডের সবচেয়ে বড় নায়ক, হয়তো এখনো।
তবে তার সর্বশেষ ছবিগুলো কোনোটাই দর্শক কিংবা ভক্তদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ফ্যান, দিলওয়ালে কিংবা জাব হ্যারি মেট সেজাল দর্শকদের বিরক্তি উৎপাদন করেছে। শাহরুখের পরবর্তী সিনেমা জিরো মুক্তি পাবে এ বছর ডিসেম্বরে।
অনেকে মনে করছেন এ ছবিতে শাহরুখ আবার তার দর্শকদের চমকে দেবেন। অনেকে কৌতূহল নিয়ে জিরোর জন্য অপেক্ষা করছেন। সবাই দেখতে আগ্রহী শাহরুখ নতুন করে কী উপহার দেন!
শাহরুখের শেষ কয়েকটি ছবির কোনোটাই বক্স অফিসে ভালো করতে পারেনি। রইসে শাহরুখের উপস্থিতি আকর্ষণীয় হলেও ছবিটি তেমন ব্যবসা করতে পারেনি। দিলওয়ালে, ডিয়ার জিন্দেগি, জাব হ্যারি মেট সেজাল অর্থাৎ ২০১৭ সালে শাহরুখের কোনো সিনেমাই ভালো আয় করতে পারেনি। জাব হ্যারি মেট সেজাল দর্শকদের নিদারুণ সমালোচনার শেলে বিদ্ধ হয়েছে। সিনেমার প্রথম শো শেষ হওয়ার আগেই হল থেকে দর্শকরা নেতিবাচক মন্তব্য লিখে টুইট করেছেন। প্রথম দিনই সিনেমার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল।
শাহরুখ, আনুশকা শর্মা এবং ইমতিয়াজ আলীর একসঙ্গে কাজ করাও ছবিটিকে সফল করতে পারেনি। জাব হ্যারি মেট সেজাল মোট আয় করেছিল দেড়শ কোটি রুপি, যার মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে আয় ছিল মাত্র ৮৯ কোটি রুপি।
প্রশ্ন উঠেছে শাহরুখের ব্লকবাস্টার উপহার দেয়ার ক্ষমতা নিয়ে। শাহরুখ কি খানদের যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন? কারণ সালমান এবং আমির খান একের পর এক ব্লকবাস্টার উপহার দিয়ে চলেছেন।
জিরোর ট্রেলারে দেখা গেছে সেখানে শাহরুখ এক বামনের ভূমিকায়। আনন্দ এল রাইয়ের জিরোতে বামন শাহরুখকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি ‘হিরো’ পরিচয়টি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন। নিশ্চয়ই শাহরুখ ঝুঁকি নিতে যাচ্ছেন। তার এই ঝুঁকি কোন পরিণতি বয়ে আনবে, সেটা হয়তো সময়ই বলে দেবে। প্রশ্ন উঠছে, শাহরুখ কেন এই ঝুঁকি নিতে যাচ্ছেন? শাহরুখ নিজেই বহুবার স্বীকার করেছেন, তিনি হচ্ছেন এমন এক তারকা যিনি নিজের তারকাখ্যাতির তলে চাপা পড়েছেন। হিরো ইমেজ ভেঙে তারকাদের বেরিয়ে আসাকে অনেক সময়ই ইতিবাচক হিসেবে ধরা হয়। জিরোতে শাহরুখের এই উদ্যোগ ভালো ফল আনবে বলেই অনেকে আশা করছেন।
শুধু শারীরিক আকৃতি পরিবর্তনই নয়, শাহরুখ জানিয়েছেন জিরোতে তার চরিত্রটি এক ছ্যাঁচড় প্রকৃতির মানুষের। অর্থাৎ, শাহরুখ তার আগের যেকোনো চরিত্র থেকে এবার কিছুটা ভিন্নভাবে হাজির হতে যাচ্ছেন। সমালোচকরা বলেছেন, এটা নিশ্চিত যে শাহরুখ তার স্টারডম ভাঙতে চাচ্ছেন। দর্শকরাই শাহরুখকে এই বিপুল তারকাখ্যাতি দিয়েছে। কিন্তু এই পর্বে এসে শাহরুখকে বলতে হচ্ছে, ‘দুই কোটি মানুষের পছন্দ মাথায় রেখে আপনি কাজ করতে পারবেন না।
মানুষের পছন্দ-অপছন্দকে যদি বেশি গুরুত্ব দিতে যান তাহলে আপনি বেশি কিছু করতে পারবেন না।’ আর নিজের জীবন নিয়ে শাহরুখের কথা খুব স্পষ্ট, ‘আমি পেছনে ফিরে তাকাই না। আমি কোনো অবস্থাতেই অতীতে বাস করি না, এক মুহূর্তের জন্যও না। ভুল করলে করেছি, ভালো করলে করেছি। আমার জীবন এত গতিতে চলে যে ফেলে আসা সময়ের জন্য ভাবনাচিন্তা করাটা সম্ভব নয়।’ নিজের স্টারডম নিয়ে শাহরুখের চিন্তাও কৌতূহলোদ্দীপক, ‘আমি যদি আমার স্টারডম বুঝতে পারি তাহলে আমি সেটা সারা জীবন ধরে রাখতে চাইব, এমনকি আমার সন্তানদেরও দিয়ে যাব। কিন্তু আমি জানি না এটা কীভাবে ধরে রাখতে হবে।’
জিরোতে বিশেষ কিছু আছে? অতীতে শাহরুখ অনেক জায়গাতেই বলেছেন যে নতুন নির্মাতারা তার কাছে যেসব চরিত্র নিয়ে আসেন সেগুলো সবই ‘শাহরুখ খান’ নামটি মাথায় রেখে লেখা হয়। কখনই চরিত্রটির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয় না। এখানে আনন্দ এল রাই পুরনো পথেই হেঁটেছেন। জিরোর জন্য শাহরুখ পরিশ্রম করছেন। এখানে তিনি অভিনেতা হয়ে উঠতে চাইছেন। কিন্তু সেই পুরনো ছকে কতটা তিনি সফল হবেন, সেটা নিয়ে পর্যবেক্ষকরা সন্দিহান। অনেকে বলেন, শাহরুখ হচ্ছেন বলিউডের টম ক্রুজ।
দেখতে বেশি সুন্দর এবং অনেক বড় তারকা— এ দুইয়ের চাপে অভিনেতা শাহরুখ যেন আর জায়গা করে উঠতে পারছেন না। তবে দু বছর আগে যেটা শাহরুখের জন্য চিন্তা করাই সম্ভব ছিল না, সে রকম কিছু এখন তিনি করতে যাচ্ছেন জিরোতে। তাই এই গণ্ডি ভাঙাকে সমালোচকরা প্রশংসা করছেন। বাকিটা দেখা যাবে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পরই। তবে নিকট অতীতে ব্লকবাস্টার উপহার দিতে না পারলেও তিনি ‘শাহরুখ খান’ এবং কোটি দর্শকের মনে তিনি অমলিন।
সূত্র : স্টারডাস্ট
